নোয়াখালী সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নে তরুণী পারভিন আক্তারকে তাঁর স্বামী শেখ সেলিম হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মারা যাওয়ার আগে মুঠোফোনে কথোপকথনের কল লিস্টের সূত্র ধরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে গ্রেফতার হয়া পারভিন আক্তারের স্বামী শেখ সেলিম (২৯) জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
শুক্রবার দিবাগত রাতে চট্টগ্রামের চাটগাঁও থানা এলাকার মৌলভী পুকুরপাড় এলাকার একটি টিনের ঘর থেকে সেলিমকে গ্রেফতার করেন পিবিআইয়ের একদল সদস্য। পরে গতকাল শনিবার দুপুরে নোয়াখালী শহরের মাইজদী হাউজিং এস্টেটের পিবিআইয়ের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে গণমাধ্যমকে বিষয়টি জানানো হয়।
ব্রিফিংয়ে পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, চট্টগ্রামে একটি গার্মেন্টসে চাকরির সুবাদে তাদের পরিচয় ও সম্পর্ক হয়। নিজের প্রথম স্ত্রী ও এক বছরের সন্তান থাকার পরও গত রমজানের তিন দিন আগে পারভিনকে বিয়ে করেন শেখ সেলিম। বিয়ের পর ঢাকায় তাঁরা দুই মাস একসঙ্গে থাকেন। এ সময় সেলিমের প্রথম বিয়ের ব্যাপারে জানতেন না পারভিন আক্তার।
পুলিশ সুপার জানান, শেখ সেলিম জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, ঢাকায় দুই মাস একসঙ্গে থাকার পর প্রথম স্ত্রী ঘটনাটি জেনে গেলে তাঁর সঙ্গে সমঝোতা করে পারভিনকে নিয়ে চট্টগ্রামে একই বাসায় এক মাস থাকেন সেলিম। এরপর পারভিনের পরিবার বিয়ের বিষয়টি জেনে গেলে তাঁরা তাঁকে চট্টগ্রাম থেকে তিন মাস আগে গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে নিয়ে যান। এরপর তিনি (শেখ সেলিম) একাধিকবার গ্রামে এসে পারভিনের সঙ্গে দেখা করেছেন।
সেলিমের দাবি, গ্রামে আসার পর পরিবার তাঁকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করায় পারভিনের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি তাঁকে (পারভিন) হত্যার পরিকল্পনা করেন।
বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, গ্রেফতার হওয়া সেলিম জানিয়েছেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি গত বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম থেকে বাসযোগে নোয়াখালীর সোনাপুর এসে নামেন। সেখান থেকে একটি ছোরা কিনে সন্ধ্যায় পারভিনদের বাড়ি যান। এরপর মুঠোফোনে পারভিনকে ঘর থেকে ডেকে বাইরে বাগানে নিয়ে তাঁর সঙ্গে যেতে বলেন। কিন্তু পারভিন যেতে রাজি না হওয়ায় তিনি তাঁকে পেছন থেকে চুল টেনে ধরে গলায় ছুরি চালান। এরপর ক্ষোভ মেটাতে তিনি পারভিনের শরীর ক্ষতবিক্ষত করে গায়ের জামা পরিবর্তন করে খেতের আইল দিয়ে সোনাপুর হয়ে রাতেই চট্টগ্রাম ফিরে যান।
গ্রেফতার সেলিম নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ডিগ্রিরচর গ্রামের মৃত শুক্কুর আলী শেখের ছেলে। তিনি চট্টগ্রামের একটি পোশাক কারখানায় অপারেটর পদে চাকরি করতেন। পারভিনকে হত্যার ঘটনায় তিনি একাই জড়িত বলে দাবি করলেও এ ঘটনায় অন্য কেউ সম্পৃক্ত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পিবিআই।
এদিকে গতকাল দুপুরে ব্রিফিংয়ের পর একই কার্যালয়ের নিচতলায় বসে থাকা নিহত পারভিনের বাবা জহুরুল হক ও মা অজিফা খাতুনকে মেয়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁরা বলেন, তাঁরা মেয়ের বিয়ের বিষয়টি জানতেন না। মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য চাকরি থেকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে এসেছেন। মেয়ের খুনির সর্বোচ্চ সাজা চান তাঁরা।