Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৫ রবিবার, মে ২০২৪ | ২২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও তরুণ নারীদের দেখা মেলা ভার

পারিবারিক সূত্রের বাইরে থেকে আসা নারীর সংখ্যাও নগণ্য

নারী ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:৫৭ PM
আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:৫৭ PM

bdmorning Image Preview


নির্বাচনে সরাসরি অংশ নেওয়া নারীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে ঘুরেফিরে একই নারী বা পরিচিত মুখগুলোই আসছে নির্বাচনে। তরুণ নারীর উপস্থিতি এখনো কম; একেবারে নেই বললেই চলে। পারিবারিক সূত্রের বাইরে থেকে আসা নারীর সংখ্যাও নগণ্য। নির্বাচন ও নারী অধিকার নিয়ে কর্মরত ব্যক্তিরা বলছেন, নির্বাচনে নারীর সংখ্যা বাড়লেও গুণগত পরিবর্তন তেমন একটা হয়নি।

এবার ৬৯টি আসনে ৬৮ জন নারী সংসদ নির্বাচন করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাসহ ২০ জন সরাসরি নৌকা প্রতীকে ভোট করছেন। আর বিএনপি থেকে মাঠে আছেন ১৪ জন। বাকিরা বড় দুই জোটের শরিক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতির কারণে দেশের অন্যান্য সূচকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নির্বাচনে নারী সংখ্যা বৃদ্ধিটা আশানুরূপ নয়। সরাসরি নির্বাচিত সাংসদদের মধ্যে নারীর হার এখনো ১০ শতাংশের নিচে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ সংশোধন করে ২০০৮-এ বিধান করা হয় ২০২০-এর মধ্যে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের প্রতিটি স্তরের কমিটিতে এক-তৃতীয়াংশ নারী সদস্য রাখতে হবে। তবে এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন দলগুলোর জন্য এ বিধান মেনে চলা বাধ্যতামূলক করেনি। মূলত এর প্রতিফলনই দল এবং নির্বাচনে দেখা যাচ্ছে।

প্রতিটি নির্বাচনে প্রধান দলগুলো বাদে কয়েক ডজন রাজনৈতিক দল অংশ নিয়ে থাকে। এবারও মাঠে আছে ৩৯টি নিবন্ধিত দল আর কয়েকটি জোটের ছাতার নিচে আশ্রয় নেওয়া ‘অন্যান্য’ দল। কিন্তু সব দল থেকে নারী প্রার্থী দেওয়ার হার কম।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়া নারীর সংখ্যা বাড়ার প্রবণতা অবশ্যই ইতিবাচক। তারপরও দেশের অন্যান্য সূচকের অগ্রগতির তুলনায় রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে অগ্রগতি ততটা হয়নি।

১৯৭০ সালে তখনকার পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে দুজন নারী দ্বিতীয় অবস্থানে যেতে পেরেছিলেন। ১৯৭৩ সালে জাসদের একজন নারী প্রার্থীও নির্বাচনে দ্বিতীয় অবস্থান পান। তবে প্রথম নারী সাংসদ নির্বাচিত হন তৃতীয় সংসদে ১৯৭৯ সালে। মুসলিম লীগের এই প্রার্থী জিতেছিলেন উপনির্বাচনে। 

যত দূর তথ্য আছে, তাতে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত কোনো নির্বাচনেই নারী প্রার্থীর সংখ্যা ৬৮ ছাড়াতে পারেনি। আর নির্বাচিত নারীর সংখ্যা ২০-এর কোটায় আটকে আছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা প্রতিদ্বন্দ্বী নারীর সংখ্যাও খুব বেশি নয়। গত পাঁচ দশকের নির্বাচনগুলোর মধ্যে বিজেতা ও নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মিলিয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যা ছিল গত নির্বাচনে—৩৩।

৫০ বছরের নির্বাচনের ইতিহাস বলছে, আওয়ামী লীগ সচরাচর অন্য দলের তুলনায় বেশি নারীকে মনোনয়ন দেয়। তবে মনোনয়নপ্রাপ্তদের মধ্যে নতুন ও তরুণ মুখ কম। কারণ জয়ের হিসাবনিকাশ।

