Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৭ মঙ্গলবার, মে ২০২৪ | ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

আলোকিত স্কুলের শতভাগ পাশ, ১৪ স্কুলের ২৯৫২৯ শিক্ষার্থীর মাত্র ৪ জন পেল জিপিএ ৫!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:২২ PM
আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:২৭ PM

bdmorning Image Preview


প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার ফলাফলে জেলাশহরগুলো থেকে এখনো অনেকটা পিছিয়ে আছে মফস্বলের বিদ্যালয়গুলো। পড়াশুনার মানেও একই চিত্র গ্রামে। তবে মেঠোপথের আলোকিত স্কুল এ জেলার অন্যসব বিদ্যালয় থেকে একেবারে আলাদ। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত সুবিধাবঞ্চিত আর অবহেলিত শিশুদের বিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত এই স্কুলের নাম বিভিন্ন কারণে আলোচিত। লক্ষ্মীপুর জেলার ১৮ নং কুশাখালী ইউানিয়নের ফরাশগঞ্জ গ্রামে অবস্থিত এই বিদ্যালয়টি ২০১৮ সালে পিইসি পরীক্ষায় প্রথম বারের মতো অংশ নিয়ে শতভাগ পাশের রেকর্ড অর্জন করে। ফলে বিদ্যালয়টি আবারো সবার দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়।

এই বিদ্যালয় থেকে ৭ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে সবাই পাশ করেছে। দুজন শিক্ষার্থী জিপিএ ৪ এবং বাকিরা সবাই জিপিএ ৩.৫ এর উপরে পেয়েছে। কুশাখালী ইউনিয়নের ১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শতভাগ পাশ করেছে মাত্র ৪টি বিদ্যালয়। তার মধ্যে ডা. মোমতাজ উদ্দিন আলোকিত স্কুল এন্ড কলেজ একটি। স্কুলটির কোড নং ৪০৮০৪৩৩১০। পুরো জেলায় শতভাগ পাশ করা বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭৪৪টি। কুশাখালী ইউনিয়নে শতভাগ পাশ করা অন্যান্য স্কুলগুলো হলো কালিবিত্তি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম কল্যাণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম কাঠালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

প্রতিষ্ঠার পর বিভিন্ন বাঁধার মুখোমুখি হয়েও স্কুলটি এমন সাফল্যে খুশি আলোকিত স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক আরিফ চৌধুরী শুভ ও প্রধান শিক্ষক মো. নোমান হোসেন। তারা দুইভাই ২০১৩ সালে সুবিধাবঞ্চিত মাত্র ১১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এই বিদ্যালয়টি গড়ে তোলেন। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৫ জন শিক্ষক রয়েছে। শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা শতাধিক। বিদ্যায়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে সরকারি বা বেসরকারি কোন সহযোগিতা ছাড়াই তারা বিদ্যালয়টি পরিচালনা করছেন। বছরের বিভিন্ন সময় এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন আয়োজনে জেলাভিত্তিক আলোচনায় আসলেও এবার শতভাগ ফলাফল অর্জন করায় বিদ্যালয়টি আবারো জনমুখে আলোচনার জন্মদিল।

আলোকিত স্কুলের অধ্যক্ষ নোমান হোসেন বলেন, আমরা আমাদের বাচ্চাদের মেধার কম্পিটেশন করি ,ফলাফলের নয়। সেজন্যে শতভাগ পাশ সম্ভব হলো। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা কিছু শিখে যাক আমাদের স্কুল থেকে।

১৮ নং কুশাখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বিডিমর্নিংকে বলেন, ফরাশগঞ্জ গ্রামে এমন একটি বিদ্যালয় এটা অনেকের কাছেই কল্পনাতীত। আমি খোঁজ নিই মাঝে মাঝে।  ওখানেতো অনেক ছেলেমেয়ে পড়ে। শুনেছি সবাই পাশ করেছে এই বিদ্যালয় থেকে। যে বিদ্যালয়টি দিয়েছে সে অনেক কষ্ট করেই দিয়েছে। তাকে আমি সবার পক্ষ থেকে পুরষ্কিত করবো।

