একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
এদিকে অসুস্থতার কারণে আজকের মতিঝিলে তার চেম্বারে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক থাকলেও সেটি বাতিল করা হয়েছে। ড. কামালের ব্যক্তিগত চিকিৎসক এই মুহূর্তে তাকে পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে বলেছেন।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, ড. কামালের হাতে ও পায়ে ব্যথা। তার শরীরে জ্বরও রয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ডায়রিয়া।
তিনি জানান, দলীয় নেতারা দুপুরে দেখা করতে বেইলি রোডে ড. কামাল হোসেনের বাসায় গিয়েছিলেন। কিন্তু অসুস্থ থাকায় তিনি দেখা করতে পারেননি।
নির্বাচন প্রসঙ্গে এ প্রতিবেদককে ড. কামাল বলেন, আমার নির্বাচনে অংশ নেয়া বড় কথা নয়। দেশে ভারসাম্যের নীতি প্রতিষ্ঠা পাক। আমরা একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা বলে আসছি। নির্বাচনে কে হারলো, কে জিতলো সেটা বড় কথা নয়, দেশের মালিক জনগণ, তারা যেন নিজেদের পছন্দ মতো ভোট দিতে পারে সেটাই বড় কথা।
প্রসঙ্গত, কামাল হোসেন বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট আইনজীবী, রাজনীতিবিদ এবং মুক্তিযোদ্ধা। সচরাচর তাকে ‘ড. কামাল হোসেন’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। তিনি বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতাদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৭১-এ তিনি আগরতলা সীমান্ত পার হয়ে ভারতে গেলেও মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের পরিবর্তে পাকিস্তান গমন করেন এবং সেখানে আইন ব্যবসায় শুরু করেন। কয়েক মাস পর পাকিস্তান সরকার তাকে গ্রেফতার করে।
১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ২০ এপ্রিল তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জুরিসপ্রুডেন্সে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে ব্যাচেলর অব সিভিল ল ডিগ্রি লাভ করেন। লিংকনস ইনে বার-অ্যাট-ল অর্জনের পর আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ে পিএইচডি করেন ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে । আইনজীবি সারা হোসেন তার কন্যা।
ড. কামাল হোসেন বাংলাদেশের সংবিধানের প্রণেতা হিসেবেই অধিক পরিচিত। রাজনীতিতে তিনি ছিলেন সবসময়ই সোচ্চার। ১৯৭০ সালের পাকিস্থানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান রচনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭২-এর ৮ই জানুয়ারি শেখ মুজিবের সঙ্গে ড. কামাল হোসেনকেও মুক্তি দেয়া হয়। তিনি শেখ মুজিবের সঙ্গে ১০ জানুয়ারি লন্ডন হয়ে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি সর্বদাই সোচ্চার। তাকে ব্যক্তিগত সততা, ন্যায্যতা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রবক্তা হিসাবে সাধারণভাবে সম্মান করা হয়।
১৯৭২ সালে আইনমন্ত্রী এবং ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ড. কামাল হোসেন জাতিসংঘের স্পেশাল রিপোর্টারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় রয়েছেন। তিনি গণফোরাম নামের রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।