Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৩ সোমবার, মে ২০২৪ | ২৯ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের পথে ঐতিহ্যবাহী শাহী মসজিদ

আজিজুল ইসলাম সজীব, হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ০৯ জানুয়ারী ২০১৯, ০৬:২৭ PM
আপডেট: ০৯ জানুয়ারী ২০১৯, ০৬:২৭ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


বহুবছর ধরে ঐতিহ্যের ধারক হয়ে আছে হবিগঞ্জের উচাইল শংকরপাশা শাহী মসজিদ। অপরূপ সৌন্দর্য্যরে পুরাকীর্তিতে সাজানো রয়েছে এ মসজিদটি। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এটির কোনো সংস্কার হচ্ছে না। এ মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আয়ত্তে থাকায় এতে কোনো কাজ করতে পারছেন না স্থানীয়রাও। ফলে দিন দিন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে প্রায় ৬০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটি।

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রাজিউড়া ইউনিয়নের উচাইল গ্রামের একটি টিলার ওপর প্রতিষ্ঠিত উচাইল শংকরপাশা শাহী মসজিদ। দূর থেকে দেখলেই যে কারও দৃষ্টি কাড়ে লাল টকটকে এ মসজিদটি। এর চারপাশ ঘিরে রয়েছে কবরস্থান। মসজিদের দক্ষিণে রয়েছে হযরত শাহ জালাল (রহঃ) এর সফর সঙ্গী হযরত শাহ মজলিস আমিন (রহঃ) এর মাজার।

প্রায় প্রতিদিনই এখানে মাজার জিয়ারত করতে যান দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। প্রাচীন আমলের বিভিন্ন কারুকাজে সাজানো রয়েছে এর ভেতর ও বাইরের অংশ। মাঝে মাঝেই আরবি হরফের লেখা রয়েছে, যা বর্তমান সময়ে বিরল। সংস্কারের অভাবে এসব লেখার অনেক কিছুই এখন অস্পষ্ট হয়ে গেছে। আগাছা জন্মেছে মসজিদের বাইরের দেয়ালে। দীর্ঘদিন ধরেই এটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বা সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।

মসজিদটি একচালা ভবন। ভবনটি দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ একই মাপের, যা ২১ ফুট ৬ ইঞ্চি। এর সম্মুখের বারান্দাটির প্রস্থ তিন ফুটের সামান্য বেশি। এতে চারটি গম্বুজ রয়েছে। মূল ভবনের ওপর একটি বিশাল গম্বুজ ও বারান্দার ওপর রয়েছে তিনটি ছোট গম্বুজ। মসজিদে মোট ১৫টি দরজা ও জানালা রয়েছে। যা পরস্পর সমান আকৃতির প্রায়। পূর্ব-উত্তর-দক্ষিণ এই তিন দিকের দেয়ালের পুরুত্ব প্রায় পাঁচ ফুট এবং পশ্চিমেরটি প্রায় দশ ফুট। এতে মোট ছয়টি কারুকার্যের স্থম্ব আছে প্রধান কক্ষের চারকোণে ও বারান্দার দুই কোণে। উপরের ছাদ আর প্রধান প্রাচীরের কার্নিশ বাঁকানোভাবে নির্মিত। মসজিদের দক্ষিণ পার্শ্বে একটি বড় দিঘি রয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে কত বছর পূর্বে এ মসজিদটি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল তার সঠিক কোনো তথ্য কেউই জানেন না। তবে মসজিদের খাদিমের দাবি প্রায় ৫ থেকে ৬০০ বছর পূর্বে এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আলাউদ্দিন হোসেন শাহ। ধারণা করা হয়ে থাকে ১৪৯১ থেকে ১৫১৯ সালের মধ্যে এর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আবার অনেকে এটিকে ‘গায়েবি মসজিদ’ও বলে থাকেন।

মসজিদ ও মাজারকে কেন্দ্র করে ধর্মপ্রাণ মানুষের নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে সেখানে। মসজিদটির পাশ্ববর্তী কয়েক জেলার মানুষের জন্য পর্যটনকেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত এটি। বিভিন্ন ছুটিতে স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে বেড়াতে আসে।

জানা গেছে, এরশাদ সরকারের আমলে এটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে নেওয়া হয়। তখন সামান্য সংস্কার হলেও এরপর থেকে এর আর কোনো সংস্কার হয়নি। প্রাচীন আমলের ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটি সংস্কারের দাবি জানান স্থানীয়রা। তারা মনে করেন, সামান্য সদিচ্ছা থাকলেই বহুবছরের পুরোনো এ মসজিদটি ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল আজিজ বলেন, এটি একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। এ মসজিদটি দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রচুর দর্শনার্থীরা আসেন। কিন্তু বর্তমানের এটির অবস্থা খুবই নাজুক। দ্রুত এটি সংস্কারের প্রয়োজন।

প্রায় ৪০ বছর ধরে এ মসজিদে ইমামতি করছেন মো. ফজলুল হক। তিনি বলেন, এটির বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কিন্তু এটিকে সংস্কার করা হচ্ছে না। দ্রুত এটি সংস্কার করা পয়োজন। কিন্তু প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে থাকায় স্থানীয়দের পক্ষে সংস্কার করা সম্ভব নয়।

মসজিদের খাদিম হিরাজ আলী শাহ বলেন, মসজিদটি দেশে বিদেশে পরিচিত। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে পর্যটকরা ঘুরতে আসেন। মসজিদের কারুকাজ দেখে অনেকেই মুগ্ধ হন। কিন্তু স্থানে স্থানে মসজিদের দেয়াল খসে পড়ছে। মসজিদের দেয়ালে আরবি হরফে লেখাও এখন অস্পষ্ট।

তিনি আরও বলেন, আমাদের ইচ্ছে থাকলেও এটি সংস্কারের হাত লাগাতে পারছি না। অন্যদিকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগও এটি সংস্কারে উদ্যোগ নিচ্ছে না।

পুরনো এই মসজিদটি টিকিয়ে রাখার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করতে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে এলাকাবাসী।

Bootstrap Image Preview