Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৬ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

লালমনিরহাট মুক্ত দিবস আজ

আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:৪১ AM
আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:৪১ AM

bdmorning Image Preview


আজ ৬ ডিসেম্বর সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানী হানাদারদের পরাজিত করে বিজয়ের পতাকা নিয়ে মিছিল করেন মুক্তিবাহিনীসহ জেলার মুক্তিকামী জনতা। পাকিস্তানী সরকার ২৫ মার্চ কালো রাতে বাঙ্গালীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করলে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। 

স্বাধীনতা অর্জনের চেষ্টায় জীবনবাজি রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিকামী বাঙ্গালীরা। সারাদেশের মতোই উত্তাল হয়ে ওঠে লালমনিরহাটেও। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ ও আদিতমারী অঞ্চলেও। উর্দুভাষী বিহারি অধ্যুষিত রেলওয়ে শহর লালমনিরহাট সদরে উত্তেজনা দেখা দেয়। ৮ মার্চ শহীদুল্লাহ আহ্বায়ক করে গঠিত হয় লালমনিরহাট সর্বদলীয় স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ৯ মার্চ জেলার হাতীবান্ধা ডাকবাংলোতে প্রকাশ্যে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ইঞ্জিনিয়ার নজরুল ইসলাম ও সোহরাব উদ্দিন মাষ্টার। একই দিন লালমনিরহাট সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের পুরাতন গেটের সামনে শহীদ মিনারে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্যরা সম্মিলিতভাবে পতাকাটি উত্তোলন করেন। উর্দুভাষী বিহারিরা দল বেঁধে এসে পতাকা নামিয়ে শহীদ মিনারটি গুড়িয়ে দেয়। এতে উত্তেজনা আরও বাড়তে থাকে।

লালমনিরহাট থেকে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবুল হোসেনকে আহ্বায়ক করে ১৫ মার্চ সর্বদলীয় স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদের লালমনিরহাট থানা কমিটি গঠন করা হয়। ২৩ মার্চ জিন্নাহ (বর্তমান নাম শহীদ সোহরাওয়ার্দী) মাঠে জনসভার ডাক দেয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর ২৭ মার্চ দুপুরে লালমনিরহাটের শাহজাহান মিছিল নিয়ে রেলওয়ের আপইয়ার্ড কলোনি পার হওয়ার সময় পাকিস্তানিদের সঙ্গে গোলাগুলি শুরু হয়। পাকিস্তানি ইপিআর জিয়াউল হকের গুলিতে বিকালে মারা যান শাহজাহান। পাকিস্তানিদের গুলিতে প্রথম শহীদ শাহজাহানকে বাড়ির পাশে দাফন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে লালমনিরহাটে ১০ জন, আদিতমারীতে ২ জন, কালীগঞ্জে সাত জন, হাতীবান্ধায় ৯ জন ও পাটগ্রামে ১ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম পাওয়া গেলেও অসংখ্য শহীদের লাশের সন্ধান আজও  পাওয়া যায়নি। 

৩ ও ৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর প্রবল আক্রমণ চালালে ৫ ডিসেম্বর হাতীবান্ধা মুক্তিবাহিনীর দখলে চলে আসে। মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে আগে থেকেই পাটগ্রাম ছিল মুক্তাঞ্চল। অবশ্য, ১০ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধাদের এবং সেক্টর কমান্ডার এম, খাদেমুল বাশারের খোঁজ-খবর নিতে এবং মনোবল সৃষ্টি করতে বুড়িমারী হাসর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসেন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহমেদ। সেপ্টেম্বর মাসে পরিদর্শনে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের সংসদীয় দলের সদস্যরা। উত্তাল মুক্তিযুদ্ধের একপর্যায়ে ৫ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ ও আদিতমারীতে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর মারাত্মক আক্রমণ চালায় মুক্তিবাহিনী। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ৬ ডিসেম্বর ভোর ৫টার দিকে বিকট শব্দে তিস্তা ব্রিজের পশ্চিম পাড়ের কিছু অংশ উড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা রংপুর ক্যান্টনমেন্টের দিকে পালিয়ে যায়। ফলে ৬ ডিসেম্বর লালমনিরহাট জেলা মুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য শহীদ ক্যাপ্টেন তমিজ উদ্দিন বীর বিক্রম ও ক্যাপ্টেন (অব.) আজিজুল হক বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হন। 

লালমনিরহাট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সাংসদের কমান্ডার মেজবাহ উদ্দিন আহমদে বলেন, এখন পর্যন্ত অনেক গণকবর চিহ্নিত হয়নি। এসব গণকবর চিহ্নিত করার জন্য সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। এই ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধারা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে। সরকারি ও বে-সরকারিভাবে দিবসটি লালমনিরহাট জেলা সদরে পালন করা হলেও জেলার অন্যান্য উপজেলায় দিবসটি পালিত হয় না। দিবসটি সারা জেলায় পালনে কার্যকরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

Bootstrap Image Preview