Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৭ মঙ্গলবার, মে ২০২৪ | ২৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

লাউয়াছড়ায় রেললাইন ও সড়কপথে মারা পড়ছে অসংখ্য বন্যপ্রাণী

হৃদয় দেবনাথ, মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ০৮ জানুয়ারী ২০১৯, ১০:৪৫ AM
আপডেট: ০৮ জানুয়ারী ২০১৯, ১০:৪৫ AM

bdmorning Image Preview


মৌলভীবাজারে সংরক্ষিত জাতীয় উদ্যান লাউয়াছড়ার মধ্যদিয়ে বয়ে চলা রেললাইন এবং সড়কপথে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা পড়ছে অসংখ্য নিরীহ বন্যপ্রাণী।

বুধবার (২ জানুয়ারি) সকালে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা পড়লো আরেকটি মায়া হরিণ।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২ জানুয়ারি দুপুরে লাউয়াছড়ার ভেতরের রেললাইনের পাশ থেকে একটি মৃত মায়া হরিণের নিথর দেহ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। আশংকা করা হচ্ছে ভোর রাতে কোন দ্রুতগামী ট্রেনে কাটা পড়ে হরিণটি প্রাণ হারায়।

মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ মোনায়েম হোসেন বিডিমর্নিংকে জানান, বুধবার সকাল ১১টার দিকে রেললাইনের উপর মায়া হরিণটিকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষ করে সেদিন রাতেই হরিণের মৃতদেহটি মাটিচাপা দেয়া হয়।

রেঞ্জ অফিসার আরো জানান, প্রায়ই এখানে বন্যপ্রাণীগুলো চলন্ত ট্রেন ও সড়কপথে গাড়ির চাকার নিচে প্রাণ হারাচ্ছে। তাই লাউয়াছড়ার মূল্যবান জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে লাউয়াছড়ার রেলপথ ও সড়কপথটি অন্যত্র স্থানান্তর করা অত্যন্ত জরুরি।

সম্প্রতি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভুরভুরিয়া চা বাগানের একটি পুকুর থেকে পানি পান করার সময় মায়া হরিনের দুটি পা কাদায় আটকা পড়ে। স্থানীয়রা আটকে পড়া মায়া হরিণটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে। এদিকে লাউয়াছড়ার ভেতর থেকে সড়ক এবং ট্রেন লাইন অপসারণ করে উদ্যানের বাহির দিক দিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন বিভিন্ন সংগঠন।

কিন্তু কার কথা কে শুনে? সাজু খাসিয়া নামে এক ট্যুর গাইড যিনি লাউয়াছড়ার ভেতরেই খাসিয়া পুঞ্জিতে বসবাস করেন। সাজু জানান, একশ্রেণির কুচক্রী মহল গাছ পাচার করে বন খালি করে দিচ্ছে। সেই সাথে রয়েছে কিছু শিকারির উৎপাত ফলে বন্যপ্রাণীরা নিজেদের আবাসস্থলকে অনিরাপদ ভাবছে। লোকালয়ে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়ছে। অনেক মানুষ আবার সচেতনতার অভাবে বিরল অনেক বন্যপ্রাণীকে পিটিয়ে হত্যা করছে।

সাজু আরও জানায়,বন্যপ্রাণী আইন সম্পর্কে সাধারণ মানুষ কিছুই জানেনা। তাই প্রথমে মানুষকে বন্যপ্রাণী আইন সম্পর্কে সচেতন করে তোলা জরুরি।

সৌখিন চিত্রগ্রাহক ও সমাজকর্মী তারিক হাসান বিডিমর্নিংকে বলেন, লাউয়াছড়া উদ্যানের ভিতর ঢুকে পর্যটকরা যে পরিমান চিৎকার চেঁচামেচি করেন তাতে করে এমনিতেই বন্যপ্রাণীরা ভয় পেয়ে যায়।

তিনি আরো বলেন, পর্যটকদের গাড়িতে বিকট শব্দে মাইক বাঝানো বন্ধ করতে হবে, আর বনের গভীরে গিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি যাতে না করতে পারে এ বিষয়টি কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত। মাইকের বিকট আওয়াজ আর চিৎকারে বন্যপ্রাণীরা ভয় পায় তাই দিকবিদিক ছুটে গিয়ে আহত হয় মারাও যায়। সুতরাং এ বিষয়টি কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় রাখা উচিত বলে আমি মনে করি।

বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সিতেশ রঞ্জন দেব বলেন, বনের মধ্যে গাছ পালা দিন দিন উজাড় হয়ে যাওয়ায় লাউয়াছড়া থেকে দিন দিন মায়া হরিণের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। মায়া হরিণ সাধারণত বনের গহিনে থাকে।গাছপালা উজাড় হয়ে যাওয়ায় লাউয়াছড়া বনে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে যার কারণে প্রায়ই রাতের বেলা খাবারের সন্ধ্যানে ঘুরতে ঘুরতে চা বাগান কিংবা লোকালয়ের কাছাকাছি চলে আসে। আর এর প্রধান কারণ হচ্ছে খাদ্য ও বাসস্থানের অভাব।

তিনি আরো বলেন লাউয়াছড়ার ভিতর দিয়ে বয়ে চলা ট্রেন লাইন এবং সড়কে এ পর্যন্ত ট্রেনে কাটা পড়ে এবং গাড়ি চাপায় অসংখ্য মায়া হরিণের মৃত্যু হয়েছে। শুধু মায়া হরিণ নয়, বিলুপ্ত প্রায় বিরল অনেক বন্যপ্রাণী মারা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, এর মধ্যে কিছু অসৎ লোভী শিকারী রয়েছে যারা এসব মায়া হরিণ এবং বুনো শুয়োর শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। বন্যপ্রাণীরা যদি লোকালয়ে চলে আসে তাহলে তাদেরকে আঘাত না করে বন বিভাগ বা বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনকে দ্রুত জানানোর অনুরোধ করেন তিনি। 


 

Bootstrap Image Preview