Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৭ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পোল্যান্ডে এমডব্লিউইআরের কার্যক্রম বিস্তারের প্রত্যাশা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৫ জানুয়ারী ২০১৯, ০৯:২০ PM
আপডেট: ১৫ জানুয়ারী ২০১৯, ০৯:৫৫ PM

bdmorning Image Preview
ছবি: রায়হান শোভন


বিশ্বব্যাপী শান্তি, শৃঙ্খলা ও নৈতিকতা তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষা ও গবেষণাধর্মী সংগঠন 'মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটস' এমডব্লিউইআর'র কার্যক্রম পোল্যান্ডে বিস্তারের প্রত্যাশায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে বাংলাদেশে সফরত পোল্যান্ডের নাগরিক এনটিনিও জি ও সংগঠনটির আহ্বায়ক ফারুক আহমাদ আরিফ ও সদস্য মারুফ আহমেদ এবং নুসরাত জেরিন নিশুর মধ্যে বিকাল থেকে সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকের শুরুতে এনটিনিও জি ২০১৫ সালে বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীদের যাবতীয় ব্যয়ভারের ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রতিবাদে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন "নো ভ্যাট অন এডুকেশন" এর সফলতা সম্পর্কে জানতে চান।

নো ভ্যাট অন এডুকেশনের মুখপাত্র ফারুক আহমাদ আরিফ বলেন, ২০১৫ সালের ৪ জুন প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীদের যাবতীয় ব্যয়ভারের ওপর প্রথমে ১০ শতাংশ ও সর্বশেষ সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করেন।

উচ্চশিক্ষাখাতে ভ্যাট আরোপের প্রতিবাদে নো ভ্যাট অন এডুকেশন নিয়মত্রান্তিক আন্দোলন করেছে। আন্দোলনটি বিশ্বব্যাপী প্রশংসা কুড়িয়েছে। কেননা ইতিপূর্বে আন্দোলন মানেই হাঙ্গামা, ভাঙচুর, সংঘাত, পারস্পারিক আঘাত ইত্যাদিই মানুষ জানতো। কিন্তু এই আন্দোলনটি ছিল সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। বিশ্বের ৭২টি গণমাধ্যমে এই আন্দোলনের সংবাদ প্রচার ও প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্বজনমত তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করেছে সর্বস্তরের মানুষ। অবশেষে সেই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর সরকার উচ্চশিক্ষায় ভ্যাট প্রত্যাহার করে সুন্দর একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ জন্যে ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে সরকার প্রধানসহ মন্ত্রিপরিষদকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে আন্দোলনের পর শ্রীলঙ্কা ও গ্রিসের সরকার শিক্ষায় ভ্যাট আরোপ করেছিল সেখানেও নো ভ্যাট অন এডুকেশন নামে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে ভ্যাট প্রত্যাহার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনকেও ভ্যাট প্রত্যাহারে সহযোগিতা করতে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছিল।

মারুফ আহমেদ বলেন, নো ভ্যাট অন এডুকেশন একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। বিশ্ববাসী এই আন্দোলনের মাধ্যমে নতুন একটি ধারণা পেয়েছে যে, শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন পরিচালনা করা যায়। আন্দোলনে জনগণের কোন ক্ষয়-ক্ষতি হয় না এবং দাবি আদায় করা সম্ভব হয়। এটি বাংলাদেশই দেখিয়েছে। কেননা ১৯৭১ সালে আমরা পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা বিশ্বে নজির সৃষ্টি করতে সক্ষম।

তিনি বলেন, আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই তারা ভ্যাট প্রত্যাহার করে ভালো একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেরাও প্রশংসিত হয়েছে। কারণ শিক্ষা হচ্ছে মৌলিক অধিকার এখানে ভ্যাট হতে পারে না।

বৈঠকে আরিফ বলেন, ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর আমরা 'মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটস' নামে বিশ্বব্যাপী শিক্ষা অধিকার বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছি। আমাদের প্রধান দাবি হচ্ছে জাতিসংঘের মাধ্যমে বিশ্বের সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ শতাংশ সিলেবাস এক হতে হবে। এতে করে পারস্পারিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে মানুষে মানুষে সম্প্রীতি সৃষ্টি হবে। যুদ্ধবিগ্রহ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা বন্ধ হবে। পারস্পারিক জ্ঞানের আদান-প্রদান করা সম্ভব হবে। বিশ্ববাজারে চাকরির ক্ষেত্রে সুযোগ সৃষ্টি হবে।

এ সময় তিনি পোল্যান্ডে 'মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটস' এর কার্যক্রম পরিচালনা ও বিস্তৃত করতে এনটিনিও জি ও তার দেশের মানুষদের সহযোগিতা কামনা করেন।

আরিফ বলেন, মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটসের কার্যক্রম সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। ইতিমধ্যে আমরা জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা পূর্ণ বেশ কিছু কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছি। গত ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী ইশতেহার পর্যালোচনা করে একটি পর্যবেক্ষণও দেওয়া হয়েছে। তার আগে ১৪ নভেম্বর একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে ৮টি দাবি জানানো হয়েছিল বিভিন্ন রাজনৈতিকগুলোর কাছে তারা যেন ইশতেহারে বিষয়গুলো স্থান দেয়। সেখানে ৭টি বিষয়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫টি ও ঐক্যফ্রন্ট ২টি বিষয়ে ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ জন্য তাদের সাধুবাদও জানানো হয়েছে।

তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আমরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছি। যা বিশ্ববাসীর জন্য ভালো ফলাফল বয়ে আনছে।

মারুফ আহমেদ বলেন, ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, নাইজেরিয়া, কাতার, সৌদি আরবসহ বিশ্বের ১১টি দেশে মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটস কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

এ সময় এনটিনিও জি সংগঠনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন।

তিনি বলেন, এটি ভালো উদ্যোগ। সবাই মিলে কাজ করলে বিশ্বে ভালো কিছু করা সম্ভব।

এনটিনিও জি বলেন, আমি ইতিপূর্বে এ এস এম সুজাউদ্দীনের কাছে নো ভ্যাট অন এডুকেশন বিষয়ে অনেক কথা শুনেছি, এমডব্লিউইআর সম্পর্কে জেনেছি। এখন আপনাদের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানতে পারলাম।

তিনি বলেন, আমাদের দেশেও শিক্ষার্থীরা ও সাধারণ মানুষ বিভিন্ন অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে থাকে। সেখানে সরকার কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করে না।

উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটসের সদস্য এ এসএম সুজাউদ্দীন বাংলাদেশে সফরত পোল্যান্ডের নাগরিক এনটিনিও জিকে নো ভ্যাট অন এডুকেশন ও এমডব্লিউইআর'র কার্যক্রম সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
এ সময় অন্যান্য বিষয়ে কথা বলেন, নুসরাত জেরিন নিশু।

Bootstrap Image Preview