হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে ওয়াহিদ মিয়া (৫০) নামের এক কৃষককে হাত পা ভেঙ্গে ও কুপিয়ে করে হত্যা করা হয়েছে।
গতকাল শক্রবার উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের বোয়ালজুর গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। নিহত ওয়াহিদ মিয়া ওই গ্রামের মৃত চাঁন মিয়ার পুত্র।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের বোয়ালজোর গ্রামের মৃত তাহির উদ্দিন মেম্বারের ছেলে গিয়াস উদ্দিন গ্রুপ ও ৮ ভাই (ফরাস) গ্রুপের মধ্যে প্রায় ৩ যুগ ধরে গ্রাম্য আদিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছিল। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, হামলা পাল্টা হামলায় উভয় পক্ষের মধ্যে এ পর্যন্ত ৫ টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। উভয় পক্ষের মাঝে মামলা মোকদ্দমা চলেই আসছে। কোন কোন মামলার রায়ে এ দুটি গ্রুপের একাধিক ব্যক্তির ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালতের বিজ্ঞ বিচারক। এসব মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী ছিল কৃষক ওয়াহিদ মিয়া।
নিহতের পরিবারের দাবি, সাম্প্রতিক কালে ওয়াহিদ মিয়া গ্রুপ লিডার গিয়াস উদ্দিন ও তার লোকদের কথা না শুনার কারনে পরিকল্পিত ভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
অপর একটি সূত্রে জানা যায়, একই গ্রুপের গিয়াস উদ্দিনের ভাগ্নে বোয়ালজুর গ্রামের মছদ্দর মিয়ার পুত্র মোজাম্মেল মিয়া ও তার স্ত্রী হাফছা বেগমের মধ্যে পারিবারিক মনোমালিন্য দেখা দেয়। এতে হাফছা রাগ করে চলে যায় রুস্তমপুর গ্রামের পিত্রালয়ে। কয়েক দিন আগে কৌশলে হাফছা বেগমকে পিত্রালয় থেকে ওয়াহিদ মিয়া তার বাড়িতে নিয়ে আসে। কেউ কেউ বলেন, হাফছা পিত্রলয়ে চলে যাবার পর তার সাথে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে তুলে ওয়াহিদ মিয়া। এ নিয়ে মোজাম্মেল ও ওয়াহিদের মাঝে বিরোধ দেখা দেয়। এ ঘটনাও ওয়াহিদ হত্যার একটি কারণ হতে পারে। এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের কারণে ফের অশান্তি দেখা দিয়েছে বোয়ালজোর এলাকার জনপদে। সাধারণ মানুষের মাঝে আবারও অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে নিজেকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করে দাউদপুর গ্রামের শফিক মিয়ার ছেলে মুহিবুর রহমান জানান, সে স্থানীয় হাওর থেকে কাজ করে বাড়ি ফেরার পথে বিকেল সাড়ে ৩ টার সময় গিয়াস উদ্দিন এর বাড়ির সামনে আসা মাত্রই দেখতে পায় বোয়ালজুর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের পুত্র জসিম মিয়া, জলিল মিয়ার পুত্র তুহেল মিয়া, সাহেল মিয়া, রাহেল মিয়া, আব্দুর রহিমের ছেলে ফরহাদ মিয়া, মাসুদ মিয়ার পুত্র খালেদ মিয়াসহ ২০/২৫ জন লোক গিয়াস উদ্দিনের বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে।
এসময় ওয়াহিদ মিয়া সিএনজি থেকে নামা মাত্রই তাকে ধরে গিয়াস উদ্দিনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় ২০ মিনিট পর তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় বাহিরে ফেলে যায় তারা। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে আশংকাজনক অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাটি সাথে সাথে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও নবীগঞ্জ থানা পুলিশকে জানানো হয়।
এ মৃত্যুর খবর এলাকায় জানাজানি হলে নিহতের স্বজনদের মধ্যে ও এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করে।
খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানার নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ সময় ইনাতগঞ্জ ফাড়ি ইনচার্জ শামছ উদ্দিন, ওসি (তদন্ত) নুরুল ইসলামও উপস্থিত হন এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, গিয়াস উদ্দিন এর ভাই শাহীন মিয়া লন্ডনে বসবাস করছেন এবং গিয়াস মিয়া অন্যত্র বাসা ভাড়া করে বসবাস করেন। বাড়িতে মাঝে মধ্যে তাদের নিকটাত্মীয়রা থাকেন। নিহত ওয়াহিদ মিয়া ইতিপূর্বে ৮ ভাই গ্রুপের সদস্য ছিল। বিগত কয়েক বছর ধরে সে গিয়াস গ্রুপে ছিল বলে জানান স্থানীয়রা।
গিয়াস উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাজ-কাশারা এলাকায় বসবাস করছেন। তাদের বাড়িতে তার পরিবারের কোন লোক থাকেন না। তবে ওয়াহিদ হত্যাকান্ডের ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। এ ঘটনায় তারা কেউ জড়িত নয় বলেও দাবি করেন গিয়াস উদ্দিন।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে নিজেদের গ্রুপিং ও গ্রুপ লিডার গিয়াস উদ্দিনের কথা না শুনার কারণেই ওয়াহিদ মিয়াকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।’ এ ছাড়া নিহত ওয়াহিদ মিয়া একাধিক ওয়ারেন্টভূক্ত আসামি ছিল বলেও জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, এলাকায় কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে এজন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।