Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৬ সোমবার, মে ২০২৪ | ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

আমরাই আসছি, মানুষ আমাদের চাইছেন: আনন্দবাজারকে শেখ হাসিনা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০১:১৩ PM
আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০১:১৬ PM

bdmorning Image Preview


আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইতোমধ্যে ভোটগ্রহণে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। সেই দিনই নির্ধারিত হবে আগামী পাঁচ বছরের জন্য দেশের শাসন ক্ষমতায় কে আসছেন। তবে নির্বাচনের প্রাক মুহূর্তে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা অনেকটা আত্মবিশ্বাস নিয়েই বলছেন, তার দল আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ ডিসেম্বর) ভারতীয় বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে একথা জানানো হয়।

পাঠকদের জন্য আনন্দবাজারের প্রতিবেদনেটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

নির্বাচন একেবারে দোরগোড়ায়। হাতে রয়েছে মাত্র তিনটে দিন। ভোটের সেই উত্তেজনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন বড় নিশ্চিন্ত! নির্বাচনের প্রাক্‌ মুহূর্তে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানিয়ে দিলেন, তার দল আওয়ামী লীগ ফের জিতছে।

আগামী রবিবার বাংলাদেশে ১১তম সংসদ নির্বাচন। তার আগে বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকার ধানমন্ডির সুধাসদনে হাসিনাকে অন্য মেজাজে পাওয়া গেল। সেই হাসিনার মুখে দেখা গেল তৃপ্তির হাঁসি। বড় নিশ্চিন্ত ভাবে বললেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের উপর আমার বিপুল আস্থা। মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। জনগনের ভোটেই আমরা নির্বাচিত হব।’

এতটা নিশ্চিত কী ভাবে হচ্ছেন? হাসিনার যুক্তি, ২০১৩-র নির্বাচনে প্রায় ছ’শো স্কুল পোড়ানোর কথা বাংলাদেশের মানুষ ভুলে যায়নি। মুছে যায়নি প্রিসাইডিং অফিসার-সহ অজস্র নাগরিককে হত্যার স্মৃতি। রাস্তা কেটে মানুষের যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, সেই সময়ে জনগণই রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। ভোটও দিয়েছিলেন তারা। সেই জনগণ ফের তাকেই ভোট দেবেন বলে বিশ্বাস হাসিনার।

একই সঙ্গে হাসিনা মনে করিয়ে দিলেন, নির্বাচনের পরে বাংলাদেশে একের পর এক সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সাধারণ মানুষ সে সব ভোলেননি। আর ভোলেননি বলেই ওই সব ঘটনা যে রাজনৈতিক দল ঘটিয়েছিল, তারা জনসমর্থনহীন হয়ে পড়েছে। আর সেই জোরের জায়গা থেকেই ফের সরকার গঠনের ব্যাপারে আশাবাদী আওয়ামী লীগ।

কিন্তু, নির্বাচনের আগে বিরোধীরা তো তার দলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলছে। কথাটা বলতেই যেন একটু বিরক্ত হলেন প্রধানমন্ত্রী। বললেন, ‘নালিশ করার পাশাপাশি বিভ্রান্তি ছড়াতে এবং মিথ্যা কথা বলতে ওরা ভীষণ পারদর্শী।’

হাসিনার পাল্টা দাবি, নির্বাচনে বিরোধীদের হয়ে যারা প্রার্থী হতে চেয়েছেন, তাদেরই ওরা নমিনেশন দিয়েছে। কিন্তু, দলীয় প্রতীক পেয়েছেন এক জন। এর পর নিজেদের মধ্যেই সঙ্ঘাত শুরু হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর দাবি।

তার কথায়, ‘দলের পুরনো বা জিতবেন এমন নেতাদের নমিনেশন দেয়নি ওরা। যে কারণে বঞ্চিতদের কাছে ওদের আক্রান্ত হতে হচ্ছে।’ কয়েক জন নেতা-কর্মীকে খুনের ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ হওয়ার পর সে বিষয়ে তদন্ত হবে বলেও জানালেন হাসিনা।

বাংলাদেশের যুব সম্প্রদায় আওয়ামী লীগ সম্পর্কে খুবই উৎসাহী বলে মনে করেন হাসিনা। তার মতে, বাংলাদেশে মানুষের মন থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটাই মুছে ফেলা হয়েছিল। এখনকার নতুন প্রজন্মের মধ্যে সত্যকে জানার একটা আগ্রহ রয়েছে। ইন্টারনেটে খুঁজলেই একাত্তরের অনেক তথ্য এখন জানা যায়। ফলে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার বিষয়টি এখন অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। হাসিনার কথায়, ‘এর জেরে আওয়ামী লীগের প্রতি যুব সম্প্রদায়ের মতটাই পাল্টে গিয়েছে।’

নির্বাচন উপলক্ষে হাসিনা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সফর করেছেন। সেই সফরে তিনি মানুষের কাছ থেকে ভালই সাড়া পেয়েছেন বলে এ দিন দাবি করেন হাসিনা। তার কথায়, ‘মানুষের মধ্যে সেই ভালবাসাটা দেখতে পেলাম জানেন! তারা অন্তর থেকে চাইছেন, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসুক। জনগণ এটা জানেন, আওয়ামীলীগের মাধ্যমেই তাদের ভাগ্য পরিবর্তিত হবে।’

নারীদের থেকে তো বটেই, আওয়ামী লিী তরুণ সমাজের কাছ থেকেও অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছে বলে এ দিন দাবি করেন হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এ বারের নির্বাচনটা আগের মতো অত চ্যালেঞ্জিং নয়। বৈরীতার পরিবেশও নেই। বরং আমাদের স্বপক্ষে একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এর আগের নির্বাচনগুলোয় একটা বিভেদ লক্ষ করতাম। এ বার কিন্তু একচেটিয়া ভাবে সকলের সমর্থনটা আমাদের সঙ্গে রয়েছে। সেটা টেরও পাচ্ছি।’

পাকিস্তান প্রসঙ্গেও এ দিন মুখ খুলেছেন হাসিনা। তার দাবি, বাংলাদেশে কিছু পাকিস্তানপ্রেমী মানুষ আছেন। ‘যুদ্ধাপরাধীদের মন পড়ে আছে পাকিস্তানে,’—এমন মন্তব্যও করলেন তিনি। পাশাপাশি জানিয়ে দিলেন, তারা সতর্ক আছেন। কারও সঙ্গে বৈরীতা করতে না চাইলেও, দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে কাউকে যে কোনও ভাবেই নাক গলাতে দেবে না বাংলাদেশ, সে কথাও এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন হাসিনা।

বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত যে আসামিরা লন্ডনে বসে রয়েছে, তাদের সম্পর্কে আওয়ামী লীগের মনোভাব এ দিন স্পষ্ট হয়েছে হাসিনার কথায়। তার মতে, ওই সব আসামিরা সব সময় বিদেশে বসে দেশের ভিতর একটা অশান্ত পরিবেশ তৈরি করতে চায়। অস্ত্র পাচার, চোরা কারবার এবং দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ওই সব মানুষের অঢেল টাকা বলে হাসিনার অভিযোগ।

তার দাবি, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাতে যারা সুযোগসুবিধা পেয়েছে, সেই সব ব্যবসায়ীরাও ওই দলকে টাকাপয়সা দেয়। তার কথায়, ‘ক্ষমতায় ছিল যখন, দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ না করলেও নিজেদেও আখের ওরা গুছিয়ে নিয়েছে। ওই টাকা তো ওরা এখন ব্যয় করে দেশের ভেতরে অশান্ত পরিবেশ তৈরি করতে।’ পাশাপাশি তাঁর প্রতিশ্রুতি, ব্রিটেনের সঙ্গে কথা বলে ওই আসামিদের দেশে ফেরত এনে রায় কার্যকর করা হবে।

এ বারের নির্বাচনে জামাতে ইসলাম কী ভাবে ধানের শীষ প্রতীক পেল তা নিয়েও এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন হাসিনা। তার প্রশ্ন, যাদের নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন বাতিল করল, তাদের কী ভাবে নমিনেশন দেওয়া হয়? তিনি বলেন, ‘জামায়াত তো গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। বুদ্ধিজীবি হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। মেয়েদেরকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া থেকে ঘরবাড়ি দখল করেছিল। ওদের নমিনেশন দেওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই মানুষ শঙ্কিত!’

এ দিন কামাল হোসেনের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাসিনা। কামাল হোসেনকে দেশের সংবিধান রচয়িতা বলা হয়। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে চলে গিয়ে নিজে দল করেন। ধানমন্ডি থেকে দাঁড়িয়েছিলেন এক বার। ওই নির্বাচনে তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। হাসিনার কথায়, ‘সেই তিনি কিনা গেলেন জামাত-বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে!’ এর পরেই একগাল হাসি-সহ তার সংযোজন, ‘আমি অবাক হইনি। কারণ কী জানেন? ওর শ্বশুরবাড়ি পাকিস্তানে। ছেলেদের একটু শ্বশুরবাড়ির টানটা বেশি থাকে।’

ঘণ্টাখানেক কথার পর সুধাসদনে তখন সন্ধ্যা বেশ গাঢ় হয়ে নেমে এসেছে। বিদায় পর্বে ফের জিজ্ঞেস করা গেল, ভোটের ফল কেমন হবে? হাসিনা জানালেন, ‘ওই যে প্রথমেই বলেছিলাম, আমরাই আসছি। কারণ, মানুষ আমাদেরই চাইছেন।’

Bootstrap Image Preview