Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৭ মঙ্গলবার, মে ২০২৪ | ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি 

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:৫৩ PM
আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:৫৩ PM

bdmorning Image Preview


ফরহাদ আকন্দ, গাইবান্ধা প্রতিনিধি:

শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানের ৭৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গাইবান্ধায় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

সোমবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গাইবান্ধা সন্ধানী ডোনার ক্লাবের আয়োজনে জেলা শহরের পৌরপার্কে এই কর্মসূচি পালিত হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহম্মেদ রঞ্জু, গাইবান্ধা সন্ধানীর কার্যকরী উপদেষ্টা নাহিদ হাসান চৌধুরী রিয়াদ, ইমাম হাসান রমিত ও তৌহিদুল ইসলাম বিমান, সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) নয়ন চন্দ্র রায়, সাবেক স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান বিষয়ক সম্পাদক রওশন আলম পাপুল, সদস্য কুইন আক্তার, কানিজ আক্তার কেয়া, কমলেশ রায়, দ্বীপ সরকার, কল্যাণ রায়, সাব্বির আহম্মেদ ও শারমিন আক্তার শিমু প্রমুখ।

এর আগে দুপুরে পৌর এলাকার জুম্মাপাড়া জামে মসজিদে বাদ যোহর দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য, শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান ১৯৪১ সালের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার ১০৯, আগা সাদেক রোডের ‘মোবারক লজ’-এ জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার রামনগর গ্রামে। যা এখন মতিনগর নামে পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২০ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ যে সাতজন বীরকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান “বীরশ্রেষ্ঠ” উপাধিতে ভূষিত করা হয় তিনি তাদের অন্যতম।

মতিউর রহমান ১৯৬১ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের শুরুতে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে মতিউর রহমান সপরিবারে ঢাকায় দুই মাসের ছুটিতে আসেন। ২৫ মার্চের কালরাতে তিনি ছিলেন নরসিংদীর রায়পুরার রামনগর গ্রামে। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে, পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একজন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হয়েও অসীম ঝুঁকি ও সাহসিকতার সাথে ভৈরবে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প খুললেন। যুদ্ধ করতে আসা বাঙালি যুবকদের প্রশিক্ষণ দিতে থাকলেন। তিনি দৌলতকান্দিতে জনসভা করেন এবং বিরাট মিছিল নিয়ে ভৈরব বাজারে যান। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা অস্ত্র দিয়ে গড়ে তোলেন প্রতিরোধ বাহিনী। পাক-সৈন্যরা ভৈরব আক্রমণ করলে বেঙ্গল রেজিমেন্টে ইপিআর-এর সঙ্গে থেকে প্রতিরোধ বুহ্য তৈরি করেন। ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল পাকিস্তানি বিমান বাহিনী এফ-৮৬ স্যাবর জেট থেকে তাঁদের ঘাঁটির উপর বোমাবর্ষণ করে। মতিউর রহমান পূর্বেই এটি আশঙ্কা করেছিলেন। তাই ঘাঁটি পরিবর্তন করেন এবং ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পান তিনি ও তাঁর বাহিনী।

এরপর ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল ঢাকা আসেন ও ৯ মে সপরিবারে করাচি ফিরে যান। কর্মস্থলে ফিরে গিয়ে জঙ্গি বিমান দখল এবং সেটা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তাকে তখন বিমানের সেফটি অফিসারের দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো। তিনি বিমান দখলের জন্য ২১ বছর বয়সী রাশেদ মিনহাজ নামে একজন শিক্ষানবীশ পাইলটের উড্ডয়নের দিন (২০ই আগস্ট, ১৯৭১) টার্গেট করেন। তাঁর পরিকল্পনা ছিলো মিনহাজ কন্ট্রোল টাওয়ারের অনুমতি পেয়ে গেলে তিনি তাঁর কাছ থেকে বিমানটির নিয়ন্ত্রন নেবেন। পরিকল্পনা অনুসারে অফিসে এসে শিডিউল টাইমে গাড়ী নিয়ে চলে যান রানওয়ের পূর্ব পাশে। সামনে দুই সিটের প্রশিক্ষণ বিমান টি-৩৩।

পাইলট রাশেদ মিনহাজ বিমানটি নিয়ে দ্বিতীয় বারের মত একক উড্ডয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কন্ট্রোল টাওয়ার ক্লিয়ারেন্সের পর মিনহাজ বিমানটি নিয়ে রানওয়েতে উড্ডয়নের প্রস্তুতি নিলে মতিউর রহমান সেফটি অফিসারের ক্ষমতাবলে বিমানটি থামাতে বলেন। মিনহাজ বিমানটি থামান এবং ক্যানোপি ( জঙ্গি বিমানের বৈমানিকদের বসার স্থানের উপরের স্বচ্ছ আবরন) খুলে বিমান থামানোর কারণ জানতে চান। এসময় মতিউর রহমান বিমানের ককপিটে চড়ে বসেন এবং রাশেদ মিনহাজকে ক্লোরোফর্ম দিয়ে অচেতন করে ফেলেন। জ্ঞান হারানোর আগে রাশেদ মিনহাজ কন্ট্রোল রুমে জানাতে সক্ষম হন তিনিসহ বিমানটি হাইজ্যাক হয়েছে।

বিমানটি ছোট পাহাড়ের আড়ালে থাকায় কেউ দেখতে না পেলেও কন্ট্রোল টাওয়ার মিনহাজের বার্তা শুনতে পায় এবং রাডারে বিমানের অবস্থান বুঝে অপর চারটি জঙ্গি বিমান মতিউরের বিমানকে ধাওয়া করে। মৃত্যু আসন্ন জেনেও মতিউর রহমান বিমানটি নির্ধারিত সীমার নিচে চালিয়ে রাডারকে ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশ অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আসার চেষ্টা করেন। প্রায় ভারতের সীমান্তে পৌঁছে যাওয়া অবস্থায় রাশেদ মিনহাজ জ্ঞান ফিরে পান এবং বিমানটির নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা করেন। রাশেদ চাইছিলেন, মতিউর রহমানের বিমান ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা সফল হওয়ার চাইতে বিমানটি বিধ্বস্ত করা ভালো।

এ সময় রাশেদের সাথে মতিউরের ধ্বস্তাধ্বস্তি চলতে থাকে এবং এক পর্যায়ে রাশেদ ইজেক্ট সুইচ চাপলে মতিউর রহমান বিমান থেকে ছিটকে পড়েন। বিমানটি কম উচ্চতায় উড্ডয়ন করার ফলে একসময় রাশেদসহ বিমানটি ভারতীয় সীমান্ত থেকে মাত্র ৩৫ মাইল দূরে থাট্টা এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। মতিউর রহমানের সাথে প্যারাসুট না থাকাতে তিনি নিহত হন। তাঁর মৃতদেহ ঘটনাস্থল হতে প্রায় আধা মাইল দূরে পাওয়া যায়। শাহাদতের ৩৫ বছর পর ২০০৬ সালের ২৪ জুন মতিউরের দেহাবশেষ পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে এনে ২৫শে জুন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ঢাকার মিরপুর শহীদ বুদ্ধজীবী কবরস্থানে পুনঃসমাহিত করা হয়।

Bootstrap Image Preview