কবে কয়েকজন নারী সংসদে এসেছেন উপনির্বাচনের মাধ্যমে। এমন সবচেয়ে বেশি আসে গত নির্বাচনে—পাঁচজন। তাঁদের একজন সুনামগঞ্জের জয়া সেনগুপ্তা সাংসদ হন স্বামী আওয়ামী লীগের প্রবীণ সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তর মৃত্যুর পর। উপনির্বাচনে আসা নারীদের বেশির ভাগই এভাবে স্বামীর মৃত্যু অথবা দলের জনপ্রিয় কারও ছেড়ে দেওয়া আসনে জিতে এসেছেন।

নেতৃত্বে নারী: ১৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘দ্য গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী চারটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের সব দেশের ওপরে স্থান পেয়েছে। এর একটি হলো সরকারপ্রধান হিসেবে কত সময় ধরে একজন নারী রয়েছেন। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তাই নারী সরকারপ্রধানের দিক দিয়ে বিশ্বসেরা হয়েছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া এই চার মূল সূচকের আরেকটি হলো নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন। এবার রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে গতবারের চেয়ে দুই ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ পঞ্চম হয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের উপসূচক সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্বের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ৮০তম এবং নারী মন্ত্রীর সংখ্যার দিক থেকে ১২৬তম।

দেশে সরকার প্রধান ছাড়াও স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেত্রী, সংসদ উপনেতা হিসেবে নারীরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন, মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমীন মুরশিদ বলছেন, কিছু উচ্চপদে নারীরা নেতৃত্বে আছেন, এটি অবশ্যই ইতিবাচক। তবে নেতৃত্বে থাকা নারীরা রাজনীতিতে নারীদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য নীতিমালা প্রণয়ন বা দলের ভেতরে পরিবর্তন আনতে পারেননি বলেই দলগুলোর বিভিন্ন স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারীর উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে না।

স্ত্রী-কন্যাদের আধিপত্য
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর রাজনীতিতে আসেন তাঁর কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদও আছেন রাজনীতিতে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর রাজনীতিতে আসেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

এবারের নির্বাচনে বিএনপির নারী প্রার্থীদের বেশির ভাগই স্ত্রী বা কন্যা হিসেবে রাজনীতিতে এসেছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়বেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কুঁড়ি সিদ্দিকী। তিনি আবদুল কাদের সিদ্দিকীর মেয়ে। তাহমিনা জামান ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের স্ত্রী। শামীম আরা ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা এম এ কাইয়ুমের (আত্মগোপনে আছেন) স্ত্রী। শাহিন আক্তার আওয়ামী লীগের বিতর্কিত সাংসদ আবদুর রহমান বদির স্ত্রী। স্বামী মনোনয়ন না পাওয়ায় স্ত্রীর রাজনীতিতে আবির্ভাব।
১৯৭৬ সাল থেকে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বলেন, ‘দলের প্রয়োজনে স্বামী বা বাবার জায়গায় নারীদের বসানো হচ্ছে। এ নিয়ে আপত্তি নেই। কিন্তু প্রায় সব দলেই এমন নারীর প্রাধান্য থাকায় তৃণমূলে রাজনীতি করা যোগ্য নারীদের সেভাবে মূল্যায়ন হচ্ছে না। পরিবারের মাধ্যমে নারীদের রাজনীতির মাঠ দখল করে থাকাকে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন বলা যাবে না।’

সংরক্ষিত আসন নিয়ে হতাশা

সংসদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে সংরক্ষিত নারী সাংসদেরা নির্বাচিত হন। বিভিন্ন সংশোধনীর মাধ্যমে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা পর্যায়ক্রমে ৭, ১০, ১৫, ৩০, ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০টি করা হয়েছে। চলতি বছরে সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদ সংশোধনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচনের বিধান আরও ২৫ বছর বহাল রাখা হয়। কিন্তু নারী আন্দোলনকারীদের দীর্ঘদিনের দাবি, নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, আসনসংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ বাড়ানো এবং আসনগুলোকে ঢেলে সাজানো।

Bootstrap Image Preview