Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ রবিবার, মে ২০২৪ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

আত্মমানবতার সেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে পাটকেলঘাটার 'লোকনাথ নার্সিং হোম'

ইলিয়াস হোসেন, পাটকেলঘাটা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৭:১৬ PM
আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৭:১৬ PM

bdmorning Image Preview


আত্মমানবতার সেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে পাটকেলঘাটার লোকনাথ নার্সিং হোম এন্ড ডায়গনষ্টিক সেন্টার। 'লাভ নয় লোকশান নয় সেবাই মূল লক্ষ্য' এমনই শ্লোগানকে সামনে রেখে বেসরকারি এ হাসপাতালটি সাতক্ষীরা জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল পাটকেলঘাটা বাজারে ২০১১ সাল থেকে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পরিষদের প্রধান বিশিষ্ট সমাজসেবক পুলক কুমার পাল ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্যসেবায় অবদান রাখায় মাদর তেরেসা, মহাত্মা গান্ধী পিস এওয়ার্ডসহ ৫টি পদকে ভূষিত হয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটি ২০১১ সালে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের পাশেই ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ পাটকেলঘাটা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় সড়কের পশ্চিমপাশে নিরিবিলি পরিবেশে গড়ে উঠেছে।

দীর্ঘ ৭ বছর মানবসেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় সকলের কাছে সুপরিচিত একটি হাসপাতালের নাম লোকনাথ নার্সিং হোম। এখানে মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোরদের সম্মাননাসহ আজীবন চিকিৎসা সেবা ফ্রী প্রদান করা হয়।

বর্তমান ২৮ জন কর্মকর্তা কর্মচারি নিয়ে বেসরকারি এ হাসপাতালটি দৃঢ়চিত্তে মানবসেবায় অগ্রণী ভূমিকায় অংশগ্রহণ করছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান রোটারিয়ান পুলক কুমার পাল এ প্রতিবেদককে অত্যন্ত আক্ষেপের সাথে জানান, ১৯৮৯ সালে তার পিতা মাস্টার সুবোধ কুমার পাল স্ট্রোক আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি অসুস্থ্য হওয়ার সাথে সাথে অনেক ডাক্তারের স্মরনাপন্ন হলেও একমাত্র ডাক্তার মধু সুধন মন্ডল ব্যতিত কাউকে চিকিৎসা সেবায় সেই মুহুর্তে পান নি।

সেই থেকে বুকে লালন করেছিলেন একটি হাসপাতাল গড়ে তুলে পিতার মতো আর কাউকে যেন হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে মৃত্যুবরণ করতে না হয়। সাতক্ষীরা সদর ও তালা সদর হাসপাতালের ১৫ কিলোমিটার উভয় প্রান্তের দুরত্বে পাটকেলঘাটা এলাকা অবস্থিত। এ এলাকায় সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা ছিল কষ্টসাধ্য। এ কষ্টকে দুরিভুত করতে সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান পুলক কুমার পাল গড়ে তোলেন এ বেসরকারি হাসপাতালটি।

হাসপাতালটির কর্যক্রমটি শুরুতেই ২০১১ সালে তালা উপজেলা ২২৯টি গ্রামই কপোতাক্ষের উপচেপড়া পানিতে তলিয়ে যায়। বন্যার্থ মানুষগুলো আশ্রয় নেয় উচু রাস্তার উপরে, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বারান্দায় ও ছাদে মানবেতর জীবনযাপন করতে থাকে খাদ্য ও স্বাস্থ্য সেবার অভাবে। লোকনাথ নার্সিং হোম মানবেতর হাত বাড়িয়ে ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্প ও বন্যার্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ অব্যাহত রাখে। ঐ বছরই বেসরকারি এ হাসপাতালটি মাত্র একটি ভবনে নিচ তলায় শুরু হলেও হাটি হাটি পা পা করে আজ ৪ তলা বিল্ডিং-এর পুরোটায় হাসপাতালের কার্যক্রম চলছে।

হাসপাতালটিতে দ্রুত আপদকালীন সময়ে মারামারি, দাঙ্গাহাঙ্গামা, রোড এক্সিডেন্টে আহত ও মুমূর্ষ রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে সবসময়ই একধাপ এগিয়ে। এ হাসপাতালটি শুধুমাত্র মানবসেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেনি। হাসপাতালের লভাংশ প্রদান করা হয় মানবতার সেবায়। ২০১৪ সালে ২১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা পূর্বক সকল মুক্তিযোদ্ধাদের আজীবন চিকিৎসা সেবা ফ্রী ঘোষণা করেছে।

