Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ সোমবার, মে ২০২৪ | ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে ফের সক্রিয় দালাল চক্র

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ অক্টোবর ২০১৮, ১০:২৯ AM
আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৮, ১০:২৯ AM

bdmorning Image Preview


জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে শুধু মাত্র ১০টি এজেন্সির পরিবর্তে বৈধ সব রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমেই বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত মাসে দুই দেশের মন্ত্রণালয় পর্যায়ের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের দুই দফা বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হলেও কী প্রক্রিয়ায় এটি বাস্তবায়ন করা হবে, তা এখনো চূড়ান্ত করেনি মালয়েশিয়া সরকার। অথচ নতুন এ সিদ্ধান্তের খবরে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে দালাল চক্র।

জানা গেছে, সব এজেন্সির জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার খবরটি কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু এজেন্সি ও মধ্যস্বত্বভোগী দালাল দেশটিতে যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের পাসপোর্ট সংগ্রহ ও অর্থ জমা নিচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা ‘আগে নিবন্ধন করার মাধ্যমে প্রথম দিকে পাঠিয়ে দেয়া হবে’— এমন লোভ দেখাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সভাপতি বেনজির আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে কী পদ্ধতিতে শ্রমিক নেয়া হবে, সেটি মালয়েশিয়া সরকার এখনো জানায়নি। বর্তমানে শ্রমিক নেয়ার পলিসিগত বিষয়ে কাজ করছে তারা।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে মালয়েশিয়া সফর করে বাংলাদেশী প্রতিনিধি দল। গত ২৫ সেপ্টেম্বর জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের দুই দফা বৈঠকের পর সব এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশী শ্রমিক নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠকের বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রীর একান্ত সচিব (যুগ্ম সচিব) মো. আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর জানান, জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে বৈধ সব রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশী কর্মীদের মালয়েশিয়ায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পাশাপাশি কলিং ভিসায় কর্মী নিয়োগের বিষয়েও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু অপেক্ষমাণ কর্মীদের পথ উন্মুক্ত থাকবে। এছাড়া মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অনিয়মিত কর্মীদের নিয়মিতকরণের বিষয়েও মালয়েশিয়া সরকার ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। তবে কী প্রক্রিয়ায় শ্রমিক পাঠানো হবে, সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

জিটুজি পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানোর লক্ষ্যে ২০১২ সালে চুক্তি সই করে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া। ২০১৬ সালে তা পরিমার্জন করে ১০টি বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিকে জিটুজি প্লাসের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০১৭ সালে দেশটিতে ৯৯ হাজার ৭৮৭ জন বাংলাদেশী শ্রমিক যান। আর ২০১৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত এ ১০ রিক্রুটিং এজেন্সি পাঠিয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৮১৯ জন শ্রমিক।

জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সঙ্গে যুক্ত ছিল মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিয়ে গড়া একটি সংঘবদ্ধ চক্র। বাংলাদেশ অংশে কাজ করেছে এ ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেট। এ চক্র ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মীপ্রতি আড়াই থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায় করেছে। বিদেশগামী শ্রমিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগে ১ সেপ্টেম্বর থেকে জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার।

এরপর গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে সব রিক্রুটিং এজেন্সি শ্রমিক পাঠাতে পারবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি অভিবাসন ব্যয় কমানোর বিষয়েও জোর দেয়া হয়। মালয়েশিয়া জানিয়েছে, অচিরেই ইউনিফায়েড নতুন অনলাইন সিস্টেমে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে শ্রমিক আনার চাহিদাপত্র দেয়া শুরু হবে।

বর্তমানে বাংলাদেশে অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা ১ হাজার ১৭৯। এসব এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে আগামীকাল প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে বায়রা নেতাদের। বৈঠকের এজেন্ডায় রয়েছে মালয়েশিয়ায় কীভাবে শ্রমিক যাবে, রিক্রুটমেন্ট পলিসি কী হবে ও অভিবাসন ব্যয় কমানো। পাশাপাশি নতুন শ্রমবাজার খোলা, ডাটাবেজ ব্যবহার ও অন্যান্য শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট বন্ধ করার বিষয়েও আলোচনা করবেন বায়রা নেতারা। অথচ এর আগেই মালয়েশিয়া গমনেচ্ছুদের কাছ থেকে দালাল মারফত অর্থ ও পাসপোর্ট সংগ্রহের অভিযোগ উঠেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) পরিচালক ড. সি আর আবরার এ প্রসঙ্গে বলেন, মালয়েশিয়া বাংলাদেশের অন্যতম বড় শ্রমবাজার। অতীতে বিভিন্ন ভুলের কারণে দেশটিতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন বাংলাদেশী শ্রমিকরা। সেসব থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকারকে কর্মপন্থা ঠিক করতে হবে। তিনি বলেন, দালালরা যাতে আবারো সক্রিয় না হয়, সেটি রুখতে কারা কারা এর পেছনে, তা খুঁজে বের করে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

উল্লেখ্য, জিটুজি পদ্ধতি চালু হওয়ার আগে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে প্রায় আট লাখ শ্রমিক মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন। কয়েক লাখ টাকা ব্যয় করে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে যাওয়ার পর অনেক শ্রমিকই ভিসায় উল্লেখ করা প্রতিষ্ঠানে কাজ পাননি। শেষ পর্যন্ত অসহায় শ্রমিকদের জন্য শেল্টার হোম খুলতে বাধ্য হয়েছিল বাংলাদেশ হাইকমিশন। ২০১৬ সালে জিটুজি প্লাস সমঝোতায় মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়ার খরচ নির্ধারণ করা হয় সাড়ে ৩৭ হাজার টাকা।

Bootstrap Image Preview