Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৫ বুধবার, মে ২০২৪ | ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

৪৬ বছরে ৭৮ কি.মি. নদীর তীরের সংরক্ষণ হয়েছে সাড়ে ৯ কি.মি.

ফরহাদ আকন্দ, গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৮ অক্টোবর ২০১৮, ০১:৩৫ PM
আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৮, ০১:৩৫ PM

bdmorning Image Preview


গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা ও যমুনা নদীর ৭৮ কিলোমিটারের মধ্যে গত ৪৬ বছরে নদীর তীর স্থায়ীভাবে সিসি ব্লক দ্বারা সংরক্ষণ করা হয়েছে মাত্র সাড়ে ৯ কিলোমিটার এলাকায়। গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার এই তিন নদীর তীর সংরক্ষণে সবচেয়ে কম কাজ হয়েছে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়, মাত্র ৪৯৫ মিটার। তাই নদী ভাঙ্গন রোধে স্থায়ীভাবে আরও নদীর তীর সংরক্ষণের দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, নদী ভাঙ্গন ঠেকাতে নদীর তীর সিসি ব্লক দ্বারা স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ ও জিও টেক্সটাইল ব্যাগে বালু-সিমেন্ট মিশ্রিত করে প্রতিরক্ষা কাজ অস্থায়ীভাবে করা হয়। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার আওতাধীন ৭৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা ও যমুনা নদীর তীর স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের কোন কাজই করা হয়নি।

পরে প্রায় ২৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত নদীর তীর স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে মাত্র সাড়ে ৯ কিলোমিটার এলাকায়। এরমধ্যে সবচেয়ে কম কাজ হয়েছে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় আর বেশি কাজ হয়েছে সাঘাটা উপজেলায়। এ ছাড়া নদীর তীর প্রতিরক্ষা কাজ করা আছে প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকায়।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে আরও জানায়, স্থায়ীভাবে পুরাতন ফুলছড়ি হেডকোয়ার্টার এলাকায় ১৯৯৭ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩০০ মিটার, ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ৫ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে (৭ কি.মি. বাঁধ মেরামতসহ) সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা বাজার রক্ষায় ৪৯৫ মিটার, ২০০৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ৪৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে পুরাতন ফুলছড়ি হেডকোয়ার্টার এলাকায় ১০০০ মিটার ও সদর উপজেলার কামারজানী বাজার এলাকায় ১০৪৩ মিটার, ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে সদর উপজেলার বাগুড়িয়া এবং ফুলছড়ি উপজেলার সৈয়দপুর, কঞ্চিপাড়া ও বালাসীঘাট এলাকায় ১৮৭২ মিটার, ২০১০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ১৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সাঘাটা বাজার এলাকার ৪৭৮৯ মিটারের মোট সাড়ে ৯ কিলোমিটার এলাকা নদীর তীর সংরক্ষণ করা হয়।  

আর ভাঙ্গন রোধে সদর উপজেলার গোঘাট, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর, ফুলছড়ি উপজেলার সিংড়িয়া, সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া, গোবিন্দিসহ ব্রহ্মপুত্র নদ, তিস্তা ও যমুনা নদীর তীর প্রতিরক্ষা কাজ হয়েছে প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকায়। 

বর্তমানে ফুলছড়ি উপজেলার বালাসীঘাট এলাকায় ১৩০০ মিটার, রতনপুর-সিংড়িয়া-কাতলামারী এলাকায় ২২০০ মিটার ও পুরাতন ফুলছড়ি হেডকোয়ার্টার গণকবর এলাকায় ৭০০ মিটার এবং সদর উপজেলার বাগুড়িয়া এলাকায় ৩০০ মিটারের মোট সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকা নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ চলমান রয়েছে।

জেলা প্রশাসনের জরিপ অনুযায়ী, নদীভাঙ্গনের শিকার হওয়া ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা ও যমুনা নদীর বৃুকে জেগে ওঠা ১৬৫ টি চরে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৪২৭ জন মানুষ বসবাস করে। এ ছাড়া নদীভাঙ্গনের শিকার আরও অনেক মানুষ ঘর তুলেছে ৭৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় সবখানেই।

এক হিসেবে দেখা গেছে, গত ১৪৬ বছরে গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলাবেষ্টিত ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা ও যমুনা নদীর তীর প্রায় ৫৪৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকা ভেঙ্গেছে। ১৯৬৩ সালে এই গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন একজন কর্মকর্তা। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ২৫ বছরে এসব নদীর তীর স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের কোন কাজ না হওয়ায় প্রতিবছরই এই চার উপজেলার হাজার হাজার মানুষ নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়।

পরে ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ২১ বছরে কাজ হয় মাত্র সাড়ে ৯ কিলোমিটার এলাকা। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। স্থায়ী কাজগুলো কয়েক যুগ ধরে টিকে থাকে আর অস্থায়ী কাজগুলো কয়েক বছরের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়। তাই এসব এলাকার নদী ভাঙ্গন রোধে আরও বেশি বেশি স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।  

গাইবান্ধা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর সাবু বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা ও যমুনা নদীর ৭৮ কিলোমিটারের মধ্যে স্থায়ীভাবে তীর সংরক্ষণ করা হয়েছে মাত্র সাড়ে ৯ কিলোমিটার এলাকায়। যা হাস্যকর এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতি ছাড়া আর কিছুই নয়। এই নদীগুলো ভাঙ্গন প্রবণ নদী। ভাঙ্গন ঠেকাতে এই তিন নদীর তীর সংরক্ষণে আরও নতুন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে নদী ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারানো মানুষের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।  

এ বিষয়ে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা ও যমুনা নদীর তীর সাড়ে ৯ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা আছে। এ বছর আরও সাড়ে ৪ কিলোমিটার এলাকা স্থায়ীভাবে নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া সদর উপজেলাসহ ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলায় আরও ১০.৬০ কিলোমিটার এলাকা নদীর তীর সংরক্ষণের দুইটি প্রকল্প দাখিল করা হয়েছিল। সেগুলো ফেরত এসেছে, সংশোধনের পর আবারও পাঠানো হবে।

Bootstrap Image Preview