নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় গণধর্ষণের শিকার সেই নারী বাড়ি ফিরেছেন। দীর্ঘ ১৭ দিন তিনি নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে ওই নারীকে হাসপাতাল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সৈয়দ মহি উদ্দিন আবদুল আজিম।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গণধর্ষণের শিকার ওই নারী গত ৩১ ডিসেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হন। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন ছিল। শুরুর দিকে শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরক্ষার মাধ্যমে গণধর্ষণের আলামতও পাওয়া যায়। পরবর্তীতে দীর্ঘ দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় বিভিন্ন মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, বর্তমানে তিনি আগের চেয়ে শারীরিকভাবে অনেকটা সুস্থ রয়েছেন। স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া ও নিজে নিজে চলাফেরা করতে পারছেন।
সবশেষ মেডিকেল বোর্ড গঠন করার পর ওই নারীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ছুটি দেওয়া হয়। তবে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি অর্থোপেডিক বিভাগে আবার তার পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা হবে। এ ছাড়া যেকোনো সমস্যা হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করারও আশ্বাস দেন।
নির্যাতনের শিকার ওই নারীর পরিবারের সদস্যরা জানান, সবার সার্বিক সহযোগিতায় ওই নারী অনেকটা সুস্থ হলেও বাড়ি যাওয়ার পর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে চরজব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহেদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার কোনো কারণ নেই। পুলিশ সব সময় ওই পরিবারের পাশে থাকবে।
প্রসঙ্গত, ৩০ ডিসেম্বর সকালে ওই গৃহবধূ ভোট দিতে গেলে নৌকার কয়েকজন সমর্থক তাকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে বলে। তিনি তখন ধানের শীষে ভোট দেয়ার কথা বললে তাদের সঙ্গে তর্কাতর্কি হয়। এ সময় তারা তাকে ‘তোর কপালে শনি আছে’ বলে হুমকি দেয়। পরে কেন্দ্র থেকে দ্রুত বের হয়ে বাড়ি ফিরে যান গৃহবধূ।
এরপর ওইদিন রাত ১২টার দিকে একই এলাকার ১০-১২ জন তাদের বাড়িতে এসে প্রথমে বসতঘর ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে তারা ঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পিটিয়ে আহত করে। পরে স্বামী ও স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে (১২) বেঁধে রেখে টেনে-হিঁচড়ে ঘরের বাইরে নিয়ে গৃহবধূকে গণধর্ষণ করে তারা।
এক পর্যায়ে তারা তাকে গলা কেটে হত্যার করতে উদ্যত হয়। এ সময় প্রাণভিক্ষা চাইলে তারা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় বাড়ির উঠানসংলগ্ন পুকুর ঘাটে ফেলে চলে যায়।