Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৮ বুধবার, মে ২০২৪ | ২৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

সর্বনাশা 'ড্যান্ডি' নেশা গ্রাস করছে পথশিশুদের

হৃদয় দেবনাথ, মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৪:৩০ PM
আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৪:৪২ PM

bdmorning Image Preview


মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় সর্বনাশা মরণ নেশা ড্যান্ডি ও অন্যান্য নেশা সেবনে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে শতশত পথশিশুর জীবন। ড্যান্ডি নেশায় আসক্ত এক ছেলের আঘাতে আজ একজন ব্যবসায়ীও আহত হয়েছে। এ চিত্র নতুন নয়। এসব মাদক আসক্তির ফলে অসহায় পথশিশুদের জীবন চলে যাচ্ছে অন্ধকার পথে। দেশে মোট মাদকাসক্তের শতকরা ৪০ ভাগই এখন শিশু-কিশোর। 

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে এ তথ্য বেরিয়ে এলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাস্তব পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। তারই দৃষ্টান্ত মিলে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলসহ প্রায় সর্বত্রই এই মরণ নেশার ছোঁয়া। মরণ নেশা মাদকে ছেয়ে গেছে পুরো মৌলভীবাজার জেলা। সর্বনাশা মাদকের ছোবলে যুবক ও বয়স্কদের পাশাপাশি আসক্ত হয়ে পড়ছেন এ এলাকার শতশত পথশিশু।

এসব পথশিশুরা মাদকে নির্ভর হয়ে চলে যাচ্ছে অন্ধকার জীবনে। যাদের বেশির ভাগের বয়স ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। নেশার বাজারে প্রতিনিয়তই যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নেশার নাম। যেমন- হেরোইন, মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পলিথিন আর গামের (টলুইন) সমন্বয়ে তৈরি নতুন নেশা 'ড্যান্ডি' সেবিদের সংখ্যা।

বেশ কিছু ড্যান্ডি সেবিদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, পলিথিন ব্যাগের ভিতরে রয়েছে 'আইকা' বা জুতোয় ব্যবহৃত এক ধরনের আঁঠা। ব্যাগের ভীতরে ঢুকিয়ে কয়েকবার ঝাঁকি দিলেই প্রস্তুত। এরপর শুধু নাক লাগিয়ে ঘ্রাণ নেয়া। কম দামের এ নেশার নাম ডান্ডি। 'ড্যান্ডি' নামে অধিক পরিচিত নেশাটি স্বল্প মূল্যের কারণে পথশিশু ও ছিন্নমূল নারী-পুরুষ সবচেয়ে বেশি আসক্তে ঝুকিয়ে পড়ছে এই নেশায়। এ ড্যান্ডি নেশা রাস্তাঘাট, পার্ক, ও নির্জন এলাকায় চলছে নির্বিঘ্নে সেবন।

একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে কথা বলে জানা যায়, নিয়মিত ড্যান্ডি সেবনে ডান্ডিসেবিদের লিভার, কিডনিসহ ব্রেনের অংশগুলো স্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয় হতে পারে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা এসব পথশিশুরা নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে, ময়লা- আবর্জনা থেকে বোতল ভাঙারি টোকান, কাঁচা বাজারের কুলি, হোটেলে পানি দেওয়া, হোটেল বয়, ভিক্ষাবৃত্তি, পরিবহনের কাজ, ভাসমান যৌনকর্মী, মাদক বিক্রেতা, মাদক গ্রহণ করা, ধান্দাবাজ, চুরি করা ও পকেট কাটার মত ভয়াবহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।

শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশন এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ময়লা, ছেঁড়া জামা-প্যান্ট পরে ৭ থেকে ৮ জন শিশুরা ভিক্ষাবৃত্তির জন্য ঘোরাফেরা করছে শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে আসা পর্যটকদের অপেক্ষা করছে তারা। অন্য সময় অলস আড্ডা। অনেকেরই নাম আছে কিন্তু পরিচয় নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাদের সবাই মাদকাসক্ত। বিভিন্ন ধরনের সস্তা নেশায় আসক্ত তারা। আবার এদের মধ্যে অনেকেই মাদক সেবনের টাকা যোগান দিতে অনেক সময় জড়িয়ে পড়ছে চুরি, ছিনতাই, এমন কি দিনমুজুর কৃষক ও ভিক্ষুককে কিল ঘুশি দিয়ে, টাকা ছিনিয়ে নিয়ে তারা নেশা করছেন এমন প্রমাণও পাওয়া গেছে। এছাড়া নানা ধরনের আইনি অপরাধে তারা জড়িয়ে যাচ্ছে।

ইউনিসেফের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, মৌলভীবাজারে ছিন্নমুল শিশুর সংখ্যা ২০ হাজার। এরমধ্যে পরিবারের সঙ্গে বাস করে ১৪ হাজার। বাকি ৬ হাজার শিশু একেবারেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। এসব পথশিশুদের বয়স ৮ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করায় ছোট থেকেই এসব শিশুরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। এদিকে এসব পথশিশুদের লেখাপড়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের মান উন্নয়নে নেই কোন সরকারি বা বেসরকারি ব্যবস্থা।

পথশিশুদের জন্য আগে ইউনিসেফ থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংগঠন কাজ করলেও এখন আর কোন সংগঠনই কাজ করে না। যার কারণে যত দিন যাচ্ছে এসব শিশুরা আরো বেশি বিপথগামী হয়ে পড়ছে। শুধু এসব পথশিশু নিজেরাই নয়, এসব কারণে সামাজিক ব্যবস্থাও পড়ছে হুমকির মুখে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সচেতন এলাকাবাসীর দাবি সর্বনাশা ড্যান্ডি নেশাসহ সকল প্রকার মাদক সমাজ থেকে চিরতরে নির্মূল করে অসহায় বিপথগামী এসব পথশিশুদের আলোর পথে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হোক।

এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও জয়নাল আবেদীন ফারুক টিটু বিডিমর্নিংকে বলেন, ড্যান্ডি নেশার প্রবণতাটা সাধারণত পথশিশুদের মধ্যেই বেশি কারণ এ নেশাটা গ্রহণ করলে সাধারণত ক্ষুধামন্দা তৈরি হয় অর্থাৎ ক্ষুধা নষ্ট হয়ে যায় যার ফলে তাদের খাবার খেতে হয় না। মূলত খাবারের অভাবের কারণেই ছিন্নমুল এসব পথ শিশু ড্যান্ডি নেশায় আসক্ত হয়।

তিনি আরো বলেন, এ অবস্থা থেকে নিশ্চই তাদের বেড় করে এনে একটি সুস্থ-সুন্দর জীবন দেয়া আমাদের দায়িত্ব, রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এসব নেশার কারণে প্রায়শই টাকা সংগ্রহ করতে তারা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পরে।তাদের পুনর্বাসন করে সুস্থ্য করে তুলতে রাষ্ট্রের পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন তিনি। 

Bootstrap Image Preview