Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ রবিবার, মে ২০২৪ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

আজ ভয়াল ১২ নভেম্বর  

মো: জামশেদুর রহমান, সেনবাগ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর ২০১৮, ০১:৩৬ PM
আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৮, ০১:৩৬ PM

bdmorning Image Preview


আজ ভয়াল ১২ নভেম্বর। ইতিহাসের শোকাবহ দিন। ১৯৭০ এই দিনেই নোয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলের ১৮টি জেলার উপকূলবাসীর জীবনে নেমে এসেছিল এক ভয়ঙ্কর দুর্যোগ। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় গোর্কী ও জলচ্ছ্বাসে লন্ড-ভন্ড হয়ে যায় উপকূলীয় অঞ্চল। ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয় বিস্তীর্ণ জনপদ।

১২ নম্বর বিপদ সংকেতের পর পরেই প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় নিমিষেই স্রোতের তোড়ে ভেসে যায় নোয়াখালীর উপকূলীয় কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্ণচর ও হাতিয়া উপজেলার চরাঞ্চালের মানুষ, গবাধি পশু, বাড়ি-ঘর এবং মাঠের সোনালী ফসল। পুরো উপকূলীয় অঞ্চল যেন বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছিল। নিহত হয় কয়েক লাখ মানুষ। অনেক লাশ কাফন ছাড়াই দাফন হয়েছিল। অনেকের লাশ জোয়ারে ভেসে যায় দূর-দূরান্তে।

কোথাও কোথাও মানুষ, গবাদি-পশুর লাশ একই গর্তে পুঁতে ফেলা হয়েছিল। প্রলয়ঙ্করী সেই ঝড়ে অনেক পরিবার বংশ শূন্য হয়ে যায়, আবার কারও পরিবারের দু-একজন বেঁচে থাকেন গাছের ডাল-পালা। সেই জলচ্ছ্বাসের কয়েকযুগ পার হলেও এখন পর্যন্ত স্বজন হারানোদের কান্নায় উপকূলের আকাশ বাতাশ ভারী হয়ে উঠে।

জানা গেছে, দেশে এ যাবৎ যে কয়টি ঘুর্নিঝড় হয়েছিলো তার মধ্যে ৭০ এর ঝড়টি ছিলো সবচেয়ে ভয়াবহ ও হিংস্র ছিল। ৭০ এর ঝড়টি উপকূলীয় নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, হাতিয়া, সন্ধীপে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এছাড়াও পাশ্ববর্তী বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, বাগেরহাট, খুলনাসহ দক্ষিনাঞ্চলের প্রায় ১৮টি জেলায় আঘাত হানে।

উপকূলীয় জেলাগুলোর মধ্যে বেশী ক্ষয় ক্ষতি হয়েছিল নোয়াখালী ও ভোলা। তৎকালীন সময়ে তথ্যপ্রযুক্তি অনেকটা দুর্বল থাকায় উপকূলের বহু মানুষ ঝড়ের পূর্বাভাস পাননি। এ সময় জলচ্ছ্বাস হয়েছিল ১০ থেকে ১৪ ফুট উচ্চতায়।কেউ গাছের ডালে,  কেউ আবার উঁচু ছাদে আশ্রয় নিয়ে কোনো রকম প্রাণে রক্ষা পেলেও ৩/৪ দিন পর্যন্ত তাদের অভুক্ত কাটাতে হয়েছিল।

সম্প্রতি জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) বিশ্বের পাঁচ ধরনের ভয়াবহ প্রাণঘাতি আবহাওয়া ঘটনার শীর্ষ তালিকা প্রকাশ করে। ওই তালিকায় বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়টিকে পৃথিবীর সর্বকালের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণঘাতি ঝড় হিসেবে উল্লেখ করা হয়। অন্যদিকে উইকিপিডিয়ার সূত্র বলছে, এ পর্যন্ত রেকর্ডকৃত ঘূর্ণিঝড় সমূহের মধ্যে ৭০ এর ঝড়টি সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্নিঝড়।

তরুন লেখক ও আঞ্চলিক গবেষক এএসএম ইউনুছ জানান, ৭০ এর ঘূর্ণিঝড়ে এই চরাঞ্চালের প্রায় এক তৃতীয়াংশ জনপদ লন্ড-ভন্ড হয়ে যায়। স্বাধীনতার পর এক এক করে ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও কান্না থামেনি উপকূলীয় এলাকার স্বজন হারা মানুষের। শুধু ১২ই নভেম্বর এলে নিহতদের স্বজনদের উদ্যেগে পালন করা হয় স্মরনসভা। আর বাইরে আর কোন কার্যক্রম দেখা যায়। সে দিন স্বজন হারাদের খবরও কেউ রাখেনা।  

Bootstrap Image Preview