Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৭ মঙ্গলবার, মে ২০২৪ | ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

অর্থের অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না স্বর্ণপদক প্রাপ্ত রুমানার

বিক্রমজিত বর্ধন, মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ০৪ নভেম্বর ২০১৮, ০৪:৫৫ PM
আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৮, ০৪:৫৫ PM

bdmorning Image Preview


মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের মেয়ে রুমানা আক্তার শিফা (২৫)। ইতোমধ্যে গান গেয়ে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণও করেছে সে। জাতীয় পর্যায়ে সেরা কণ্ঠশিল্পী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণ করেছে রুমানা।

রুমানা মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার নোয়াগাও এলাকার মৃত হেকিম আলীর ৬ ছেলেমেয়ের মধ্যে সবার ছোট। সকলের ছোট হওয়ায় পরিবারে সকলের আদর আর সোহাগেই বড় হয়েছে সে। বিগত ২ বছর ধরে রক্তক্ষরণ জনিত বিরল এক রোগ রুমানার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে। সেই সাথে কালো আঁধারে ঢেকে গেছে তার ভবিষ্যৎ। গত ২ বছর আগে হঠাৎ একদিন লক্ষ্য করেন তার নাক ও কান দিয়ে ক্ষণে ক্ষণে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। হঠাৎ করে এমন অজানা একটি রোগ দেখে ভয় পেয়ে যান পরিবারের লোকজন।

স্বপ্ন ছিল একজন বড় সঙ্গীত শিল্পী হওয়ার। গান গেয়ে সুরের মূর্ছনায় দেশ বিদেশের দর্শকদের মাতাবেন এমনটাই ভাবতেন সারাক্ষণ। সে লক্ষেই ঘুম থেকে উঠে ভোরবেলা রেওয়াজ চালিয়ে যাওয়াটা ছিল প্রতিদিনকার রুটিন। বিভিন্ন গানের আসরে গান গেয়ে মুগ্ধ করতেন দর্শকদের। গান গেয়ে খুব অল্প সময়েই স্থানীয় সঙ্গীতাঙ্গনে বেশ ভালো একটা অবস্থান তৈরি করে নিয়েছিলেন রুমানা। প্রতিটি মুহূর্তেই ভাবতেন একদিন একজন প্রতিষ্ঠিত জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে দেশের প্রতিটা মানুষ চিনবে তাকে।

আর সে লক্ষ্য এবং স্বপ্ন নিয়েই সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন গান গেয়ে ২০১৪ সালে জাতীয় পর্যায়ে সেরা কণ্ঠশিল্পী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণ করেছে রুমানা। সব কিছু মিলিয়ে পরিবারের সাথে বেশ আনন্দেই দিন কাটছিলো তার। কিন্তু হঠাৎ অমাবস্যার অন্ধকার নেমে এলো তার জীবনে। নিজের অজান্তেই একটি জটিল বিরল রোগে আক্রান্ত হয় রুমানা। সেই থেকে বদলে যেতে থাকে তার স্বাভাবিক জীবন। ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় গানকে সঙ্গী করে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়,২ বছর আগে হঠাৎ করেই তার নাক-কান দিয়ে রক্ত ঝরা শুরু হয়। প্রথম দিকে কেবল নাক আর কান দিয়ে রক্ত ঝরলেও ঠিক এক বছর পার হতে না হতে মাথায় চুলের গোঁড়া দিয়ে রক্ত ঝরা শুরু হয়েছে। কিন্তু গত ২ মাস ধরে আবার নতুন করে চোখ দিয়ে রক্ত ঝরা শুরু হয়। কখনো ৭ দিন কখনো ১৫ দিন কখনো বা ১ মাস পর পর রক্ত ঝরে। 

এনিয়ে সিলেটসহ ঢাকার বিভিন্নস্থানে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছেন কিন্তু শুধু রোগ সনাক্ত করতেই চলে গেছে প্রায় ৪ লক্ষ টাকারও বেশি। রুমানা বাবাকে হারিয়েছেন অনেক আগেই। পরিবারে বড় ভাই বোনরা বিয়ে করে সংসারী। ভাইবোনদের অবস্থাও এতটা সচ্ছল নয় যে রুমানার চিকিৎসার জন্য খরচ করতে সক্ষম। প্রথমদিকে আর্থিক সহযোগিতা কিছু করলেও পরিবারের খরচ চালিয়ে বোনের চিকিৎসার খরচ যোগান দেওয়া তাদের কাছেও অনেক কষ্ট সাধ্যের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।মাঝে মধ্যে আমেরিকা প্রবাসী খালার কাছ থেকে কিছু আর্থিক সহযোগিতা পেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই কম।

রুমানার সাথে আলাপ কালে জানা যায়, গত ২ বছর আগে যখন তার নাক কান দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হয় তখন সে সিলেট ইবনে-সিনা হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসা নিয়ে রক্ত পড়া বন্ধ হলে বাড়ি ফিরে আসে। কিন্তু কিছুদিন পর আবার শুরু হয় রক্ত পড়া এভাবেই কখনো ৭ দিন কখনো ১৫ দিন আবার কখনো কখনো ১ মাস পর পর রক্ত ঝরতেই থাকে।

ফের একদিন নতুন করে চুলের গোঁড়া দিয়ে রক্ত ঝরা শুরু হলে স্থানীয়দের পরামর্শে ঢাকায় গিয়ে আবারো নতুন করে ডাক্তার দেখান। অনেকগুলো টেস্ট করার পরেও ডাক্তার রোগটি শনাক্ত করতে পারেনি। তাই সেই চিকিৎসক তাকে কিছুদিনের জন্য তার পর্যবেক্ষণে রাখার পরামর্শ দেন। 

ডাক্তার জানায়, কিছুদিন পর্যবেক্ষণে থাকলে হয়তো বুঝা যেতে পারে সমস্যাটা কোথায়। কিন্তু আর্থিক দিকে দুর্বল হয়ে পড়ায় বাড়ি ফিরে আসতে বাধ্য হন রুমানা আর তার মা।

গত ঈদের কিছুদিন আগে আবারো চোখ দিয়ে রক্ত ঝরা শুরু হলে চিকিৎসার জন্য ফের মায়ের সঙ্গে ঢাকায় যান এবং ডাক্তার দেখান। কিন্তু সকল ডাক্তারই তাকে মাদ্রাজে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেন।

পিতৃহীন রুমানা জানান, আর্থিক অনটনের কারণে মাকে নিয়ে তিনবেলা খেয়ে পরে বেঁচে থাকাটাই এখন কষ্টকর হয়ে পড়ছে। এমন পরিস্থিতে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করানোটা তার কাছে আকাশকুসুম কল্পনা বৈ কিছুই নয়। তাই বাধ্য হয়েই সমাজের হৃদয়বান বিত্তবান ব্যাক্তিদের সহযোগিতা কামনা করছেন রুমানা।\ একমাত্র সমাজের বিত্তবানরা আর্থিক সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসলেই কেবল রোমানাকে ভারতে নিয়ে গিয়ে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ জীবন ফিরিয়ে দেওয়া হয়তো সম্ভব। বিত্তবানদের সহযোগিতায় বেঁচে যেতে পারে একজন অসহায় মায়ের প্রিয় সন্তান, বেঁচে যেতে পারে রাষ্ট্রের মূল্যবান সম্পদ একজন প্রতিভাবান কণ্ঠশিল্পী।

রুমানা আরও জানান, আমি চাইনি আমার এই রোগের বিষয়ে কাউকে জানাতে কিন্তু এখন পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে এসেছে যে বাধ্য হয়েই সকলের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। আমি বাঁচতে চাই, আমি সুস্থ হয়ে আবারো মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে গান গেয়ে সকলের মাঝে আনন্দ বিলিয়ে দিতে চাই। সমাজের হৃদয়বান ব্যক্তিবর্গসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি আমাকে বাঁচান, আমি বাঁচতে চাই।

কান্না জড়িত কণ্ঠে রুমানার মা জানান, এমন একজনও কি নেই যে আমার প্রিয় সন্তানকে সুস্থ করতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসবে? 

দেশের বিত্তবানদের প্রতি আকুল আবেদন জানিয়ে রোমানার মা বলেন, আপনারাও কেউ সন্তানের বাবা কেউ মা। নিজের চোখের সামনে ধীরে ধীরে আমার প্রিয় সন্তানটি চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। একজন অসহায় মায়ের প্রিয় সন্তান বিনা চিকিৎসায় মরে যাচ্ছে আর অসহায় এই আমি চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করতে পারছিনা। দয়া করে আমার সন্তানকে সুস্থ করতে এগিয়ে আসুন। আমার সন্তানকে বাঁচান।
 

Bootstrap Image Preview