Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ রবিবার, মে ২০২৪ | ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘রাজি না হওয়ায় ইলেকট্রিক আয়রন গরম করে আমার পুরো শরীরে ছ্যাঁকা দেন’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৭:১৪ PM
আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৭:৩১ PM

bdmorning Image Preview
প্রতীকী ছবি


সৌদি আরবে মালিকপক্ষের নির্মম নির্যাতন আর ১১ মাস জেল খেটে দেশে ফিরছেন বাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার ছাবেরা খাতুন।

এর আগে ভাগ্য বদলের আশায় দেড় বছর আগে দালালের মাধ্যমে সৌদি আরব পাড়ি জমান বাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার ছাবেরা খাতুন। কথা ছিল সৌদি আরবে নিয়ে গিয়ে তাকে একটি হাসপাতালে ক্লিনারের কাজ দেওয়া হবে। প্রতি মাসে বেতন দেওয়া হবে সৌদি মুদ্রায় এক হাজার ২০০ রিয়াল। আর এজন্য তার কাছ থেকে ওই দালাল নেন মোটা অঙ্কের টাকা।

কিন্তু এসবের সবই যে ছিল তার সঙ্গে প্রতারণা, তা তিনি বুঝতে পারেন জেদ্দা বিমানবন্দরে নামার পর। বিমানবন্দরে যখন একজন সৌদি নাগরিক (নিয়োগকর্তা) তাকে গ্রহণ করতে আসেন, তখন তিনি বুঝতে পারেন যে তিনি গৃহকর্মীর (খাদ্দামার) ভিসায় সৌদি আরব এসেছেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সৌদি আরবে দীর্ঘ দেড় বছরের জীবনে মালিকপক্ষের নির্মম নির্যাতন আর জেলের অন্ধকার দিনগুলো ছাড়া কিছুই জোটেনি তার ভাগ্যে। অবশেষে সৌদি আরবের জেল থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন ছাবেরা খাতুন।

সৌদি আরবে যাওয়ার পর তার সঙ্গে কী ঘটেছিল জানতে চাইলে ছাবেরা বলেন, ‘দেশ থেকে যাওয়ার পর জেদ্দা বিমানবন্দরে নেমেই দেখি আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য একজন সৌদি নিয়োগকর্তা এসেছেন। তখন আমি সবকিছু বুঝতে পারি। কিন্তু কোনো উপায় না পেয়ে আমি তার সঙ্গে তার বাসায় চলে যাই। সেখানে কিছুদিন কাজ করার পর হঠাৎ একদিন ওই গৃহকর্তা মদ্যপ অবস্থায় আমাকে কু-প্রস্তাব দেন এবং টাকা-পয়সার প্রলোভন দেখান। তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমাকে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন তিনি। এক পর্যায়ে আমাকে বিবস্ত্র করে একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে আটকে রাখেন। আমার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়া হয়, যাতে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারি। এভাবে প্রায় ২-৩ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমার গায়ে কেমিক্যাল ঢেলে দেয় এবং ইলেকট্রিক আয়রন গরম করে আমার পুরো শরীরে ছ্যাঁকা দেন তিনি।

মোবাইল ফোনে এসব ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন আর বলছিলেন আমাকে মারধর করেই ওই নিয়োগকর্তা শুধু ক্ষান্ত হননি। বিবস্ত্র অবস্থায় নির্জন একটি পাহাড়ে নিয়ে গিয়ে তার প্রস্তাবে রাজি না হলে পাহাড় থেকে ফেলে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। পরে নিজের আত্মসম্মান রক্ষায় আমার সিদ্ধান্তের ওপর অটল থাকলে আমাকে সেখান থেকে আবারও তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের গাড়ি দেখে আমি চিৎকার করলে পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতলে নিয়ে যায় এবং আমার নিয়োগকর্তাকে (কপিল) গ্রেফতার করে। এরপর আমি আর কিছু মনে করতে পারি না।’

ছাবেরা খাতুন বলেন,‘প্রায় ২২ দিন পর আমি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসলে আমাকে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। আমি জানতে পারি যে, আমার নামে বিভিন্ন অজুহাতে তিনটা মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমি আরবি ভাষায় পারদর্শী না হওয়ায় এবং আত্মপক্ষ সমর্থন দিতে না পারায় মিথ্যা মামলায় প্রায় ১১ মাস জেলখানা এবং সেফহোমে কাটাতে হয়।’

আজ দেশে ফিরবেন ছাবেরা। জেদ্দা কনস্যুলেট তার সম্পূর্ণ আর্থিক খরচ বহন করে আবহা-ঢাকা বিমানের টিকিট করে দিয়েছে।

উল্লেখ্য,মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজারে সৌদি আরবে বর্তমানে ২০ লাখের বেশি বাংলাদেশি রয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি রয়েছে বাংলাদেশি গৃহকর্মী। কিন্তু দেশটিতে যাওয়ার পর বাংলাদেশি নারীদের এমন অবস্থায় দূতাবাস পাশে থাকলেও, বহু গৃহকর্মী এমন নির্যাতনের কথা দূতাবাসে জানাতে পারেন না। যে কারণে দেশটি থেকে বহু নারীকে বোবা কান্না নিয়ে দেশে ফিরে আসতে হচ্ছে। আবার অনেকে এসব নির্মম নির্যাতনের কথা বলতে না পেরে আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নিচ্ছেন।

Bootstrap Image Preview