Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৬ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘যায় বাঁধ করে দেবে, হামা তাক ভোট দিমো’

আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৪:০৯ PM
আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৪:০৯ PM

bdmorning Image Preview


“প্রতি বারে বন্যাত হামার বাড়ি নদীত ভাংগি যায়, যে বার ভাংগি যাইবে না সেই বার বাড়িত পানি উঠি থাকপে ১৫ দিন। এই হলো হামার দশা। যায় হামার তিস্তা নদীত বাঁধ করি দিবে, হামা তাকে ভোট দিমো” এ ভাবেই কথাগুলো বললেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ী চর এলাকার বাসিন্দা ৬৮ বছর বয়সী শরীফ মোল্লা।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তিস্তা চরাঞ্চলের ভোটারদের বেশ কদর বেড়ে গেছে। প্রতিদিন প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে কর্মীরা যাচ্ছে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। দিচ্ছে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতিও। তবে এখানকার ভোটারদের কথা একটাই, যে প্রার্থী তাদের তিস্তা নদীতে বাঁধ ও চলাচলের জন্য রাস্তা তৈরি করে দেবে তাকেই এমপি বানাবেন তারা। দীর্ঘ দিন ধরে ভোট আগে প্রার্থী তিস্তা নদীর বাম তীরে বাধঁ নিমার্ণের প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচনের পর তা ভুলে যায়।

সূত্র মতে,  লালমনিরহাট জেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা, ধরলা ও সানিয়াজানসহ বেশ কয়টি নদী। প্রতি বছর তিস্তা ও ধরলা নদীর ভাঙ্গনে জেলার ৫ উপজেলার হাজার হাজার পরিবার গৃহহারা হয়ে পড়ে। তা ছাড়া বন্যার সময় তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি হওয়ায় জেলার অনেক বসত বাড়িসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও আবাদী জমির ফসল নষ্ট হয়। গত ৫০ বছরে জেলার প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ বসত-বাড়ি হারিয়ে গৃহহীন হয়ে পড়েছে। তাদের অনেকেই বিভিন্ন রাস্তার ধারে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তবে ওই সব গৃহহীন পরিবারের বেশি ভাগ জীবন যাপনের প্রয়োজনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে গেছেন। নদী ভাঙ্গন ও বন্যায় সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় জেলার হাতীবান্ধা উপজেলা। ওই উপজেলার ৬ টি ইউনিয়ন ইতোমধ্যে নদী গর্ভে চলে গেছে। ফলে লালমনিরহাট জেলার নদী ভাঙ্গা মানুষ গুলো দীর্ঘ দিন ধরে হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ থেকে সদর উপজেলার তিস্তা সড়ক সেতু পর্যন্ত তিস্তা নদীর বাম তীরে বাধঁ নিমার্ণের দাবি করে আসছে। 

সরেজমিনে কথা হয় তিস্তা চরাঞ্চলের ৭৫ বয়সী আলিমুদ্দিনের। তিনি বলেন, ‘হামার আরকি বাহে! দিনতো হামার শেষ, কবে মরি যাইমু জানেং না। ভোট আসিল কয়জন বাড়িত আইসে। এ্যালা হামার একটা কথা, যে তিস্তায় বাঁধ ও রাস্তা বানায়ে দেবে তাকেই এবার ভোট দিমো।’ আলিমুদ্দিন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের শৈলমারী তিস্তা চরাঞ্চলের বাসিন্দা।

ওই এলাকার নানু মিয়া, জব্বার আলি ও ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আমাদের জীবন যেন ভাঙা গড়ার খেলার মধ্য দিয়ে চলতে থাকে। বর্ষাকালে নদী ভাঙনের সময় আমাদের মাথা গোজার কোনো জায়গা থাকে না। ভোট আসে, ভোট যায়। কিন্তু প্রতিশ্রুতি শেষ হয় না। তাই এবার যে প্রার্থী তিস্তায় বাঁধ ও রাস্তা করে দেবে তাকেই ভোট দেব।

তিস্তা নদীর বাম তীরে বাঁধ নির্মাণ আন্দোলন গণ-কমিটি’র আহবায়ক রোকুনুজ্জামান সোহেল বলেন, লালমনিরহাট বাসীর প্রাণের দাবী তিস্তা নদীর বাম তীরে বাঁধ নির্মাণ। এ দাবি নিয়ে আমরা দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করছি। লক্ষ্য করছি, প্রার্থীরা তাদের ইশতেহারে এবার তিস্তা নদীর বাম তীরে বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।  

Bootstrap Image Preview