সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়েছেন। নিম্ন আদালতে মানহানির অভিযোগে হওয়া দুই মামলায় তাকে ৫ মাসের আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
নিজের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মানহানির দুই মামলায় হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পাওয়ার পর সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে মইনুল হোসেন বলেছেন, ‘আমি একটি জাতীয় ঘটনার সম্মুখীন হয়েছি। জামায়াতের এজেন্ট বলে আমাকে অত্যন্ত অপমান করা হয়েছে। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আর কিছু বলবো না।’
ব্যারিস্টার মইনুলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগে জামালপুর ও ঢাকায় দুটি মামলা হয়েছে। এ দুই মামলায় হাইকোর্টে জামিন আবেদন করলে আদালত ৫ মাসের আগাম জামিন মঞ্জুর করেন।
তিনি বলেন, ‘একাত্তর টেলিভিশনের টকশোতে তিনি একটি মন্তব্য করেছিলেন। সেই কারণে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়েছে। ওই মন্তব্যের জন্য ফোন করে মইনুল হোসেন ক্ষমা চেয়েছেন, লিখিতভাবেই স্যারি বলেছেন। তারপরও তিনি মামলা করেছেন, যা আমরা আশা করিনি। এছাড়া জামালপুরে যিনি মামলাটি করেছেন তিনি যুব মহিলা লীগের সদস্য। তাহলে বুঝা যায় এর পেছনে একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে, যার কাছে ক্ষমা চাইলাম তিনিও মামলা করলেন এটা দুঃখজনক। সে কারণেই মইনুল হোসেন হাইকোর্টে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেছেন।’
এর আগে রবিবার বিকেলে হাইকোর্টের বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ তার জামিনের আদেশ দেন। আদালতে তার জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রাফি আহমেদ। তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যার্টনি জেনারেল এম মাসুদ চৌধুরী ও স্বপন দাস।
সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রাফি আহমেদ বলেন, জামিন আবেদনের বিরোধিতা সত্ত্বেও আদালত তাকে (মইনুল হোসেন) জামিন দিয়েছেন। আমরা হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবো।
এর আগে ঢাকা ও জামালপুর আদালতে ব্যারিস্টার মইনুলের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই দুই মামলায় এরিমধ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ হয়েছেন আদালত।
মামলা দুটির মধ্যে একটি করেন সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি নিজে। তিনি রবিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে মানহানি মামলা দায়ের করেছেন। এসময় মহানগর হাকিম মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান নূর ভাট্টির জবানবন্দি গ্রহণ করে নথি পর্যালোচনা করে পরে আদেশ দেবেন বলে জানান। পরে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। এবং গ্রেফতার সংক্রান্ত প্রতিবেদনের জন্য আগামী ২২ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ অক্টোবর মধ্যরাতে একাত্তর টেলিভিশনের নিয়মিত আয়োজন একাত্তর জার্নালে রাজনৈতিক সংবাদের বিশ্লেষণ চলছিল। অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন একাত্তরের মিথিলা ফারজানা। এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাসুদা ভাট্টি, সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্ত। আলোচনায় স্টুডিওর বাইরে থেকে যুক্ত হোন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। আলোচনার এক ফাঁকে ব্যারিস্টার মইনুলের কাছে মাসুদা ভাট্টির প্রশ্ন ছিল ‘‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি আলোচনা চলছে যে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ঐক্যফ্রন্টে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব করছেন। ’’
এর জবাবে ব্যারিস্টার মইনুল বলেন, ‘‘আপনার দুঃসাহসের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। আপনি চরিত্রহীন বলে আমি মনে করতে চাই।”
এদিকে এ ঘটনার পর ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন ১০১ নারী সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী।