Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৭ মঙ্গলবার, মে ২০২৪ | ২৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

তিন ওষুধ কোম্পানিকে দেওয়া হবে এইও সনদ

বিডিমর্নিং ডেস্ক-
প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর ২০১৮, ০২:২২ PM
আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৮, ০২:২২ PM

bdmorning Image Preview


তিনটি ওষুধ কোম্পানিকে আগামী ডিসেম্বর থেকে অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর (এইও) সুবিধা দেওয়া হবে। আগামী সপ্তাহে এইও সনদ দেওয়া হতে পারে। ছয় মাস পরীক্ষামূলকভাবে এই ব্যবস্থা চালুর পর তা নিয়মিত করা হবে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও ইনসেপটা ফার্মা। ইতিমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক মূল্যায়ন ও অডিট কমিশনারেটের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোর এ নিয়ে আলোচনা চলছে।

২০১২ সালে এনবিআর প্রথম এইও ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেয়। ছয় বছর পর গত ২৮ জুন এর বিধিমালা জারি করা হয়। ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিওসিও) শর্ত হিসেবে এই ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। জুনে বিধিমালার জারির পর থেকে এ সুবিধা দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠান খোঁজার কাজটি শুরু হয়।

শুধু নিজ দেশেই নয়, যে দেশে রপ্তানি পণ্য যাবে, সে দেশেও একই ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে। অবশ্য এ জন্য ওই সব দেশের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি থাকতে হবে। এইও নিয়ে এখন পর্যন্ত বিশ্বে ১০০টির বেশি মিউচুয়াল রিকগনিশন অ্যাগ্রিমেন্ট (এমআরএ) আছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ, জাপান, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, চীনসহ বিভিন্ন দেশের মধ্যে এসব সমঝোতা চুক্তি হয়েছে।

এইও সুবিধা হলো, যেকোনো বন্দরে পণ্য খালাসে অনেকটা গ্রিন চ্যানেল সুবিধার মতো। অর্থাৎ আমদানি করা পণ্য বন্দরে পড়ে থাকবে না। সঙ্গে সঙ্গে খালাস হয়ে যাবে। আমদানিকারকের নিজস্ব গুদামেই পণ্য পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হবে। জাহাজ থেকে পণ্যের চালান ট্রাকে করে সরাসরি আমদানিকারকের গুদামে যাবে। পণ্য খালাস করতে কাগজপত্র নিয়ে শুল্ক কর্তৃপক্ষের দপ্তরের টেবিলে টেবিলে দৌড়াতে হবে না আমদানিকারককে। বর্তমানে যেখানে ২০ ধরনের কাগজপত্র দিতে হয়, তখন ৫ ধরনের কাগজপত্র দিলেই চলবে। দুই পক্ষের সব যোগাযোগ হবে ই-মেইলে। তাতে স্বল্পতম সময়ে পণ্য খালাস হবে।

শুল্ক মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনারেটের কমিশনার মইনুল খান বলেন, এইও ব্যবস্থা চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ হবে। বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত হবে। এ ছাড়া ডুয়িং বিজনেস প্রতিবেদনেও বাংলাদেশের র‌্যাঙ্কিংয়ের উন্নতি হবে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, রপ্তানিমুখী ওষুধ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাধারণত নানা ধরনের নিয়মকানুন অনুসরণ করতে হয়। তাই অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় রাজস্ব খাতের নিয়মনীতি পরিপালনে এ খাতের কোম্পানিগুলো এগিয়ে রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের দলিলপত্র অটোমেশন ব্যবস্থায় থাকে। এসব কারণে আপাতত তিনটি ওষুধ কোম্পানিকে এইও সনদ দেওয়ার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ডিসেম্বরে পরীক্ষামূলকভাবে ওই তিনটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এইও সুবিধা চালু করা হবে। এরপর আগামী বছর জুলাইয়ে গিয়ে পুরোপুরিভাবে এই ব্যবস্থাটি চালু করা হবে। তখন অন্য প্রতিষ্ঠানকেও এই সুবিধার আওতায় আনা হবে। এ জন্য অবশ্য আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোকে শুল্ক মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনারেটে আবেদন করতে হবে। এই কমিশনারেট হলো, এইও সনদ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ। এইও সনদ থাকলে শুধু চট্টগ্রাম বা মোংলা বন্দর নয়, দেশের সব সমুদ্র, বিমান ও স্থলবন্দরে এই সুবিধা মিলবে।

সনদ পেতে যোগ্যতা

এইও সনদ পেতে হলে সাত ধরনের শর্ত পূরণ করতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, কমপক্ষে ৫ বছর ব্যবসা পরিচালনা; নিয়মিত শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ও আয়কর প্রদান; রাজস্ব–সংক্রান্ত মামলায় জরিমানার পরিমাণ মোট পণ্য বা সেবা মূল্যের ১ শতাংশের বেশি হতে পারবে না; প্রতিষ্ঠানের মালিককে তিন বছর রাজস্ব–সংক্রান্ত অপরাধমুক্ত থাকতে হবে; সব বকেয়া রাজস্ব হালনাগাদ থাকতে হবে; প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত মূলধন হতে হবে কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা ও পরিশোধিত মূলধন ৫ কোটি টাকা, বার্ষিক টার্নওভার আগের তিন বছরে কমপক্ষে ৫ কোটি টাকা হতে হবে এবং আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকের বার্ষিক আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ কমপক্ষে ৫ কোটি টাকা হতে হবে।

২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ‘নাইন ইলেভেন’ ঘটনার পর পণ্যের নিরাপদ চলাচলের উদ্যোগ নেয় বড় দেশগুলো। ২০০৫ সালে পণ্যের নির্বিঘ্ন চলাচলে সেইফ ফ্রেমওয়ার্ক চালু করে ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশন (ডব্লিউসিও)। সেখানে অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর বা এইও ব্যবস্থা চালুর বিধান রাখা হয়েছে। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকে বাণিজ্য সহায়তা চুক্তি (ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন অ্যাগ্রিমেন্ট) হয়। এতে বাংলাদেশ সই করে। এই চুক্তির ৭ দশমিক ৭ অনুচ্ছেদে এইও ব্যবস্থা চালুর কথা বলা হয়।

২০১২ সালে ভারত এই ব্যবস্থা চালু করেছে। ভারতের শতাধিক প্রতিষ্ঠান এই সনদ নিয়েছে। শিল্প উৎপাদক, আমদানিকারক, রপ্তানিকারক ওয়্যারহাউস ফ্রেইট ফরোওয়ার্ডার্স, সমুদ্র, স্থল ও বিমানবন্দর—এই এইও সনদ নিতে পারেন। দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচন বিমানবন্দরও এ সনদ নিয়েছে।

Bootstrap Image Preview