২০১৬ সালে প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোরদের সম্মাননাপূর্বক তাদেরও আজীবন চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। ২০১৫ সালে এস.এস.সি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে গরীব ও মেধাবীদের পরীক্ষার বোর্ড ফি প্রদান করা হয় পাটকেলঘাটা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক পুলক কুমার পাল বরাবরই অত্রাঞ্চলের খেলাধুলা ও শরীর চর্চার মান বাড়াতে বিভিন্ন সংগঠনকে পুরস্কারের ব্যবস্থা রেখেছে। সঙ্গীত চর্চায় সাংস্কৃতিমনা মানুষের পাশে থাকায় চক্রবাক শিল্পী গুষ্টি ২০১৭ সালে পুলক কুমার পালকে গুনীজন সম্মাননায় ভূষিত করেন। এ মানুষটির সামাজিক কার্যক্রম অনেকটায় বিষ্মিত করে সাধারণ মানুষদের।

তিনি ২০০৭ সাল থেকে সাতক্ষীরা জেলা রোটারিয়ান ক্লাবের আজীবন সদস্য ও ২০০৪ সালে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন, তিনি বাংলাদেশ জেলা পূজা উদ্য়াপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক, তালা উপজেলা নজরুল সঙ্গীত পরিষদের সভাপতি, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সরুলিয়া ইউনিয়ন শাখার সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

গুনী এ সমাজসেবক মানুষটির সাথে আলাপচারিতায় জানা যায়, সেবায় মানুষের মূল ধর্ম। এ মন্ত্রটিকে পুজি করে আজ মানব সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, মানুষ বেঁচে থাকে তার কর্মের মধ্যে। আমি তো এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবো, কিছু কর্ম যদি মানুষের মধ্যে রেখে নিজেকে আজীবন বাচিয়ে রাখতে পারি এটাই চাওয়া পাওয়া।

গুনী এ মানুষটির জন্ম সাতক্ষীরা জেলার পাটকেলঘাটা থানার পারকুমিরা গ্রামের পালপাড়ায়। পিতা মৃত সুবোধ কুমার পাল ও মাতা শেফালী রানী পালের ঔরশে ৫ সন্তানের মধ্যে তিনি তৃতীয় সন্তান। ১৯৯১ সালে বি.কম গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী অর্জন শেষে আজ মানবসেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। তার ২ পুত্র আকাশ পাল ও দীপ পাল। আকাশ পাল এস.এস.সিতে জিপিএ ৫ পেয়ে বর্তমান যশোর দাউদ স্কুল এন্ড কলেজে অধ্যয়নরত। দীপ পাল গোল্ডেন প্লাস পেয়ে পাটকেলঘাটা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।

তার বড় ভাই এক সময়ের বাংলাদেশ চলচিত্র নায়ক দিপক কুমার পাল বর্তমান আমেরিকা প্রবাসী। মেঝ ভাই প্রনয় কুমার পাল বাংলাদেশ মিল মিলার এসোসিয়েশনের সহ সাধারণ সম্পাদক। ছোট ভাই অলীক কুমার পাল দলুয়া শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রী কলেজে সমাজ বিজ্ঞানে সহকারী অধ্যাপক।

সবচেয়ে মজার বিষয় এ মানুষটির সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান প্রজন্মে একক পরিবারে সম্মৃদ্ধ থাকলেও এখনো পর্যন্ত এ মানুষটির পরিবার যৌথভাবে বসবাস করছে।

কথার এক পর্যায়ে লোকনাথ নামে কেন হাসপাতাল করেছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, বাবা লোকনাথের ভক্ত। ছোটবেলা থেকেই লোকনাথকে স্মরণ করেন তিনি। তিনি বইপত্র পড়ে জেনেছেন, ঋষি লোকনাথ ফু দিয়ে মানুষের রোগ আরোগ্য করতো। তাই তারই নাম অনুসারে মানুষের জন্য সেবার একামাত্র প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন।

বর্তমান তার বেসরকারি হাসপাতালে সব ধরনের অস্ত্রপাচারে ব্যবস্থা, রোগ নির্ণয়ের অত্যাধুনিক প্যাথোলজি, ডেন্টাল বিভাগ, চক্ষু বিভাগ, আল্ট্রাসোনোগ্রাফী, ও এক্সরে বিভাগ খোলা হয়েছে। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, ডাক্তার, নার্স ও এমার্জেন্সি বিভাগ খোলা থাকে।

এছাড়া বিশেষ বিশেষ দিনে দক্ষ ডাক্তার দ্বারা ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্প ও ফ্রী চক্ষু চিকিৎসা প্রদান করা হয়। দীর্ঘ ৬ বছর বেসরকারি এ হাসপাতালটি গরীব ও অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। আত্মমানবতা সেবার উজ্জল দৃষ্টান্ত কুড়িয়ে পাওয়া শিশুকে লালন পালন শেষে উপযুক্ত দত্তক পিতা মাতার কাছে হস্তান্তর করে প্রসংশনীয় হয়েছেন। 

 

Bootstrap Image Preview