Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৭ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক লিয়াকত ও আমিনুলের ফাঁসির আদেশ

আজিজুল ইসলাম সজীব, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৬ নভেম্বর ২০১৮, ১১:৪৭ AM
আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৮, ১১:৪৭ AM

bdmorning Image Preview


একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক সাবেক মুসলিম লীগ নেতা হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার মো. লিয়াকত আলী (৬১) ও কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার আমিনুল ইসলাম (৬২) ওরফে রজব আলীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।

গতকাল সোমবার এ রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ। ট্রাইব্যুনালের অন্য বিচাপতিরা হলেন- বিচারপতি আমির হোসেন ও সদ্য বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার।

রায় ঘোষণার সময় আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলার প্রসিকিউটর ছিলেন রানা দাশগুপ্ত ও রেজিয়া সুলতানা চমন। পলাতক দুই আসামির পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী ছিলেন গাজী এমএইচ তামিম।

রায়ে ফাঁসির আদেশের পাশাপাশি পলাতক এই দুই আসামিকে গ্রেফতার জন্য পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)-কে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

দণ্ডিত দুই আসামির মধ্যে হবিগঞ্জের লাখাই থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. লিয়াকত আলী একাত্তরে স্থানীয় রাজাকার কামান্ডার ছিলেন। আর কিশোরগঞ্জের আমিনুল ইসলাম ছিলেন ওই এলাকার অল-বদর বাহিনীর নেতা। 

রায়ের পর প্রসিকিউটর রানাদাস গুপ্ত জানান, একাত্তরে হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, গণহত্যার মত মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত থাকার দায়ে পলাতক দুই আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় এসেছে আদালতে। রায়ে দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগিতায় তারা বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান তা উঠে এসেছে।

রায়ে বলা হয়, আসামিদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা সাতটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে। মৃত্যু পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাদের সাজা কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

এই রায়ের এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ পাবেন আসামিরা। তবে সে জন্য তাদের আত্মসমর্পণ করতে হবে।

গত ১৬ আগস্ট এ মামলার শুনানি শেষ করে যেকোনো দিন রায় ঘোষণা করা হবে মর্মে সিএভি (অপেক্ষমাণ) রাখেন আদালত। মামলার তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ১৮ মে এ দু’জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। সেই থেকে তারা পলাতক রয়েছেন।

বর্তমানে লাখাই উপজেলার এক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মুসলিম লীগের সাবেক সভাপতি মো. লিয়াকত আলী। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তারা দু’জনে পাশাপাশি তিন জেলার (হবিগঞ্জ জেলার লাখাই, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে) বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ করেছেন। মামলায় দুইজনের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও লুটপাটের ৭ অপরাধের অভিযোগ আনা হয়।

এদিকে হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার মো. লিয়াকত আলীর ফাঁসিরদণ্ডা দেশে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও পলাতক থাকায় খুশি নন এলাকাবাসী। তাদের দাবি এই সরকারে অন্যতম নির্বাচনী ওয়াদা ছিলো একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ সম্পন্ন করা। এই পর্যন্ত প্রায় সকল শীর্ষ যুদ্ধপরাধীর বিচার হয়েছে, অনেকের মৃত্যুদণ্ডও কার্যকর হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাজাকার লিয়াকত আলীসহ দুই আসামির মৃত্যুদণ্ডা দেশ হয়েছে। কিন্তু তারা দুজনেই এখন পর্যন্ত পলাতক রয়েছে।  

এলাকাবাসী বলছেন- যদি আসামিরা পলাতক থাকে তাহলে এ রায়ের কোন মূল্য নেই। এই রায় দেয়া আর না দেয়া সমান কথা। দ্রুত আসামিদের গ্রেফতারর করে ফাঁসির আদেশ কার্যকর করার দাবি তাদের। 

এ ব্যাপারে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অমরেন্দ্র রায় বলেন- ‘দুই রাজাকারের ফাঁসি হওয়ায় আমরা অনেক খুশি। কিন্তু তারা দুজনেই পলাতক থাকায় সেই খুশি অনেকটাই অম্লান। তাই দ্রুত তাদেরকে গ্রেফতার করে ফাঁসি কর্যকরের দাবি জানাচ্ছি।’

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদী হরি দাশ রায় বলেন, ‘রাজাকার আলবদরের সহযোগিতায় ১২৭ জনকে হত্যা করেছে। সরকার সুযোগ তৈরি করেছে বলেই আমি মামলা করেছি। আমরা বিচারে খুশি কিন্তু আাসামিরা গ্রেফতার না হওয়ায় অনেকটাই হতাশাগ্রস্থ। 

Bootstrap Image Preview