Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৫ রবিবার, মে ২০২৪ | ২২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মহাদেবপুরে ইয়াবার বিষাক্ত ছোবলে ধ্বংসের দিকে যুব সমাজ

ইউসুফ আলী সুমন, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১২ জানুয়ারী ২০১৯, ০৩:১৬ PM
আপডেট: ১২ জানুয়ারী ২০১৯, ০৩:১৬ PM

bdmorning Image Preview


বর্তমানে যুব সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া একটি অন্যতম পরিচিত নাম 'ইয়াবা'। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এর লেনদেন হয় ‘বাবা’ নামে। ইয়াবার বিষাক্ত ছোবলে নীল হয়ে আসছে যুব সমাজ। নওগাঁর মহাদেবপুরে এক শ্রেণির মাদক ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার লোভে যুব সমাজকে  ঠেলে দিচ্ছে ধ্বংসের দিকে। অন্যান্য মাদকের চাইতে ইয়াবা বহন সহজ হওয়ায় ধর-পাকড়ের ঝুঁকি কম। ফলে ইয়াবা ব্যবসায় ঝুকে পড়ছে অনেকেই।

সর্বনাশা ইয়াবার বিষবাষ্পে যুব সমাজ শুধু মেধাশূন্য হচ্ছে তা নয়, মাদকাসক্তদের মনুষ্যত্ব, বিবেক ও বুদ্ধি লোপ পাচ্ছে। তারই প্রতিফলন তাদের আচরণে উচ্ছৃঙ্খলতা, অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন, অভিভাবকদের অবাধ্যতা সর্বোপরি অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে তারা। নেশার টাকা যোগাতে সর্বশান্ত করছে পরিবারকে। বাড়ছে পারিবারিক দ্বন্দ ও অশান্তি। অল্প দিনেই অবৈধ পথে আসা মাদক ‘ইয়াবা’ যুব সমাজের মন কেড়েছে। নেশায় আসক্ত যুবকরা জন্মদাতা পিতাকে বাবা বলতে ইতঃস্তত বোধ করলেও ইয়াবা ট্যাবলেটকে আদর করে ‘বাবা’ বলেই ডাকে।

জানা গেছে, প্রতিটি ইয়াবা ট্যাবলেটের দাম ১৫০-৫০০ টাকা। ওই টাকা যোগাতে অনেক সময় মাদকাসক্ত সন্তানের হাতে পরিবারের অনেকেই লাঞ্চিত হচ্ছেন। আবার অনেকেই নিজ পরিবারের শখের জিনিস বিক্রি করে নেশার টাকা যোগাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন।

মাদকাসক্ত পুত্রের অত্যাচারে অশান্তিতে থাকা পরিবারের লোকজন নিরুপায় হয়ে আদরের সন্তানকে পুলিশ দিয়ে আটক করে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে রেখে দিচ্ছে। এমন ঘটনা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অহরহ ঘটে চলছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাময়িক আনন্দ আর উত্তেজনার জন্য ইয়াবা সেবন করছে তরুণ-তরুণীরা। সাময়িক হলেও ভুলিয়ে দেয় জীবনের সব যন্ত্রণা, আসক্তরা বাস করতে থাকে স্বপ্নের জগতে। দীর্ঘদিন আসক্তির ফলে শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়তে থাকে, মেজাজ হয় খিটখিটে, বাড়ে নাড়ির গতি, রক্তচাপ, হেপাটাইটিস বি, সি ও এইডসের মতো জীবাণু দ্বারা সংক্রামিত হয়ে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমের ব্যত্যয় ঘটিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ইয়াবা সেবনকারীদের এক ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্ভরশীলতা তৈরি করে। প্রথমে কম ডোজে এ ট্যাবলেট কাজ করলেও ধীরে ধীরে ডোজ বাড়াতে হয়। শুরুতে যে পরিমাণ আনন্দ এনে দেয়, পরে তা আর দেয় না। বাড়তে থাকে ট্যাবলেটের পরিমান, ক্ষণস্থায়ী আনন্দের পর বাড়তে থাকে ক্ষতিকর নানা উপসর্গ।

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এতটাই ভয়ঙ্কর যে টানা ৭-১০ দিনও জেগে থাকতে বাধ্য হয় সেবনকারীরা। এক সময় শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়তে থাকে। গলা-মুখ শুকিয়ে আসতে থাকে অনবরত। প্রচন্ড ঘাম আর গরমের অসহ্য অনুভূতি বাড়তে থাকে। দীর্ঘদিনের আসক্ত ব্যক্তিরা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন। ইয়াবা সেবনের কারণে মস্তিষ্কের ভেতরকার ছোট রক্তনালিগুলো ক্ষয় হতে থাকে, এগুলো ছিঁড়ে অনেকের রক্তক্ষরণ হয়। স্মৃতিশক্তি কমে যায় ও মানসিক নানা রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। সব ক্ষেত্রে ব্যর্থতা বা পিছিয়ে পড়তে থাকায় আসক্ত ব্যক্তিরা বিষন্নতায় আক্রান্ত হয়। কারও মধ্যে আত্মহত্যার প্রবনতা দেখা দেয়। একসময় সিজোফ্রেনিয়ার মতো জটিল মানসিক ব্যাধিও দেখা দেয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইয়াবা আসক্তরা জানান, শুরুতে আনন্দের সাথে বন্ধু বান্ধবের পাল্লায় পড়ে নেশা শুরু হয়। প্রথমে মন ও শরীর দুটোই ভালো থাকে। রাতে ঘুম বলে কি জিনিস তা তারা বুঝতে পারেনা। সারা রাত জেগে থাকতে কোন ক্লান্তি হয় না। ২-৩ সপ্তাহ একাধারে সেবনের পর একটি ট্যাবলেট খেয়ে আর ভাল লাগেনা তখন দিনে দুটি খেতে হয়। ৩-৬ মাস নেশার বয়স হলে দিনে ৫-৬টি ট্যাবলেট লাগে।

আসক্তরা আরো জানান, ওই ট্যাবলেট প্রতিদিন কিনে খেতে না পারলে কিছুই ভাল লাগেনা, শরীরে ব্যাথা অনুভব হয়। মনে হয় দুনিয়াটা অন্ধকার। খেলেই মনে অনেক শান্তি, কমে যায় সব ক্লান্তি

Bootstrap Image Preview