Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৬ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

চায়ের দোকান থেকে ধরে নিয়ে যেভাবে সাজানো হয় জজ মিয়া নাটক

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ অক্টোবর ২০১৮, ১২:১৩ PM
আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৮, ১২:১৩ PM

bdmorning Image Preview
ফাইল ছবি


২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার কথা আসলেই প্রথমে সামনে আসে জজ মিয়া নাটকের বিষয়টি। পুরো্ ঘটনাটি পরিকল্পিত সাজিয়ে একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে চায়ের দোকান থেকে ধরে নিয়ে জজ মিয়া সাজিয়ে এই হামলার গ্রেফতার দেখানো হয়। দীর্ঘ ১৪ বছর পর আজ এই মামলার রায় ঘোষণা দিবেন আদালত। এই রায়ের দিনে নতুন করে আলোচনায় এসেছে দিনমজুর থেকে কীভাবে একজন হতদরিদ্রকে জজ মিয়া চরিত্র বানিয়ে এই হামলাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা হয়েছিল।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট সেই হামলার ঘটনায় চার দলীয় জোট সরকার যে মামলা সাজায় তাতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র করা হয়েছিল তাকে মামলাটির অন্যতম আসামি ছিলেন এইজজ মিয়া মামলায় তাকে হামলায় অংশগ্রহণকারী হিসেবে দেখানো হয় কিন্তু এত বড় ঘটনাটি নোয়াখালী জেলার সেনবাগ থানার একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ দিনমজুর কী করে ঘটালেন- সেই হিসেব কষতে গিয়ে এই গল্পটি গণমাধ্যমসহ সব মহলে প্রশ্নবিদ্ধ হয়!

জজ মিয়ার আসল নাম জালাল উদ্দিন গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলার কেশারপাড় ইউনিয়নের বীরকোট গ্রামে বাবা নেই মা আর ছোট ভাইবোনদের নিয়ে ছিলো তার বাস কিন্তু মামলায় জড়ায়ে জালাল উদ্দিনের সম্পূর্ণ জীবনটা তছনছ করে দেওয়া হয়েছে

হামলার শিকার তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা আওয়ামী লীগ সভাপতি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলীয় রাজনৈতিক নেতারাও বলেন, জজ মিয়া ষড়যন্ত্রের বলি হয়েছেন এটা সাজানো নাটক

নাটকীয়তার পর আলোচিত সেই মামলা থেকে অব্যাহতি পান জালাল উদ্দিন ওরফে জজ মিয়া বর্তমানে এই মামলার অন্যতম সাক্ষীও তিনি

জালাল উদ্দিনের প্রতিবেশীরা বলছেন, পৈতৃক ঘরবাড়ি বিক্রি করে এখন ঠিকানাহীন উদ্বাস্তু তিনি কারও সঙ্গে যোগাযোগ নেই জালাল উদ্দিনের

সরেজমিনে দেখা যায়, যে ঘরে জজ মিয়া তার মাকে নিয়ে থাকতেন তা এখন অনেকটাই পরিত্যক্ত ঘরে তালা ঝুলছে ওই বাড়িতে এখন জজ মিয়ার কয়েজন স্বজন থাকেন

জজ মিয়ার জেঠাতো ভাই রফিকুল ইসলামের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম জানান, প্রায় ১০ বছর আগে শতাংশ জমি লাখ ৪২ হাজার টাকায় বিক্রি করে গ্রাম ছাড়েন জজ মিয়া এরপর দুই একবার এলেও ঠিক কোথায় তিনি থাকেন, তা তারা জানেন না এমনকি কারও সঙ্গে যোগাযোগও রাখেন না

স্থানীয়রা জানান, জজ মিয়ার বাড়ির সামনের এক চা চা দোকানি ২০০৫ সালের জুন গ্রামের কালি মন্দির সংলগ্ন রাজা মিয়ার চা দোকান থেকে জালালকে গ্রেফতার করা হয়

জজ মিয়া যার নাম দেওয়া হয় তিনি আসলে জালাল উদ্দীন তিনি ছিলেন গ্রামের সহজ সরল একজন মানুষ কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গেও সে জড়িত ছিলেন না আমরা গ্রামের মানুষ একাদিকবার সাক্ষ্যটি দিয়ে এসেছি

তিনি বলেন, ‘এই একটি মামলার জন্য তাকে ঘরবাড়ি ছাড়া হতে হয়েছে তার চিন্তায় তার মাও মারা গেছে আসলে কোনো ধরনের হামলা-মামলায় জালাল ছিলো না

জালাল উদ্দিনের সঙ্গে কাজ-কর্ম করা আবদুল আলী  বলেন, ‘বিনা দোষে জেল খাটতে হয়েছে জালালকে সে গ্রামে আমাদের সঙ্গে গাছ কাটার কাজ করত গরিব নিরীহ পরিবারের লোকটি কখনো কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি এতবড় ঘটনা ঘটানো তো দূরের কথা

স্থানীয় বৃদ্ধ বেনু ভৌমিক বলেন, ‘যে জালাল উদ্দিনকে জজ মিয়া সাজানো হয়েছে সে মানুষটা ছিল সহজ সরল গরিব পরিবারের ছেলে এক মামলার কারণে তার পুরো জীবনটাই শেষ হয়ে গেছে এই জীবন কেউ ফেরত দিতে পারবে?’

ভুক্তভোগী জালাল উদ্দিনকে পরিচিত উল্লেখ করে সেনবাগ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এসএম আবুদুল ওয়াহাব বলেন, ‘তাকে (জজ মিয়া ওরফে জালাল) আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি সে সহজ-সরল গরিব পরিবারের ছেলে কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না

তাকে জড়িয়ে যে মামলা দেওয়া হয়েছে তা সাজানো এটি ছিল ইতিহাসের জঘন্যতম ন্যাক্কারজনক মিথ্যাচার তৎকালীন সরকার, তারেক রহমান আর বাবররা মিলে ঘটনা ঘটিয়েছে অথচ নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে একটি সাধারণ মানুষের

জজ মিয়ার গ্রামের মানুষ স্বজনদের কাছে তার বর্তমান ঠিকানা নেই কেউ বলছেন, তিনি থাকেন নারায়ণগঞ্জে, আবার অনেকে বলছেন কেরানীগঞ্জে কিন্তু কেউই সঠিক ঠিকানা দিতে পারেননি

মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে জালাল উদ্দিনের ছোটভাই সাইফুল ইসলাম  জানান, তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার মৌচাক এলাকায় থাকেন তবে বড়ভাই জালাল ওরফে জজ মিয়ার কোনো ফোন নম্বর বা ঠিকানা তার কাছে নেই বলে জানানঢাকায় থাকলেও আমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে কোনো ধরনের যোগাযোগ নেই,

আলোচিত মামলার রায়ের আগেরদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে উপস্থিত হয়ে জজ মিয়া বর্ণনা করেন, তার ওপর চালানো নির্যাতনের কথা

তিনি বলেন, ‘আমি সরাসরি কোনো রাজনীতি করতাম না তবে আওয়ামী লীগের একজন সমর্থক হামলার দিন এলাকায় প্রতিবাদ মিছিলেও অংশ নিই অথচ একদল লোক আমায় জজ মিয়া বলে মামলায় ঢুকিয়ে দেয় শারীরিকভাবে নির্যাতন করে

জজ মিয়া বলেন, গ্রেফতারের পর চোখ বেঁধে সেনবাগ থেকে ঢাকায় নিয়ে আসে নির্যাতন করে পরিবারের সদস্যদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আমাকে ক্রস ফায়ার দেওয়ার ভয় দেখিয়ে নানা কথা আমার মুখ দিয়ে বলানো হয়

পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়, জেলগেটে সিআইডি আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তখন আমি জবানবন্দি দিলাম আবার তদন্ত করে তারা এক পর্যায়ে আমি মামলা থেকে অব্যাহতি পাই

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে জনসভার আয়োজন করে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ সভার শেষ দিকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বক্তব্য দিচ্ছিলেন সময় হঠাৎ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়

এতে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জনের প্রাণহানি ঘটে শেখ হাসিনাসহ অনেক নেতাকর্মী আহত হন এখনও শরীরে সেই ভয়াল স্মৃতির ক্ষত নিয়ে দিনাতিপাত অনেকে

এই মামলায় বাবর পিন্টুসহ ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং তারেক হারিছসহ ১৭ জনের যাবজ্জীবন দিয়েছেন আদালত।

Bootstrap Image Preview