Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৪ মঙ্গলবার, মে ২০২৪ | ৩১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পার্লামেন্ট ভেঙে দিলেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা, নির্বাচন ৫ জানুয়ারী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০১৮, ০৭:৫৯ PM
আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:০২ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে দেশটিতে আগাম নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন। শুক্রবার এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপনে তিনি সাক্ষর করেছেন বলে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

দেশটিতে শুরু হওয়া সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই মেয়াদ পূর্তির দুই বছর আগেই দেশটির পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারী সংসদ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছেন সিরিসেনা। মূলত সিরিসেনার নেতৃত্বাধীন জোট দেশটির সংসদে সংখাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবে না এ শঙ্কায় সংসদ ভেঙে দিলেন তিনি। সিরিসেনার সাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপন শুক্রবার মধ্যরাত থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।

শুক্রবার প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার এমন সিদ্ধান্ত দেশটির চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় নতুন মাত্রা যোগ করলো। গত মাসে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহকে পদচ্যুত করে সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজপাকসেকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়ার পর এ অস্থিরতা শুরু হয়।

পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহের দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ই্উএনপি) সিরিসেনার সংসদ ভেঙে দেয়ার এমন সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে। তারা জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের জন্য প্রেসিডেন্ট সিরিসেনাকে দায়ী করেছেন। বিক্রমসিংহের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য সংসদে পুনরায় ভোট করার আহ্বান জানিয়েছে দলটি।

উল্লেখ্য, গত ২৬ অক্টোবর শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে বিক্রমসিংহকে বরখাস্ত করেন। ওই দিন রাতেই তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসেকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে মন্ত্রিসভা ভেঙে দেন।

বরখাস্তের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে ২৭ অক্টোবর পার্লামেন্টের জরুরি অধিবেশন ডাকেন বিক্রমসিংহ। সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্য তার পক্ষে রয়েছেন দাবি করে তিনি এ অধিবেশন ডাকেন। বিক্রমসিংহের এ দাবির পর পার্লামেন্টের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন সিরিসেনা। এরপর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পার্লামেন্টের অধিবেশন ১৬ নভেম্বর থেকে এগিয়ে ৫ নভেম্বর পুনর্নির্ধারণ করলেও পরে তা পিছিয়ে দেন তিনি।

কেননা দেশটির সংসদে মোট ২২৫ টি আসনের মধ্যে এখনো বিক্রমসিংহের প্রতি সমর্থন রয়েছে ১০৫ জন সংসদ সদস্যের।

এদিকে ঘটনার পর পার্লামেন্টে ১৫ সংসদ সদস্য থাকা সংখ্যালঘু তামিল ন্যাশনাল অ্যালাইন্স বিক্রমসিংহকে সমর্থনের ঘোষণা দেয়। রাজাপাকসের বিরুদ্ধে সংসদে অনাস্থা ভোট পাশ করতে হলে প্রয়োজন হতো ১১৩টি ভোটের। এরকম পরিস্থিতিতে মূলত দল আর নিজের মনোনীত প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসেকে বাঁচাতেই পার্লামেন্ট ভেঙে দিলেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা।

নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগে ইউপিএফএ-র মুখপাত্র কেহেলিয়া রামবুকওয়েলা জানান, পার্লামেন্টে ১০৪ থেকে ১০৫ সদস্যের সমর্থন নিশ্চিত করতে পেরেছেন তারা। বিক্রমসিংহের পক্ষের সাংসদদের কেউ কেউ তাদের সমর্থন দেবেন বলেও সেসময় আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন তিনি।

এর কিছুক্ষণ পরই আকস্মিক এক ঘোষণায় পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করে নতুন নির্বাচনের ঘোষণা আসে। সিরিসেনার এ পদক্ষেপের সমালোচনা এসেছে শ্রীলঙ্কান বামপন্থি পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টের (জেভিপি) কাছ থেকেও।

“এই মুহুর্তে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া পুরোপুরি অবৈধ এবং সংবিধানবিরোধী,” বলেছেন জেভিপির সাধারণ সম্পাদক তিলভিন সিলভা। রাজনৈতিক সংকট দেশটির প্রশাসনকেও পঙ্গু করে রেখেছে বলে আগেই জানিয়েছেন উভয় পক্ষের সাংসদরা।

সিরিসেনার ঘোষণার আগে শুক্রবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভারত মহাসাগরের এ দ্বীপরাষ্ট্রটিতে দুই সপ্তাহ ধরে চলা সংকটে ‘গভীর উদ্বেগ’ জানায়। নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে তারা পার্লামেন্ট চালু করে দ্রুত নির্বাচন দিতেও বলে। 

“দেরি হলে তা শ্রীলঙ্কার আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি নষ্ট করবে এবং বিনিয়োগে ধস নামাবে,” বলে ইইউ।

এর আগে বৃহস্পতিবার বিক্রমসিংহ এক ভিডিও বার্তায় সিরিসেনার একের পর এক ‘অবৈধ’ পদক্ষেপের বিরোধিতায় রাস্তায় থাকায় সমর্থকদের ধন্যবাদ জানান। 

“আপনারা নিশ্চয়ই এ দেশকে স্বৈরাচারের কালো অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে দেবেন না। বিপুল সংখ্যক মানুষ অনিঃশেষ সাহস নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছে। আপনারা মুখ খুলেছেন। গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় এই উদ্যমী চেষ্টার জন্য আমি আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ দিতে চাই,” বলেন এ ইউএনপি নেতা।

Bootstrap Image Preview