Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৪ মঙ্গলবার, মে ২০২৪ | ৩১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

কিশোরগঞ্জে চিরকুট লিখে অন্তুর আত্মহত্যায় মামলা নিতে পুলিশের ‘গড়িমসি’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৪:১৬ PM
আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৪:৪০ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


কিশোরগঞ্জে চিরকুট লিখে মাস্টার্স ফলপ্রত্যাশী তরুণী ফৌজিয়া খানম অন্তু (২৩) আত্মহত্যার ঘটনায় চিরকুটে উল্লেখিত সহকারী জজ সুমন মিয়ার বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ সদর থানায় অভিযোগ জানানো হলেও মামলা নিতে পুলিশ ‘গড়িমসি’ করছে বলে অভিযোগ করেছে তরুণীর পরিবার।

আজ বুধবারও অভিযুক্ত সুমন মিয়ার শাস্তির আবিতে মানব বন্ধন করেছে গুরুদয়াল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা।

আত্মহত্যার আগে একটি সুইসাইড নোটে নিজেই নিজের মৃত্যুর কারন লিখে যান তিনি।

সেখানে তিনি তার আত্মহত্যার জন্য দায়ী করেন ময়মনসিংহ ত্রিশাল উপজেরার বৈলর ইউনিয়নের বৌনিয়া গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে সহকারী জজ সুমন মিয়া (গাইবান্ধা)কে। তার সুইসাইড নোট অনুযায়ী দীর্ঘ দিনের প্রেমের সম্পর্ক এবং বর্তমানে তার প্রতি অনিহা থেকেই তিনি আত্মহত্যার পথ বেচে নেন। মৃত্যুর আগে সুইসাইড নোটে তিনি সুমন মিয়ার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তিও দাবী করে গিয়েছেন।

উল্লেখ যে, শুক্রবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে শহরের রাকুয়াইল এলাকার নিজ বাসায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। ফৌজিয়া খানম অন্তু কুয়েতপ্রবাসী ফরিদ উদ্দিন খান এর মেয়ে। তিনি সরকারি গুরুদয়াল কলেজ থেকে ভূগোল বিষয়ে অনার্স পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হিসেবে উত্তীর্ণ হওয়ার পর মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তিন বোন ও এক ভাই এর মধ্যে ফৌজিয়া সুলতানা অন্তু সবার বড়।

বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে বিকালে বাসায় ফিরে ফ্যানের সাথে মেয়ের নিথর দেহ ঝুলতে দেখেন সুলতানা বেগম। পাশেই পড়ে ছিল পেন্সিল দিয়ে ডায়েরির পাতা ছিঁড়ে লেখা একটি চিরকুট।

প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে এই তরুণী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন বলে আত্মহত্যার আগে লিখে যাওয়া চিরকুটে তিনি উল্লেখ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে।

ময়নাতদন্ত শেষে নিহত ফৌজিয়া খানম অন্তু’র লাশ এনে রাখা হয়েছে বাসা সংলগ্ন ফাঁকা জায়গায়। পর্দাঘেরা লাশকে ঘিরে মাতম চলছে পরিবারের সদস্য, সহপাঠি ও আত্মীয়স্বজনের।

ভীড় জমিয়েছেন এলাকাবাসী ও কৌতূহলী নারী-পুরুষ ও শিশু-বৃদ্ধরাও। সবার চোখেই জল।শোকে কাতর মা সুলতানা খানম বার বার মূর্চ্ছা যাচ্ছেন। এইচএসসি পড়ুয়া ছোট দুই বোন ফারিয়া খানম শান্তু ও মরিয়ম খানম ইতু’র কান্না আর আহাজারি যেন থামছেই না। এসএসসি পরীক্ষার্থী একমাত্র ছোট ভাই ওবায়দুল হক খান তানভীরের বেদনার্ত চোখে কেবলই অশ্রু।

স্বজনেরা জানান, শুক্রবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে মা সুলতানা খানম ছোট দুই মেয়ে ও ছোট ছেলেকে নিয়ে শহরের গাইটাল এলাকার অতিথি কমিউনিটি সেন্টারে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। অনেকবার বলেও সেখানে বড় মেয়ে অন্তুকে তিনি বিয়ের অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতে পারেননি। মেয়ের কথামতোই বাইরে থেকে বাসায় তালা দিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানটিতে যোগ দিতে গিয়েছিলেন তাঁরা।

এলাকায় দারুণ মেধাবী মেয়ে হিসেবে পরিচিত ফৌজিয়া খানম অন্তু এভাবে আত্মহননের পথ বেছে নেয়ায় সবাই হতবাক। তাঁরা এই আত্মহত্যার প্ররোচণাকারীদের বিচার দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করবেন বলেও জানান।

চিরকুটে লেখা ছিল, “আমার মৃত্যুর জন্য সহকারী জজ সুমন মিয়া (গাইবান্ধা) দায়ী। সে আমার সব কিছু জেনেও আমাকে স্বপ্ন দেখাইছে। আমার সাথে অনেক দূর পর্যন্ত আসছে। এখন আমি তার যোগ্য না খারাপ মেয়ে বলে ছেড়ে দিল। বাট এখন আর....। খাইরুল ইসলাম (ভূগোল পরিবেশ) মাস্টার্স আমার ক্লাস মেট তার সাথে আমার এক সময় একটা এফেয়ার ছিল। আমি তাকে সাহায্য করতে গিয়ে নিজের ইমেজ নষ্ট করলাম। তাকে সব সময় হেল্প করেছি। আর সে আমার নামে এতো খারাপ খারাপ কথা ছড়ালো। আর খাইরুল চিনে এই ছেলেকে। সে আমার নামে অনেক মিথ্যা কথা বলেছে। কোন দিন তার সাথে এফেয়ার ছিল না। তারপরও এমন কথা বলছে, যা মুখে বলাও পাপ। আমার আম্মা তোমারে অনেক জ্বালিয়েছি ছোটবেলা থেকে। তুমি পারলে আমাকে ক্ষমা কর। অন্তু”

চিরকুটের নিচে আরো লেখা ছিল, 'আমার লাশটি কাটাছিঁড়া করতে দিও না।'

এছাড়া চিরকুটের আরেক পৃষ্ঠায় লেখা ছিল, “আম্মা কোনদিন এদের ছেড়ে দিও না। দাদার কাছে গিয়ে হলেও এর বিচার যেন হয়। তোমার কাছে এই অনুরোধ।”

এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আহসান হাবীব জানান, তদন্তের জন্য তারা নিহত ফৌজিয়া খানম অন্তু’র সুইসাইড নোট এবং তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনটি জব্দ করেছেন।

Bootstrap Image Preview