একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঋণখেলাপি প্রার্থীদের চিহ্নিত করতে বিশেষ সিআইবি সেল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সেল ২৯ নভেম্বর থেকে প্রার্থীদের ঋণ সংক্রান্ত তথ্য যাচাই শুরু করে। এ বাছাই পর্ব শেষে শনিবার দুপুর পর্যন্ত ৪১ জন খেলাপিকে শনাক্ত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঋণখেলাপিদের ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগ নিলেও আগেই ঋণখেলাপিদের ছাড় দিয়ে নিয়মিত করে দিয়েছে ব্যাংকগুলো।
বিশেষ করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রভাবশালী প্রার্থী নানাভাবে সংশ্লিষ্টদের ‘ম্যানেজ’ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তাদের খেলাপি ঋণ নবায়ন করে নিয়েছেন।
ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুসারে সর্বোচ্চ ৩ বার যে কোনো গ্রাহক পুনঃতফসিল সুবিধা নিতে পারেন। এজন্য নীতিমালা রয়েছে। ন্যূনতম পরিমাণ অর্থ নগদ (ডাউনপেমেন্ট) পরিশোধ করতে হয়।
ওই নীতিমালা অনুসারে প্রথমবার পুনঃতফসিলের জন্য বকেয়া কিস্তির ১৫ শতাংশ বা মোট পাওনা ১০ শতাংশের মধ্যে যেটি কম সেই পরিমাণ নগদ অর্থ জমা দিতে হয়।
দ্বিতীয়বার করতে হলে বকেয়া কিস্তির ৩০ শতাংশ বা মোট পাওনার ২০ শতাংশের মধ্যে যেটি কম, তৃতীয়বার পুনঃতফসিলের জন্য বকেয়া কিস্তির ৫০ শতাংশ বা মোট পাওনার ৩০ শতাংশের মধ্যে যেটি কম সেই পরিমাণ নগদ অর্থ জমা দিতে হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নভেম্বরের শুরু থেকেই নির্বাচনে অংশ নিতে ব্যাংকগুলোতে পুনঃতফসিলের হিড়িক পড়ে। ৮ থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ২০৫টি আবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আসে।
এছাড়া মনোনয়নপত্র দাখিলের পর অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের পর আরও ১৫ জন পুনঃতফসিলের আবেদন করেন। এই আবেদনগুলো বিশেষ বিবেচনায় অনুমোদন দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সব ঋণগ্রহীতার তথ্য সংরক্ষিত থাকে। নির্বাচনে ঋণখেলাপিরা অংশ নিতে পারেন না। তাই প্রার্থীরা ঋণখেলাপি নন এমন সনদপত্র সিআইবি থেকে নিয়ে নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করতে হয়। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রার্থীদের তথ্য যাচাই করে থাকে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে প্রায় ১২ হাজার মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে বড় দুই দলের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন প্রায় ৯ হাজার প্রার্থী।
বাকিরা কিনেছেন অন্যান্য মাঝারি ও ছোট দল থেকে। এদের প্রায় অর্ধেকেরও বেশি প্রার্থী বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণখেলাপি। আর কোনো ব্যক্তি এক টাকা ঋণখেলাপি থাকলেও নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের প্রায় অর্ধশত ঋণখেলাপি প্রথমে খেলাপিমুক্ত হওয়ার জন্য যোগাযোগ করেন। এমনকি কেউ কেউ দরকষাকষি পর্যন্ত করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাত্র ২০ থেকে ২৫ জন খেলাপি পুনঃতফসিলের জন্য আবেদন করেন।
সূত্র জানায়, এবারের নির্বাচনে ২৫ জন প্রার্থী ঋণখেলাপি জনতা ব্যাংকে। এর মধ্যে চূড়ান্তভাবে ২০ জন পার পেলেও বাকি ৫ জন আটকা পড়ার সম্ভাবনা আছে।
অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শামস উল ইসলাম বলেন, যাচাই-বাছাইয়ে শুক্রবার পর্যন্ত ১১ জন খেলাপি বাদ পড়েছেন। শুধু একজন খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করে নিয়মিত হয়েছেন।
এছাড়া ৭ থেকে ৮ জন ঋণখেলোপিকে পুনঃতফসিলের অনুমোদন দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আতাউর রহমান প্রধান যুগান্তরকে বলেন, আলোচনা অনেকে করেছেন। বাছাইপর্বে কিছু খেলাপি বাদ পড়তে পারে।