Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১২ রবিবার, মে ২০২৪ | ২৯ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘তুই আমার ছেলে হয়ে থাকলে থানায় গিয়ে নিজের খুনের কথা স্বীকার করবি’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫ অক্টোবর ২০১৮, ০৯:৩০ PM
আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৮, ০৯:৩০ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


হঠাৎ থানায় প্রবেশ করে এক লোক বলে, ‘ওসি সাহেব আমি আমার স্ত্রীকে হত্যা করেছি। আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন’। থানায় গিয়ে স্বামীর এমন স্বীকারোক্তিতে অনেকটা অবাক হয় থানার বড় কর্তা। পরে ওসির নির্দেশে ঘটনা যাচাইয়ে খুনির বাড়ির দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী পুলিশ পাঠিয়ে পাওয়া যায় সত্যিই তিনি তার স্ত্রীকে হত্যা করে থানায় এসেছেন আত্মসমর্পণ করতে।

এ ঘটনা ঘটেছে গতকাল শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার পঞ্চবটি এলাকায়।

জানা গেছে, হত্যার শিকার ওই গৃহবধূ নাটোর জেলার বাদীপাড়া থানার সাবদিয়া গ্রামের আবদুর রহিমের মেয়ে আফরিনর আক্তার রীনা (২৩)। আর ঘাতক স্বামী মেহেদী হাসান (২৭) মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার নিজামউদ্দিনের ছেলে।

ফতুল্লা মডেল থানার ওসি এসএম মঞ্জুর কাদের জানান, মেহেদী হাসান ও স্ত্রী আফরিন আক্তার রীনা দুজনেই পূর্বেই বিবাহিত ছিল। দুজনের আগের সংসারে সন্তান রয়েছে। তারা ফতুল্লার পঞ্চবটি এলাকার একটি হোসিয়ারিতে একই সঙ্গে কাজ করার সময় পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে।

এর মধ্যে প্রায় দুই বছর আগে তারা দুজনেই আগের সংসারে তালাক নিয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ের পর মেহেদী তার মা জোছনা বেগম, বাবা নিজামউদ্দিন ও স্ত্রী রীনাকে নিয়ে পঞ্চবটি চাঁদনী হাইজিংয়ের ওমর ফারুকের বাড়ির দ্বিতীয়তলায় বসবাস শুরু করেন।

হত্যার শিকার রীনার পরিবারের বরাত দিয়ে ওসি জানান, বিয়ের পর মেহেদীকে আড়াই লাখ টাকা ঋণ দেয় রীনার পরিবার। এই টাকা নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়। ওই সময় স্ত্রী রানী মেহেদীকে টাকার খোটা দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মেহেদী গামছা দিয়ে রীনাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

পরে মেহেদী তার মা জোছনা বেগমকে জানায়, সে রাগের বশে স্ত্রী রানীকে হত্যা করেছে। সেই সময় মেহেদীর মা জোছনা বেগম ছেলে মেহেদীকে সাফ জানিয়ে দেয়- ‘তুই যদি আমার ছেলে হয়ে থাকিস তাহলে থানায় গিয়ে নিজের খুনের কথা স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করবি’।

মায়ের কথামতো বেলা ১১টার দিকে মেহেদী ফতুল্লা মডেল থানায় চলে যায়। থানায় গিয়ে সে প্রায় আধাঘণ্টা ধরে থানা কমপাউন্ডে এদিক-সেদিক ঘোরাফেরা করতে থাকে। এতে মেহেদীর গতিবিধি থানায় কর্তব্যরতদের সন্দেহ হয় এবং মেহেদীর কাছে থানায় আসার কারণ জানতে চায় দায়িত্বরতরা।

মেহেদী জানায়, ওসি সাহেবের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেবে। পরে ওসির রুমে মেহেদীকে নিয়ে গেলে তিনি ওসিকে বলেন “আমি আমার স্ত্রীকে হত্যা করেছি। আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন”।

ঘটনার যাচাইয়ে পুলিশ পাঠিয়ে খুনের সত্যতা সঠিক হওয়ার পর আত্মসমর্পণকৃত মেহেদীকে থানায় হাজতে আটক রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি।

ওসি আরও জানান, রাগের বশে মেহেদী এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে অনুশোচনা ও তার মায়ের সৎ পরামর্শে মেহেদী থানায় এসে আত্মসমর্পণ করেছে। প্রত্যেকটি বাবা মায়ের মেহেদীর মায়ের মতো হওয়া উচিত। পাশাপাশি আমাদের সবাইকে রাগের সময় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।

Bootstrap Image Preview