জেলখানার কয়েদিরা দীর্ঘদিন ধরে পণ্য তৈরি করলেও তা কারাগারের বিক্রয়কেন্দ্রেই পাওয়া যেত। তবে গত বছর থেকে এসব পণ্য বাণিজ্যমেলায় প্রদর্শন ও বিক্রি শুরু হয়েছে। বাণিজ্যমেলার ভিআইপি গেট দিয়ে ঢুকে বাম পাশে কারাপণ্যের প্যাভিলিয়ন। প্যাভিলিয়নটিতে জেলখানার পণ্য বিক্রি হচ্ছে।
কারা প্যাভিলিয়ন ঘুরলেই দেখা যাবে বন্দিদের হাতে তৈরি বাঁশ, কাঠ, প্লাস্টিক, পুঁতি আর পাটের বহুমুখী পণ্য। নকশিকাঁথার বাহারি ডিজাইন আর শাড়ি, লুঙ্গির পাশাপাশি সুস্বাদু আচারও মিলবে ব্যতিক্রমী এই প্যাভিলিয়নে।
কারাবন্দীদের সৃজনশীলতার প্রশংসা করে দর্শনার্থীরা বলছেন, বেকারদের জন্য এটি শিক্ষণীয়। তবে স্টলটি মেলার একপ্রান্তে হওয়ায় বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকেই।
‘কারাপণ্য’ নামের এ প্যাভিলিয়নে বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্য ক্রেতাদের বেশ নজর কেড়েছে। প্রতিটি মোড়া ৬০০ থেকে ৮৫০ টাকা, সিংহাসন চেয়ার আড়াই হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার, কুলা ও চালনি ১০০ থেকে ৩০০, ফুল ও ফলের ঝুড়ি ১০০ থেকে ২৫০, পানদানি এবং কমলদানি ও ফুড কভার ৩০০ টাকার মধ্যে আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে। আরও আছে ২০০ থেকে ৫০০ টাকার উলেন গেঞ্জি ও টিশার্ট। নকশিকাঁথা আড়াই হাজার থেকে ৪ হাজার, বুটিক ও বাটিকের থ্রিপিস ৫০০ থেকে দেড় হাজার, গামছা ও লুঙ্গি ২০০ থেকে ৫০০ এবং বেডশিট ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হয়। পাটের তৈরি বিভিন্ন ধরনের ব্যাগের দাম ১২০ থেকে ৩৫০ টাকা। হস্তশিল্পের পুঁতি দানার ব্যাগ, পার্স ব্যাগ, নৌকা, ফুল ও ফলদানি, টিসু বক্স, শোপিসসহ নানা পণ্য রয়েছে এ প্যাভিলিয়নে। কয়েদিদের কাঠের তৈরি খাট ২২ হাজার টাকা, আলমারি ও ওয়্যারড্রব ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা ও ড্রেসিং টেবিল ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া আরও বিভিন্ন ধরনের আসবাব সামগ্রী রয়েছে। এর মধ্যে কার্পেট ১১ হাজার ৫০০ টাকায়, তাজমহল ৫ হাজার টাকায়, কমলা টেবিল সেট ১১ হাজার ৫০০, দোলনা ৪ হাজার ৫০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আরও রয়েছে আলনা, আলমারিসহ অসংখ্য আসবাবপত্র।
প্যাভিলিয়নের দায়িত্বে থাকা কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার আবদুস সোবাহান বলেন, কারাগার এখন বন্দিশালা নয়, সংশোধনাগার। কারাগারের কয়েদিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পণ্য উৎপাদনে যুক্ত করা হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য, কয়েদিরা কারাগার থেকে মুক্ত হলেও যেন কাজের মধ্যে যুক্ত থাকতে পারে। ফলে তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। তিনি আরও বলেন, কারাগারে তৈরি পণ্যের প্রচার ও প্রসারের জন্য বাণিজ্যমেলায় প্রদর্শন করা হয়েছে। এক দরে মানসম্মত পণ্য পেয়ে মেলায় আসা ক্রেতারাও আগ্রহের সঙ্গে কিনছেন।
উল্লেখ্য,কারা স্টলে প্রতিদিন গড়ে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয় বলে জানান বিক্রেতারা। যার ৫০ ভাগ পেয়ে থাকেন কয়েদিরা। কারা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৬৮টি কারাগারে ১৩টি শিল্পের পণ্য উৎপাদন হচ্ছে।