দিন দুয়েক আগে হঠাতই বিএনপি ছেড়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন দলটির অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন না পেয়েই দল ছেড়েছেন ইনাম চৌধুরী- চারদিকে এমন গুঞ্জন থাকলেও সেটিকে পুরোপুরি সঠিক নয় বল দাবি করেছেন প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ। খবর বিবিসি বাংলা।
সিলেট-১ আসনে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ইনাম আহমেদ চৌধুরী। তবে শেষ পর্যন্ত সে আসনে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পান খন্দকার আবদুল মুক্তাদির।
মি. চৌধুরী ছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার একজন উপদেষ্টা। দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ওপরে বইও লিখেছেন তিনি।
আকস্মিকভাবে দল বদলালেন কেন- জানতে চাইলে ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির মনোনয়ন না পেয়েই তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন- ঢালাওভাবে একথা বলাটা ঠিক হবে না।
তিনি স্বীকার করেন যে এটা একটি কারণ, তবে একমাত্র কারণ নয়। ধীরে ধীরে, বেশ কিছু দিন ধরে তার মধ্যে এ ভাবনা তৈরি হয়েছে।
ইনাম চৌধুরী বলেন, আমার যে অভিজ্ঞতা ও পারদর্শিতা রয়েছে তা আমি কাজে লাগাতে চাই। আমার যে আদর্শিক অবস্থান সেটাও আমি প্রমাণ করতে চাই। তারই জন্যে আমি বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের সিদ্ধান্তটা নিলাম।
তিনি জানান, সম্প্রতি কিছু ব্যাপারে বিএনপি তার প্রতি যে আচরণ করেছে তাতে তিনি 'ধাক্কা খেয়েছেন'।
‘আমার কাছে অনেক দিন ধরেই মনে হয়েছে - আমার যে মতাদর্শ বা দৃষ্টিভঙ্গি তা এখানে উপযুক্ত স্থান পাচ্ছে কিনা। আমি বিশ্বাস করি, দেশের রাজনৈতিক আবহাওয়াটা সাংঘর্ষিক থাকবে না, এখানে সহনশীলতা-সৌহার্দ্য থাকবে, সহমর্মিতা থাকবে’- বলেন সাবেক এই বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, ‘এটাতেই ধাবিত হয়ে আমি অর্থমন্ত্রীর (এ এমএ মুহিত) সাথে সাক্ষাত করেছিলাম। এটাতে দেশের মিডিয়াতে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি হলো। এ সাক্ষাত বিএনপির উচ্চতম মহল ভালোভাবে গ্রহণ করেনি।’
বিএনপি ত্যাগের আরো কিছু কারণের কথা উল্লেখ করেন মি. চৌধুরী।
‘আমি বিএনপির ফরেন রিলেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান। কিন্তু একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রেস ব্রিফিং আহ্বান করা হলো, কিন্তু সেখানে আমাকে থাকতে বলা পর্যন্ত হলো না। নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করা হলো, সেখানে কয়েকজন ভাইস-চেয়ারম্যান করা হলো - সেখানেও আমার স্থান হলো না।’
‘এছাড়া ২০০১ সাল থেকে শুরু করে তিনটি অকেশনে আমাকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় নি। অর্থাৎ আমাকে আস্থা এবং বিশ্বাসের উপযোগী বলে ধরা হয়নি।’- বলেন তিনি।
তাহলে মনোনয়ন না পেয়েই, বা একটা রাগ বা অভিমান থেকেই কি তিনি দল পরিবর্তন করেছেন?
এর জবাবে মি. চৌধুরী বলেন, ‘মনোনয়ন এখানে মুখ্য ব্যাপার নয়, এটা মোটেই ঠিক না। একটা উপলক্ষ্য মাত্র। কথা হলো আমার চিন্তাধারা এবং মতাদর্শ এখানে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে কিনা, তাকে স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে কিনা। আমি আমার কর্মময় জীবনের এমন একটা পর্বে এসেছি যে আমার আর অপেক্ষা করার সুযোগ নেই।’
কিন্তু আওয়ামী লীগে যখন তিনি যোগদান করলেন তখন তো তার আর এই দলের হয়ে মনোনয়ন পাবার সুযোগ নেই।
‘সে জন্যেই আমি বলছি এটা গৌণ ব্যাপার।’-উত্তর দেন তিনি।
ইনাম চৌধুরী বলেন, ‘এর পেছনের ঘটনাগুলো আপনাকে বললাম। আরেকটা ব্যাপার আমি লক্ষ্য করেছি - ইদানীং আমাদের দেশে আধুনিকায়ন এবং উন্নয়নের ব্যাপারে যথেষ্ট অর্জন হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যে প্রচেষ্টা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করছেন - আমার মনে হলো সেখানে আমি যদি কিছু অবদান রাখতে পারি। মতামত দিয়ে, এখানে যে মনোনয়ন নিয়ে প্রার্থী হতে হবে সেরকম কিছু নয়।’
তাহলে কি তিনি এখন আওয়ামী লীগ যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর ভিত্তি করে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গড়ার আদর্শের কথা বলে - সেই আদর্শের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছেন?
জবাবে ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি সেটাতে বিশ্বাস করি। শুধু আমি নই আমার মনে হয় এ বিশ্বাস প্রায় সার্বজনীন। তারা যুদ্ধাপরাধের যে বিচার করে তা খুবই প্রশংসনীয়।’
বিএনপি তো ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে না, জাতীয়তাবাদ নিয়েও তাদের মতাদর্শের পার্থক্য আছে - তাহলে কি তিনি দীর্ঘ ১৮ বছর এই অবিশ্বাস থেকেই বিএনপির রাজনীতি করেছেন?
এর জবাবে তিনি বলেন, ঠিক এভাবে বলাটা ঠিক হবে না, দুই দলের আদর্শের পার্থক্য কিছুটা আছে - তবে তা ক্রমে বিলীয়মান।
তাহলে ১৮ বছর বিএনপি করে আওয়ামী লীগে যোগ দেবার পর সেটা কি তাকে তাড়িত করবে? তিনি এ দুটিকে কিভাবে মেলাবেন?
এ প্রশ্ন করা হলে ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘দু'দলের ইশতেহার বা যাই বলুন - দুটো মিলিয়ে পড়লে দেখবেন এখানে অনেক 'কমনালিটিজ' বা অভিন্নতা আছে। তবে আরেকটা জিনিস হলো - এখানে আমার চিন্তার স্বীকৃতি থাকছে, কনট্রিবিউট করার যে ক্ষমতা তার স্বীকৃতি থাকছে।’
‘আমি আর চার-পাঁচ বছর কর্মক্ষম থাকতে পারবো। এর মধ্যে আমার চিন্তাধারাগুলোকে আগামী প্রজন্মের কাছে যেন পৌছাতে পারি - এটা আমার অনুভুতি।’
তাহলে কি তাকে ভবিষ্যতে কোন মন্ত্রী, এমপি বা উপদেষ্টার পদে দেখা যাবে?
জবাবে মি. চৌধুরী বলেন - ‘না। এরকম কোন বাসনা আমাকে তাড়িত করছে না। আমি তো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে ছিলাম, আরও থাকতে পারতাম। এগুলো ছেড়ে দিয়েই আমি এসেছি।’
‘এ বয়েসে চাওয়া-পাওয়ার বিশেষ কিছু থাকে না - বরং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্বীকৃতি। অবদমিত হবার আশংকা এসময় খুবই পীড়িত করে।’ বলেন তিনি।