সিলেট মৌলভীবাজার দুই জেলার সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত এক গ্রাম শেরপুরে গড়ে উঠছে শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল। এখানে স্থাপিত কারখানার উৎপাদিত পণ্য প্রায় শতভাগই বিদেশে রপ্তানি করা হবে। এখানকার উদপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে প্রতি বছর ৩৫২ কোটি ৬৯ লাখ ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা) এবং বিনিয়োগকারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়,এইখানে স্থাপিত উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ৪৪ হাজার বেকার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
বেজা জানায়, সিলেট, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ এই তিন জেলা বেষ্টিত মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুর গ্রামে মোট ৩৫২ একর জমি নিয়ে শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এখানে শিল্প স্থাপনের জন্য এখন পর্যন্ত মোট ৬টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গ্রুপকে ইতোমধ্যেই জমি বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে।
এই শিল্প গ্রুপগুলো ২৫টি কারখানা গড়ে তুলতে বিনিয়োগ করবে প্রায় ১৪০ কোটি ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা! এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে মোট ২৩১ একর জমি বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে । জেলা প্রশাসকসূত্রে জানা যায়,শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্ধ দেয়া জমি ছাড়া অবশিষ্ট যে জমি থাকবে তাতে শিল্পাঞ্চলের অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি বনায়নের কাজ করা হবে। এ ছাড়াও এই জায়গায় তৈরি করা হবে দৃষ্টিনন্দন একটি পর্যটনকেন্দ্র।এখানে ডিবিএল গ্রুপের ফ্লামিঙ্গো ফ্যাশন ২০টি কারখানা করার জন্য ১৭০ একর জমি বরাদ্ধ পেয়েছে। ডিবিএল গ্রুপ এই জায়গায় বিনিয়োগ করবে মোট ১১৮ কোটি মার্কিন ডলার । শুধু মাত্র এই গ্রুপের গড়ে তুলা শিল্পকারখানাতেই কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে প্রায় ৩৮ হাজার ৪০০ জন বেকার যুবক-যুবতীর!এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত সব পণ্য রপ্তানি করা হবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ডিবিএল গ্রুপটির বার্ষিক রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৩৩৩ কোটি মার্কিন ডলার।
৫ কোটি ৪৮ লাখ ডলার বিনিয়োগ করে ৭ একর জমি বরাদ্ধ পেয়েছে আয়েশা ক্লথিং নাম একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান।আর তাদের শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাজ করবে প্রায় ২১০০ জন মানুষ। এই শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে বছরে আয় করবে ৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
এ ছাড়া এখানে আসওয়াদ কম্পোজিট মিল ৭ একর, গ্রেটওয়ালস সিরামিক ২৫ একর, ডাবল গ্লেজিং ৩ একর এবং আবদুল মোনেম সিরামিক্স ২১ একর জমি বরাদ্ধ পেয়েছে। প্রস্তাবনা অনুযায়ী একমাত্র গ্রেটওয়াল কোম্পানির উৎপাদিত পণ্যই কেবল মাত্র দেশে বিক্রি করতে পারবে। আর বাকি সব শিল্প প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করবে।
বেজা কর্মকর্তারা জানান, পরিকল্পনানুযায়ী চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকেই শিল্প স্থাপনের কাজ শুরু করবে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো! তবে আমরা আশা করছি আগামী বছরের জুন মাস নাগাদ প্রতিটি শিল্প প্রতিষ্ঠানই তাদের নিজস্ব কারখানায় তাদের পণ্য উৎপাদন শুরু করতে পারবে!
বেজার চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী জানান,প্রায় শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্প হবে শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল।ইতোমধ্যে ১৪০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাবও পাওয়া গেছে। বিদ্যুৎ গ্যাস সংযোগের কাজও খুব দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।ইতোমধ্যে অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজও দ্রুত গতিতে চলছে! তিনি বলেন,আশা করছি, যথাসময়েই এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
তরুণ সমাজকর্মী তারিক হাসান বলেন,এটা অত্যান্ত আনন্দের সংবাদ,আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বেকারত্ব আর এই বেকারত্বের কারণে সমাজে অন্যায়,দুর্নীতি এমনকি চুরি-ছিনতাই দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে!আর আমাদের এলাকায় এই বিশেষ অঞ্চল অর্থাৎ শ্রী হট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে এলাকার প্রচুর বেকার ছেলে-মেয়ের কর্মসংস্থান সৃস্টি হবে!এটা নিশ্চই আমাদের মৌলভীবাজার জেলা তথা সমস্ত সিলেট বাসীর জন্য সুখবর! অত্র অঞ্চলে কারখানাগুলো চালু হওয়ার পর স্থানীয়দের বেকারত্ব কমে যাবে।
গ্যাস সংযোগ দিতে জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানিও কাজ শুরু করে দিয়েছে। গ্যাসভিত্তিক শিল্পের জন্য শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলই হবে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট স্থান। বিদ্যুতায়নের কাজও চলছে।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট কামাল হোসেন জানান,আমরা দীর্ঘদিন ধরে সিলেটে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছিলাম।এ বিশেষ শিল্প অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হলে সমস্ত সিলেট বিভাগে শিল্পের প্রসার ঘটবে পাশাপাশি প্রবাসী অধ্যুষিত এ এলাকার প্রবাসীরাও বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে ওঠবে বলে জানান তিনি।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম জানান, মাটি ভরাটের কাজ অনেকটাই এগিয়ে গেছে।বেজার মাধ্যমে অধিগ্রহণ করা জায়গা ইতোমধ্যে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানকে লিজ দেওয়া হয়েছে।শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো চালু হলে এই অঞ্চলের প্রচুর যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।বিদেশিরা বিনিয়োগ করবেন, পাশাপাশি দেশি বিনিয়োগও বাড়বে। তিনি আরো বলেন প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের যে কয়টি রাজ্য সিলেটের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে,তারা যদি বিনিয়োগ করতে চায়, তা হলে আমরা একটি বড় মার্কেট পেতে পারি।আমাদের সব কাজই প্রায় শেষদিকে। সব কিছুই আমরা প্রায় গুছিয়ে নিয়েছি।