Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৫ বুধবার, মে ২০২৪ | ৩১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

৯০ দিনের ব্যবধানে পাগলা মসজিদের সিন্দুকে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৩ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:১৯ PM
আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:১৯ PM

bdmorning Image Preview
ফাইল ছবি


প্রতি চার মাস পরপর ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স খোলা হয়ে থাকলেও এ বারের সময়ের ব্যবধানটা একটু ভিন্ন। তিন মাসের ব্যবধানে মোট পাঁচটি লোহার সিন্দুক খুলে পাওয়া গেছে ১ কোটি ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৬৮৫ টাকা। তাছাড়া পাওয়া গেছে প্রচুর বৈদেশিক ও দেশিয় খুচরা মুদ্রা এবং ৪০০ গ্রাম স্বর্ণাংলকার।

আজ শনিবার ( ১৩ অক্টোবর) সকালে জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে পাগলা মসজিদের পাঁচটি দান বাক্স তিন মাস পর খোলা হয়েছে। প্রথমে দান বাক্স থেকে টাকাগুলো বস্তায় ভরা হয়। এরপর শুরু হয় টাকা গণনা।

জানা যায়, আজ সকাল ৯টা থেকে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ হাবীবুর রহমান এবং কালেক্টরেটের সিনিয়র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু তাহের মোঃ সাঈদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে টাকা বাছাই ও গণনার কাজ শুরু হয়। বিকাল ৪টা পর্যন্ত টাকা গণনার কাজ চলে। শতাধিক মাদ্রাসার ছাত্র, শিক্ষক, মসজিদ কমিটির লোকজন টাকা বাছাইয়ের পর টাকাগুলো বস্তায় ভরেন। পরে রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ টাকাগুলো গুণে বুঝে নেন। পাগলা মসজিদের নামে রূপালী ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট আছে। পরে প্রাপ্ত টাকা ব্যাংকের হিসাবে জমা দেওয়া হয়।

টাকা গণনা কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের সিনিয়র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু তাহের মো. সাঈদ বলেন, তিন মাস পর শনিবার সকালে পাগলা মসজিদের পাঁচটি দান বাক্স খোলা হয়। এর মধ্যে ১০ বস্তা টাকা রয়েছে। স্বর্ণালঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রা আলাদা করা হয়েছে। সন্ধ্যায় নিরাপত্তা প্রহরীসহ টাকাগুলো রূপালী ব্যাংকে পাঠানো হবে।

মসজিদ কমিটি সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ গত ৭ জুলাই মসজিদের পাঁটি দান বাক্স খোলা হয়েছিল। তখন মাত্র দুই মাসে ৮৮ লাখ টাকা পাওয়া যায়। এর আগের বার তিন মাসে এক কোটিরও বেশি টাকা পাওয়া যায়। কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক পদাধিকার বলে পাগলা মসজিদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মসজিদের আয় থেকে জেলার বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদানসহ বিভিন্ন সেবামূলক খাতে সাহায্য দেয়া হয়। বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত দরিদ্র মানুষকে চিকিৎসার জন্য মসজিদের তহবিল থেকে অর্থ সহায়তা দেয়া হয়।

প্রসঙ্গত, কিশোরগঞ্জ শহরের নরসুন্দা নদীর তীরে ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ অবস্থিত। এই মসজিদে ইবাদত-বন্দেগি করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায় বলে বিশ্বাস অনেকের।

পাশাপাশি রোগ-শোক, বিপদে-আপদে এই মসজিদে মানত করলে মনের বাসনা পূর্ণ হয়- এমন বিশ্বাস থেকে প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দা ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন।

এ ব্যাপারে স্থানীয়রা বলছেন, এই মসজিদে মানুষ দু’হাত খুলে দান করেন। শুধু মুসলমান নয়, অন্যান্য ধর্মের লোকজনকেও এ মসজিদে দান করতে দেখা যায়। এটি দেশের অন্যতম বিত্তশালী মসজিদ।

মানুষের বিশ্বাস, কোনও আশা নিয়ে একনিষ্ঠ মনে এ মসজিদে দান করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। রোগ-শোক ছাড়াও বিভিন্ন উপলক্ষে মানুষজন এ মসজিদে মানত করে দান করেন। যুগ যুগ ধরে এ বিশ্বাস থেকেই মানুষ মসজিদটিতে দান করছেন।

এর আগে ২০১৭ সালে যে ক’বার মসজিদের দান বাক্স খোলা হয়েছে, প্রতিবারই মিলেছে কোটি টাকার ওপরে, সঙ্গে মিলেছে প্রচুর স্বর্ণালঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রা। সবশেষ গত ৬ জানুয়ারি স্থানীয় প্রশাসন ও মসজিদ কমিটির নেতৃত্বে দানবাক্স খুলে এক কোটি ২৭ লাখ ৩৬ হাজার ৪৭১ টাকা পাওয়া যায়। সঙ্গে পাওয়া যায় প্রচুর স্বর্ণ ও রূপার অলঙ্কার; যা এখনও পরিমাপ করা হয়নি। এছাড়াও বেশ কিছু মার্কিন ডলার, সিঙ্গাপুরি ডলার, সৌদি রিয়াল, মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত ও মিয়ানমারের মুদ্রাও পাওয়া যায়। সেগুলো এখনও ভাঙানো (টাকায় বিনিময়) হয়নি।

Bootstrap Image Preview