Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৪ মঙ্গলবার, মে ২০২৪ | ৩১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

সাব-রেজিস্ট্রারের টাকা দেখে ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা করে পিয়ন

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০১৮, ০৬:৪৫ PM
আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৮, ০৬:৪৫ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


কুষ্টিয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রার নূর মোহাম্মদ শাহ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উম্মোচন করেছে পুলিশ। মূলত নূর মোহাম্মদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে কুষ্টিয়া রেজিস্ট্রি অফিসের পিয়ন ফারুক, অফিসের নকলনবিশ সাইদুল এবং মিরপুর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের পিয়ন কামাল ও বাবুল। তারা ছাড়াও অপর একজন এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়।

রবিবার দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলন ডেকে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া চারজনকে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করে এসব তথ্য জানান কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার তানভীর আরাফাত।

তিনি জানান, সেদিন নূর মোহাম্মদ শাহের বাসায় ঢুকে তারা পাঁচজন। টাকা না পেয়ে সাব-রেজিস্ট্রারকে হত্যা করে তারা। এ হতাকাণ্ডে অংশ নেয়া চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার বলেন, কুষ্টিয়ায় এ বছরের সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর মামলা ছিল এটি। এ হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ প্রশাসন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নামে। ওই বাড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এমনকি শহরের সব সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে পুলিশ।

হত্যাকাণ্ডের পরপরই নূর মোহাম্মদ শাহের অফিস পিয়ন মো. ফারুক হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এলাকার গোলাম সরোয়ারের ছেলে মো. কামাল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তি এবং সিসি ক্যামেরার ফুটেজে অন্য আসামিদের শনাক্ত করে অভিযান চালিয়ে কুমারখালী উপজেলার মো. সাইদুল ইসলাম (৩৫) ও একই উপজেলার মো. মশিউল আলম ওরফে বাবুলকে (৪০) গ্রেফতার করা হয়।

এদের মধ্যে সাব-রেজিস্ট্রার নূর মোহাম্মদকে ছুরিকাঘাত করে মশিউল আলম ওরফে বাবুল। হত্যাকাণ্ডে জড়িত অপরজনকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি, একটি খেলনা পিস্তল, দুটি গামছা, রশি ও একটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশ সুপার তানভীর আরাফাত।

 

 

হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার ব্যাপারে তিনি বলেন, সাব-রেজিস্ট্রার নূর মোহাম্মদ শাহের গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাটে হলেও স্ত্রী এবং দুই সন্তান নিয়ে ঢাকার শ্যামলীতে বসবাস করেন। আর তিনি কুষ্টিয়া শহরের বাবর আলী গেট এলাকার চারতলা ভবনের তিনতলায় ভাড়া বাসা নিয়ে একা বসবাস করতেন। সাপ্তাহিক ছুটিতে ঢাকার বাসায় যেতেন নূর মোহাম্মদ। একা থাকায় তার কাছে মোটা অংকের টাকা আছে ভেবে প্রায় ১৫ দিন আগ থেকেই ওই বাসায় হানা দেয়ার পরিকল্পনার ছক কষে তারই অফিসের পিয়ন ও অন্যরা। এ নিয়ে একাধিকবার বৈঠকেও মিলিত হয় তারা। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৮ অক্টোবর রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে ফারুক, সাইদুল, কামাল ও বাবুলসহ পাঁচজন ওই বাসার আশেপাশে অবস্থান নেয়।

তিনি আরও বলেন, সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের পিয়ন ফারুক প্রতিদিন নূর মোহাম্মদ শাহকে খাবার দিতো। পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই দিন রাত ৯টা ৫১ মিনিটে সাব-রেজিস্ট্রারকে খাবার দেয়ার নাম করে তিনতলার বাসার কলিং বেল বাজায় ফারুক। এ সময় সাব-রেজিস্ট্রার নূর দরজা খুলে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে গামছা, রশি দিয়ে তার হাত-পা এবং মুখ বেঁধে ফেলে ফারুক, সাইদুল, কামাল ও বাবুলসহ পাঁচজন। এরপর রান্না ঘরে নিয়ে নূরকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে তারা। সেই সঙ্গে টাকা কোথায় আছে জানতে চায়। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে নূরকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এ সময় নূর অচেতন হয়ে মেঝেতে পড়ে গেলে পালিয়ে যায় তারা।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার রাত ১০টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের বাবর আলী রোডের বাড়ি থেকে নূর মোহাম্মদ শাহের হাত-পা বাঁধা রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই মহসিন আলী শাহ বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

Bootstrap Image Preview