Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৬ সোমবার, মে ২০২৪ | ২২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

আয় সহায়তা কর্মসূচি প্রকল্পের ফরম বিতরণে 'অবৈধ' আয় 

রমজান আলী, নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ৩১ অক্টোবর ২০১৮, ১২:৫৮ PM
আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৮, ০১:০১ PM

bdmorning Image Preview


ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় হতদরিদ্র মা ও শিশুদের জন্য আয় সহায়তা কর্মসূচি (আইএসপিপি)-যত্ন প্রকল্পের ফরম বিতরণে টাকা নেওয়া হচ্ছে।

যত্ন প্রকল্পের ওয়েবসাইট (আইএসপিপিএলজিডি.জিওভি.বিডি) থেকে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীন স্থানীয় সরকার বিভাগ অতি দরিদ্রদের জন্য এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার ৪৩টি উপজেলায় এই প্রকল্প চালু হয়েছে। অতি দরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুদের সুনির্দিষ্ট সেবা গ্রহণের বিপরীতে নগদ টাকা দেওয়া হবে।

এই কর্মসূচির উপকারভোগী হচ্ছে অতি দরিদ্র পরিবারের অন্তঃসত্ত্বা নারী, পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রথম ও দ্বিতীয় শিশু এবং তাদের মা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপকারভোগীদের মধ্যে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে অর্থ প্রদান ও ক্যাশ কার্ড বিতরণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে নান্দাইলের ১২টি ইউনিয়নে।

স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, উপকারভোগীদের কাছ থেকে প্রতি ফরমে ২০০ থেকে ৩০০ শুরু করে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে সরকারি দলের নেতা, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য/সদস্যা ও তাঁদের পক্ষ থেকে নিয়োজিত করা লোকজন দিয়ে।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বরিবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে মুশুলি, সোমবার (২৯ অক্টোবর) খারুয়া ও আচারগাঁও ইউপিতে গিয়ে টাকা নেওয়ার সত্যতা পাওয়া যায়। বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে শত শত নারী নাম ওঠানোর জন্য ইউপি ভবনে ভিড় করছেন।

প্রায় ৩৫ জন নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তালিকায় নাম ওঠানোর কথা বলে তাঁদের কাছ থেকে ২০০/৩০০ থেকে ৫০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। খারুয়ায় আবুল, জলিল, ধরগাঁও গ্রামের রেহেনা বেগম ও পুষ্প আক্তারা টাকা দিয়েছে বলে জানায়। বিলকিস আক্তার (৪০), সামছুন্নাহার (৩৫) ও মো. জহিরুল ইসলাম (৪০) বলেন, তাঁদের সন্তান ও নাতিদের নাম তালিকাভুক্ত করাতে মেম্বারের বাড়িতে অথবা ইউপি সদস্য/সদস্যাদের মাধ্যমে মহিলারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকার বিনিময়ে ফরম ফিলাপ করছেন।

তাছাড়া অনেকেই ইউপিতে এসেও টাকা দিতে হয়। আরো ১০০ টাকা পরে লাগবে। একই ধরনের অভিযোগ করেছেন মুশুলি ইউপির মেরেঙ্গা গ্রামের মো. শাহজাহান ও শুভখিলা গ্রামের জহুরুল ইসলাম। ইউপি ভবনে বসে এই সেবা দিচ্ছে সেফটি নেট সেল (এসএনসি) কর্তৃপক্ষ।

এসএনসির কর্মসূচি কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সরকারি ফরমগুলো ইউপি সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা গ্রাম থেকে হতদরিদ্র উপকারভোগীদের নাম ফরমে তুলে সেগুলো আমাদের কাছে জমা দেবে। এ পর্যন্ত এক হাজার ৯০০ ফরম বিতরণ করা হয়েছে। এরমধ্যে রবিবার দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ৯৭৫টি জমা পড়েছে। আমরা এই কাজ শুরু করার আগে প্রচারণা চালিয়েছি। সে সময় বলা হয়েছে কাউকে যেন টাকা দেওয়া না হয়। আমাদের কোনো লোক টাকা নেয়নি। তবে তাঁর সামনেই কয়েকজন নারীর কাছ থেকে প্রকাশ্যে টাকা নেওয়া হচ্ছিল।

এক পর্যায়ে টাকা দেওয়া বেশ কয়েক জন নারী এ প্রতিনিধির সামনে এসে বলেন, ফরমে টাকা, জন্ম নিবন্ধনে টাকা। আবার জমা দেওয়ার সময়ও টাকা নিচ্ছে আবুল ও জলিল। এই দু'জনের খোঁজ করলে তারা পরিষদ ছেড়ে গা-ঢাকা দেন।

এ বিষয়ে জানতে মুশলী ইউপির চেয়ারম্যানের মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি বলেন, আমি তো ঢাকায়। টাকা তো নেওয়ার কথা না। কারা কেন টাকা নিচ্ছে তা এসে দেখব। এদিকে চণ্ডীপাশার ১ নম্বর ওয়ার্ডের উপকারভোগীদের নাম ফরমে তোলার জন্য ইউপি সদস্য আবদুল কাদিরের নিয়োজিত লোকজন ১০০ টাকা করে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে আবদুল কাদির বলেন, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের দিয়ে জটিল এই ফরম পূরণ করানো হচ্ছে। যদি কেউ খুশি হয়ে শিক্ষার্থীদের কাজের জন্য ১০-২০ টাকা দেয়, তাহলে সেটা কি দোষের হতে পারে? জাহাঙ্গীরপুর ইউপির ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে নারী সদস্য মোছা. আনোয়ারা খাতুনকে টাকা না দিলে উপকারভোগীদের ফরম না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

তারাপাশা, হারিয়াকান্দি গ্রামের কয়েকজন নারী বলেন, টাকা নেওয়ার পর ফরম দিচ্ছেন আনোয়ারা। তাঁকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে আনোয়ারা অস্বীকার করে বলেন, আমি টাকা নিয়েছি সামনে এসে কেউ বলতে পারবেন না।

খারুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. কামরুল হাসনাত মিন্টু বলেন, বেকার যুবকরা ফরম পূরণ করে দেওয়ার পারিশ্রমিক হিসেবে টাকা নিচ্ছে বলে শুনেছি। তবে আমার পরিষদের কেউ টাকা আদায়ের সঙ্গে জড়িত নয়। নান্দাইল সদর ইউনিয়নেও টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তবে চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, টাকা না নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তার পরও আমি দেখতেছি। 

আইএসপিপি-যত্ন প্রকল্পের দেখভালকারী নান্দাইল উপজেলা ভিত্তিক কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প। টাকা নেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। হতদরিদ্রদের একটি প্রাথমিক তালিকা করছি। এটি চূড়ান্ত কিছু নয়। ওই তালিকা একাধিকবার যাচাই-বাছাই করা হবে।

এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাদ্দেক মেহদী ইমাম বলেন, ঘটনাটি বেশ স্পর্শকাতর। এখানে কোনো ধরনের অনিয়ম সহ্য করা যাবে না।


 

Bootstrap Image Preview