হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামের আশ্বব উদ্দিনের মেয়ে রোশনা বেগম। স্বামী অনেকদিন আগেই ছেড়ে চলে গেছে। এদিকে ১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে সৌদি পাঠাবে এমন প্রলোভন দেখায় একই ইউনিয়নের মোঃ কাউছার মিয়া। সেখানে গিয়ে মোটা অংকের টাকা কামাই করার স্বপ্ন দেখিয়ে ম্যানেজ করে রোশনা বেগমের পরিবারকে। তাই দরিদ্র বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে আর স্বচ্ছল জীবনের জন্য গত ৬ জুলাই স্বপ্নের দেশ সৌদিতে পাড়ি জমায় রোশনা বেগম। সে দেশে যাওয়ার পর থেকেই তার উপর চলে অমানুষিক নির্যাতন।
অবশেষে কোনরকম নিজের প্রাণ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে দেশে ফেরেন রোশনা বেগম। বর্তমানে তিনি নবীগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
দেশে ফিরে নবীগঞ্জ হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন রোশনা প্রতিনিধিকে জানান, কাউছার নামে এক দালালের কথায় সে বিশ্বাস করে এক লক্ষ টাকা দিয়ে সৌদিতে যায়। সেখানের যাবার পর তাকে তালাবদ্ধ ঘরে রেখে কয়েকজন যুবক মিলে পাঁচ মাস শারীরিকভাবে নির্যাতন করে।
তারা বলেছে, দালাল কাউছারের কাছ থেকে তাকে পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে। তাদের কথা মানতেই হবে। স্বপ্নের দেশে সৌদিতে যাওয়ার পর পাঁচ মাস ধরে তাকে দেশে ফোন করতে দেয়নি দালাল চক্র।
এ ঘটনায় রোশনার স্বজনরা হবিগঞ্জ আদালতে একটি মানবপাচার মামলা দায়ের করেন। এ খবর শুনে দালালরা মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে সে দেশের পুলিশের কাছে তুলে দেয় রোশনাকে। এরপর গত বৃহস্পতিবার রোশনাকে বাংলাদেশে পাঠায় পুলিশ। এখন দেশে আসার পর সে ঠিক মতো চলাফেরাও করতে পারছে না। অবশেষে পরিবারের লোকদের সহযোগিতায় গত শুক্রবার বিকেলে নবীগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে। সুস্থ হতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক চিকিৎসা প্রদান করছেন।
রোশনার বোন শিফা বেগম জানান, তার বোনের কোন খোঁজ খবর না পাওয়ায় বিজ্ঞ আদালতে মানব পাচার আইনে দালালের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এরপর থেকে মামলা তুলে নিতে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন দালাল চক্র। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের পাশাপাশি দালালদের শাস্তি দাবি করছেন তারা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইফুর রহমান জানান, এ ঘটনা একাধিকবার চেষ্টা করেও সামাজিকভাবে কোন সমাধান করতে পারেননি।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার আঃ সামাদ বলেন-রোশনাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করার কারণে সে অতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। তার পর্যাপ্ত চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার ওসি অপারেশন নুরুল ইসলাম ভুঁইয়া জানান, আদালত থেকে এখন পর্যন্ত এধরনের অভিযোগপত্র বা কোন বার্তা এখন পাইনি। আমাদের কাছে মামলার বিষয়ে আদালত থেকে আসলে আমরা অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।