জঙ্গি কর্মকাণ্ডে অর্থায়নের অভিযোগে বিচারাধীন থাকা ব্যারিস্টার সাকিলা ফারজানাকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেওয়া বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জঙ্গি পৃষ্টপোষকতার পরে তারা জঙ্গিকে মনোনয়ন দিবে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
বুধবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভাপতির শেখ হাসিনার ধানমন্ডি রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে বিচারাধীন সাকিলা ফারজানাকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেওয়াকে কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, জঙ্গি বলেই মনোনয়ন পেয়েছেন, জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অনেকেই তাদের মনোনয়ন পেয়েছেন। এখনও তারা ঘোষণা করেন নি, তবে এ্টাই স্বাভাবিক ব্যাপার যে এরা মনোনয়ন পাবে। বিএনপি জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক এটা আমরা অনেক দিন আগে থেকে বলে আসছি। এই পৃষ্টপোষকতার পরে তারা জঙ্গিকে মনোনয়ন দিবে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবেন না বিষয়টি আওয়ামী লীগ কিভাবে দেখছে জানতে চাইলে কাদের বলেন, আমি জানি না কি কারণ, তবে কারণ তো আছে। সে কারণটা সত্যই। সেটা সময় মত প্রকাশ হবে। আর কামাল হোসেনকে তো ঐক্য ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা বলা হচ্ছে। কিন্তু কে তাদের প্রধানমন্ত্রী হবেন? এই প্রশ্নটার উত্তর আজও জানা যায়নি। মানুষ স্বাভাবিক কারণে মনে করেছিল ড. কামাল হোসেন পি এম ফেইস। মানুষের সে ধারণা অবসান হলো। এখন কে ঐক্যফ্রন্টের পিএম ফেইস এটা আবারও জানতে ইচ্ছে করছে। একটা দল ,একটা জোট নির্বাচন করছে , সামনে কে কে লিড দিচ্ছে। কোন ফেইস টাকে কেন্দ্র করে দেশের মানুষ পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন দেখছে, সে কথা আজও জানা গেল না।
হাইকোর্টের রায়ের পর বিএনপি চেয়ার পার্সন খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশ গ্রহন করতে না পারার সম্ভাবনা রয়েছে এই প্রসঙ্গে হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়ে কাদের বলেন, আমাদেরও তো আছে, আমরা আগে ভাগে আঁচ করতে পেরে কক্সবাজারের বদির মত অনেককেই মনোনয়ন দেই নি। হাইকোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানাই। আপিল বিভাগও এই সিদ্ধান্তে অটল, এই ব্যপারে আমরা স্বাগত জানাই।
এতে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হতে পারে কি না জানতে চাইলে কাদের বলেন, হ্যাঁ করতেই পারে। কারণ তারা তো নির্বাচনের এক মাস আগেও প্রধান নির্বাচন কমিশনের পরিবর্তন চায়। এ ধরনের দাবি কি কোন ভাবে যৌক্তিক? এ ধরনের দাবি উত্থাপনের অর্থ হচ্ছে- নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে তাদের যে প্রার্থীতা মনোনয়ন দিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে একটা প্রশ্ন থেকে যায় তারা কি আসলে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে চায় না কি নির্বাচন বানচাল করতে চায়।
সাত দশ বছরের দণ্ড নিয়ে বেগম জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না এটা আদালত রায় দিয়েছে। আদালতের রায়কে তো নির্বাচন কমিশন মানতে হবে।”
নির্বাচন পরিচালনার জন্যই পাঁচ শীর্ষ নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে কাদের বলেন, আমাদের শীর্ষ নেতাদের নির্বাচনের বাইরের রাখার বিষয়টি ক্লিয়ার হওয়া উচিত। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার জন্য আওয়ামী লীগের পাঁচ শীর্ষ নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। আমাদের নির্বাচন পরিচালনার জন্য দক্ষ এবং অভিজ্ঞ যে নেতৃত্ব, তারা সাধারণত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতো। কিন্তু এবার আমাদের নেত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভারতের বিজিপিসহ অনেক রাজনৈতিক দলের মত এই শীর্ষ নেতাদের নির্বাচনের বাইরে রেখেছেন।
আমাদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, জাহাঙ্গির কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে থাকবেন। এই ব্যাপারে গতকাল তাদের আমাদের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী ডেকে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন, আরও দেবেন। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সবাই নির্বাচন করে না ভারতের অনেকেই কিন্তু দলকে সহযোগিতা করার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে না।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, আমাদের যারা মাঠে আছেন, প্রার্থিতা জমা দিয়েছেন, প্রত্যাহারের আগেই যাদের মনোনয়ন দিবো তারা ছাড়া অন্যদের প্রত্যাহার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আমরা তাদেরকে বুঝাবো। তারা অবশ্যই ত্যাগ স্বীকার করবেন। এরপরও প্রত্যাহার পর্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমাদেরকে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। কেউ বিদ্রোহ করলে বহিস্কার হবে এটা আমরা আগেও বলেছি।
জামায়াত এখন ঐক্যফ্রন্টের অংশ দাবী করে কাদের বলেন, কাজেই জামায়াত কাকে মনোনয়ন দিলো, ঐক্যফ্রন্ট কাদের দিলো,এটা তাদের আদর্শের বিষয়। আমাদের দল থেকে আমরা এরকম কাউকে মননোয়ন দেইনি। আমাদের মনোনয়ন ২৩১টি দিয়েছি। এর মধ্যে ৪৫জন নতুন মুখ আছে। কিছু তরুণদের এবার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এখন মনোনয়ন প্রত্যাহার পর্যন্ত সমীকরণ কোথায় গিয়ে ঠেকে অপেক্ষা করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুস সবুর, শিক্ষা ও মানব সম্পদ সম্পাদক সামসুন্নাহার চাপা, উপ দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম কামাল হোসেন, আনোয়ার হোসেন, মারুফা আক্তার পপি প্রমুখ।