Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৫ রবিবার, মে ২০২৪ | ২১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ধানের শীষ ছাড়াই উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে বিএনপি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারী ২০১৯, ১০:০০ PM
আপডেট: ১৭ জানুয়ারী ২০১৯, ১০:০৭ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রণ করবে এমনটা ভেবেই প্রার্থী ঠিক করছে আওয়ামী লীগ। সে হিসেবে এবারের সংসদ নির্বাচনে বঞ্চিত নেতারা অগ্রাধিকার পাবেন। অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়র নেতারা এই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার পক্ষেই মত দিচ্ছেন বলে বিভিন্ন মারফত জানা যাচ্ছে।

দলটির তৃণমূলে আশঙ্কা, নেতাকর্মীরা নতুন করে হামলা-মামলায় পড়বে; পাশাপাশি ফের সংসদ নির্বাচনের দাবিও দুর্বল হয়ে যাবে। সেজন্য একাদশ নির্বাচনের পর আসন্ন উপজেলা নির্বাচন ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপ-নির্বাচনে নিজেদের অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।

দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত উঠে এসেছে। বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও অংশ নেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, শিগগিরই বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচনে অংশ নেওয়া, না নেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করবে বিএনপির হাইকমান্ড।

দলটির হাইকমান্ড মনে করছে, ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনব্যবস্থা সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে এ ধরনের ‘অর্থহীন’ নির্বাচনে অংশ নেওয়া মানে নেতাকর্মীদের বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া। দলটির তৃণমূলও ‘একচেটিয়া’ ফলাফলের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিপক্ষে।

দলটির দায়িত্বশীল নেতাদের ভাষ্য, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে যেকোনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আপাতত ভাবছে না দলটি। ফলে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপ-নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। কেউ প্রার্থী হতে চাইলে সেটা তার ব্যক্তিগত এবং যদি তিনি বিএনপির লোক হয়ে থাকেন তাকে দল থেকে পদত্যাগ করতে হবে। কারণ দলের কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করার পূর্বে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং জাতীয় সংসদের পুনর্নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি প্রণয়ন, ভবিষ্যতে ভোটাভুটির মাধ্যমে সাংগঠনিক কমিটি গঠন, আগামী মার্চে মেয়াদ শেষে দলের সপ্তম জাতীয় সম্মেলন আয়োজন এবং নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের লাভ-ক্ষতির মূল্যায়নসহ বিভিন্ন বিষয়টিকেই এই মুহূর্তে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপির নেতারা।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রিয়.কমকে বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে প্রায় সবাই একমত হয়েছেন। তারা মনে করছেন, সব নির্বাচনের ফলাফলই পূর্বনির্ধারিত এবং ইসির ভূমিকাও একই থাকবে। তাই শুধু শুধু নির্বাচনে গিয়ে এই সরকার ও ইসিকে বৈধতা দেওয়ার কোনো অর্থ হয় না।’

এদিকে আদালতের নির্দেশে উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপ-নির্বাচনের বাধা কাটলেও বিএনপি এতে সন্তুষ্ট নয়। বরং কেন এ নির্বাচন স্থগিত হলো; কেনই-বা আবার নির্বাচনের বাধা কাটল সেটাই বড় প্রশ্ন মনে করছে দলটি। এ ছাড়াও উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়াদ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আর ৮ মাস পরে নতুন নির্বাচন দিতে হবে। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর প্রায় ১৪ মাস আগে আনিসুল হকের মৃত্যুর কারণে যখন মেয়রপদ শূন্য হলো তখন নির্বাচন হলো না কেন? এখন ৮ মাস আগে নির্বাচন দেওয়ার কেন প্রয়োজন পড়ল। মেয়াদপূর্তির পর নতুন নির্বাচনই করা যেত বলে মনে করছেন দলটির একাধিক নেতারা।

সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, উত্তর সিটি করপোরেশনে গতবারের মেয়র নির্বাচন কেমন হয়েছিল, তা তারা ভুলে যাননি। এখনকার বাস্তবতা আরও ভয়াবহ। মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষমতা এখন আর নেই। আগের রাতেই ভোট হওয়ার কথা এখন আর গল্প নয়, সত্যি, জনগণ তা জানে। হয়তো এ নির্বাচনে যে মেয়র নির্বাচিত হবেন, তিনি আগামী পাঁচ বছরই থাকবেন। সরকার চাইলে সেটি খুবই সম্ভব। দুরভিসন্ধি থেকেই তারা মেয়াদপূর্তির আট মাস আগে নির্বাচন দিচ্ছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

এ বিষয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রিয়.কমকে বলেন, ‘এ সরকারের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর দেশ-বিদেশে সবার কাছে সরকারের মুখোশ পরিষ্কার হয়ে গেছে। মানুষ সত্যতার প্রমাণ পেয়ে গেছে। তাই আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার কোনো কারণ দেখছি না।’

বিএনপি নেতারা জানান, পাঁচ বছর আগে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বিএনপি জোট। তখন তাদের প্রত্যাশার কাছাকাছি প্রাপ্তিও ছিল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের ফলে যে হতাশা জমেছিল ওই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তা কেটে যায়। নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রস্তুতিও নেয় তারা। কিন্তু বিজয়ী বেশির ভাগ প্রতিনিধিই নিজ চেয়ারে বসতে পারেননি। উল্টো মামলা-জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফলের পর ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশ্য তো পরিষ্কার। উপজেলা নির্বাচন ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কী হবে, সেটা তো বোঝাই যায়। তাহলে সে নির্বাচনে অংশ নিলেই কী আর না নিলেই কী।’

Bootstrap Image Preview