ঝাউডগী দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক এবং ফরাশগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা মাষ্টার আবু তাহের বলেন, আলোকিত স্কুলের এই সাফল্য এই গ্রামের সুনাম। এই স্কুল যে কত কষ্ট করে গড়ে তোলা হয়েছে তা আমি স্বচোক্ষে দেখেছি। যতটা কষ্ট করেছে ছেলেমেয়েদের নিয়ে তারতো সাফল্য আসতে হবেই। সবার জন্যে আমার শুভকামনা রইল।

আলোকিত স্কুলের এমন সাফল্যে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকতা আবু জাফর মো. সালেহ। তিনি বলেন, আমরা চাই আলোকিত স্কুল এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখুক।

লক্ষ্মীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ শাজাহান আলি বিডিমর্নিংকে বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামের আলোকিত স্কুলের শতভাগ পাশের খবর আমি প্রথম ফেসবুকে দেখেছি। ভালো লেগেছে। এটাতো একটি সুসংবাদ সবার জন্যে।পুরো ইউনিয়নে মাত্র ৪টি স্কুল শতভাগ পাশ করলো। আলোকিত স্কুল তার মধ্যে একটি। আমি এই স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাফল্য কামনা করি। সেই সাথে এমন সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে আশাবাদী।

 

কুশাখালী ইউনিয়নের ১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১৮ সালে পিইসিতে রেজিস্টার্ড শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩০৯১৩ জন। কিন্তু ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত পিইসি পরীক্ষায় অনুউপস্থিত ছিল ১৩৮৪ জন পরীক্ষার্থী। ২৯৫২৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিলেও এদের মধ্যে ফেল করেছেন ২২১৬ জন এবং পাশ করেছে ২৭৩১৩ জন। তবে জিপিএ ৫ পেয়েছে মাত্র ৪ জন।

এ জেলায় এবার ১০৯৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিইসির গড় পাশের হার ৬৭.৯৫ শতাংশ, ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায় পাশের হার ৬২.৮৮ শতাংশ এবং জেএসসিতে গড় পাশের হার ৮৫.৬৫ শতাংশ।

কুশাখালী ইউনিয়নের ১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো হলো…

১. ফরাশগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২. ডা, মোমতাজ উদ্দিন আলোকিত স্কুল এন্ড কলেজ ৩. কুশাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪. কালিবিত্তি সরকারি প্রাথমিক ৫. নলডগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬. ঝাউডগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭. পুকুরদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮. পশ্চিম পুকুরদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯. উত্তর ছিলাদী সরকারি প্রাথমিক ১০. দক্ষিণ ছিলাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১. পশ্চিম কল্যাণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২. পশ্চিম কাঠালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৩. পূর্বচরমটুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৪. মদনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

ফরাশগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট পরীক্ষার্থী ৪৫ জন। এর মধ্যে ১৬ জন ছেলে ২৯ জন মেয়ে শিক্ষার্থী। ২ জন ছেলে এবং ৫ জন মেয়ে ফেল করেছে। মোট পাশ করেছে ৩৮ জন। এই স্কুল থেকে কেউ জিপিএ ৫ পায়নি।

ডা, মোমতাজ উদ্দিন আলোকিত স্কুল এন্ড কলেজ এর মোট পরীক্ষার্থী ৭ জন। এর মধ্যে ৪ জন ছেলে ৩ জন মেয়ে শিক্ষার্থী। এই স্কুলে শতভাগ পাশ করেছে। এই স্কুলীট প্রথম বারের মতো পিইসিতে অংশ নিলো।

কুশাখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট পরীক্ষার্থী ৮৭ জন। এর মধ্যে ৩০ জন ছেলে ৫৭ জন মেয়ে শিক্ষার্থী। এই স্কুল থেকে সব ছেলে পাশ করলেও ফেল করেছে ১৩ জন মেয়ে। ১ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে।

কালিবিত্তি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট পরীক্ষার্থী ১১ জন। এর মধ্যে ৭ জন ছেলে ৪ জন মেয়ে শিক্ষার্থী। এই স্কুলে শতভাগ পাশ করেছে। কিন্তু কেউ জিপিএ ৫ পায়নি।

নলডগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট পরীক্ষার্থী ৩০ জন। এর মধ্যে ১৬ জন ছেলে ১৪ জন মেয়ে শিক্ষার্থী। এই স্কুল থেকে ২ জন ছেলে ও ৫ জন মেয়েসহ মোট ৭ জন ফেল করেছে। কিন্তু কেউ জিপিএ ৫ পায়নি।

ঝাউডগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট পরীক্ষার্থী ২১ জন। এর মধ্যে ১২ জন ছেলে ৯ জন মেয়ে শিক্ষার্থী। ১ জন ছেলে এবং ৩ জন মেয়ে ফেল করেছে। মোট পাশ করেছে ১৭ জন। এই স্কুল থেকে কেউ জিপিএ ৫ পায়নি।

পুকুরদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট পরীক্ষার্থী ৩০ জন। এই স্কুল থেকে ৯জন ছেলে এবং ২১ জন মেয়ে পরীক্ষা দিয়েছে। এর মধ্যে ১ জন ছেলে ৫ জন মেয়ে ফেল করেছে। মোট পাশ করেছে ২৪ জন। এই স্কুল থেকে কেউ জিপিএ ৫ পায়নি।

উত্তর ছিলাদী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট পরীক্ষার্থী ২১ জন। এর মধ্যে ১২ জন ছেলে ৭ জন মেয়ে শিক্ষার্থী। ২ জন ছেলে ফেল করেছে। মোট পাশ করেছে ১৯ জন। এই স্কুল থেকে কেউ জিপিএ ৫ পায়নি।

দক্ষিণ ছিলাদী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট পরীক্ষার্থী ২১ জন। এর মধ্যে ৫ জন ছেলে ১৬ জন মেয়ে শিক্ষার্থী। ১ জন ছেলে ফেল করেছে। মোট পাশ করেছে ২০ জন। এই স্কুল থেকে কেউ জিপিএ ৫ পায়নি।

পশ্চিম কল্যাণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট পরীক্ষার্থী ৬১ জন। এর মধ্যে ২৮ জন ছেলে ৩৩ জন মেয়ে শিক্ষার্থী। সবাই পাশ করেছে। এই স্কুল থেকে ৩ জন ছেলে জিপিএ ৫ পেয়েছে।

পশ্চিম কাঠালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট পরীক্ষার্থী ২৫ জন। এর মধ্যে ৩ জন ছেলে ২২ জন মেয়ে শিক্ষার্থী। সবাই পাশ করেছে। এই স্কুল থেকে কেউ জিপিএ ৫ পায়নি।

পূর্বচরমটুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট পরীক্ষার্থী ১৮ জন। এর মধ্যে ৬ জন ছেলে ১২ জন মেয়ে শিক্ষার্থী। ২ জন ছেলে এবং ৫ জন মেয়ে ফেল করেছে। মোট পাশ করেছে ১১ জন। এই স্কুল থেকে কেউ জিপিএ ৫ পায়নি।

পশ্চিম পুকুরদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট পরীক্ষার্থী ১৭ জন। এর মধ্যে ৪ জন ছেলে ১৩ জন মেয়ে শিক্ষার্থী। ছেলেরা সবাই পাশ করলেও ২ জন মেয়ে ফেল করেছে। মোট পাশ করেছে ১৫ জন। এই স্কুল থেকে কেউ জিপিএ ৫ পায়নি।

মদনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট পরীক্ষার্থী ২১ জন। এর মধ্যে ১০ জন ছেলে ১১ জন মেয়ে শিক্ষার্থী।  ২ জন ছেলে এবং ৮ জন মেয়ে ফেল করেছে। মোট পাশ করেছে ১১ জন। এই স্কুল থেকে কেউ জিপিএ ৫ পায়নি।

এবার লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ২৯৫২৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৭৩১৩ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২৯৩৪ জন। ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায় ৮১৮৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৭৯০৫ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০৪ জন। জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় ৮৯৯৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৭৯৪১ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৪ জন।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সরিৎ কুমার চাকমা বিডিমর্নিংকে এ তথ্য জানান।

Bootstrap Image Preview