বাংলাদেশ ও ভারতের সাংস্কৃতিক দল নিয়ে ১০ দিনের ‘গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব’ শুরু হবে আগামী (৫ অক্টোবর) শুক্রবার। সেদিন বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে উৎসব উদ্বোধন করবেন ভারত ও বাংলাদেশের নাট্যজন বিভাস চক্রবর্তী ও মামুনুর রশীদ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
এর আগে নাটকের দল নিয়ে ‘গঙ্গা-যমুনা নাট্য উৎসব’ আয়োজন করা হলেও এখন এর পরিধি বেড়েছে। আয়োজকদের মতে, এটি এখন ‘সাংস্কৃতিক উৎসব’। এবার উৎসবের বাজেট ধরা হয়েছে ১৮ লাখ টাকা।
আজ বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে সাংবাদিক সম্মেলনে উৎসবের বিস্তারিত জানানো হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর, নাট্যজন মান্নান হীরা, ঝুনা চৌধুরী, আকতারুজ্জামান, অনন্ত হিরা, মীর জাহিদ হাসান, নৃত্যশিল্পী সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শিরিন ইসলামসহ দেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধি।
ছয় বছর ধরে ঢাকা এবং কলকাতায় গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব পর্ষদ ‘গঙ্গা-যমুনা উৎসব’ আয়োজন করে আসছে। কলকাতায় হয় শুধু নাট্য উৎসব আর ঢাকায় হয় সাংস্কৃতিক উৎসব।
উৎসব পর্ষদের আহ্বায়ক সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘আমরা এই উৎসবে দর্শকের কাছে পৌঁছে দেব দুই বাংলার নাট্য, গীত, নৃত্য ও অভিনয়শৈলী। এতে দুই বাংলার শিল্পী ও কলাকুশলীদের পারস্পরিক বন্ধন আরও দৃঢ় করবে। দুই দেশের অভিন্ন সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং জনগণের মৈত্রীর বন্ধন দৃঢ়তর করার লক্ষ্যে মূলত আয়োজনের উদ্দেশ্য।’
৫ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তন, পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তন ও স্টুডিও থিয়েটার মিলনায়তনে চলবে এ উৎসব। উৎসবে মঞ্চনাটক, নৃত্য, আবৃত্তি, সংগীত ও পথনাটকে ভারত আর বাংলাদেশের ৯৬টি দল অংশ নেবে। এতে ভারতের চারটি দলের চারটি নাটকের প্রদর্শনী, ঢাকা ও ঢাকার বাইরের ২৬টি নাট্যদলের ৩০টি নাটকের প্রদর্শনী এবং উন্মুক্ত মঞ্চে ৯টি পথনাটক, ১৮টি আবৃত্তি সংগঠন, ১৮টি সংগীত সংগঠন, ১৮টি নৃত্য সংগঠনের নৃত্যনাট্য, একক আবৃত্তি ও একক সংগীত পরিবেশনা থাকবে।
আয়োজকদের ধারণা, আড়াই হাজার শিল্পী অংশ নেবেন এবার গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসবে। উন্মুক্ত মঞ্চের সাংস্কৃতিক পর্ব প্রতিদিন বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এবং মঞ্চনাটক প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হবে। ১২ অক্টোবর সকাল ১০টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে ‘গঙ্গা-যমুনা পাড়ের সংস্কৃতি ও একটি অনুসন্ধান’ শীর্ষক সেমিনার।
উৎসব পর্ষদের সদস্যসচিব আকতারুজ্জামান বলেন, ‘উৎসবের উদ্বোধনের জন্য আমরা দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিভিন্ন জাতীয়ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। অর্থাৎ নাটক, কবিতা, নৃত্যসহ সব অঙ্গনের প্রতিনিধি থাকবেন। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালায় ভারতের ড্যান্সারস গিল্ড পরিবেশন করবে জোনাকি সরকারের নির্দেশনায় ও মঞ্জুশ্রী চাকীর কোরিওগ্রাফিতে নৃত্যনাট্য ‘তোমারই মাটির কন্যা’। পাশাপাশি সন্ধ্যা ৭টায় স্টুডিও থিয়েটার মঞ্চস্থ হবে চন্দ্রকলা থিয়েটারের নাটক ‘তন্ত্রমন্ত্র’। শেষ দিন সমাপনী অনুষ্ঠান ছাড়াও তিন মঞ্চে তিনটি নাটক আছে।
এছাড়া উদ্বোধনী পর্বে সম্মানীত অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখবেন নাট্যসারথি আতাউর রহমান, নাট্যজন নাসির উদ্দিন ইউসুফ, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকী। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন উৎসব পর্ষদের সদস্য সচিব আকতারুজ্জামান এবং সভাপতিত্ব করবেন উৎসব পর্ষদের আহ্বায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুছ।
৫ অক্টোবর উদ্বোধনী সন্ধ্যায় মূল হলে মঞ্চস্থ হবে ড্যান্সার গিল্ড, ভারত এর নৃত্যনাট্য ‘তোমারই মাটির কন্যা’ এবং স্টুডিও থিয়েটার হলে চন্দ্রকলা থিয়েটার এর ‘তন্ত্রমন্ত্র’, ০৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় মূল হলে মঞ্চস্থ হবে অণীক, ভারত এর ‘বিষঘুম’, পরিক্ষণ হলে থিয়েটার এর ‘মেরাজ ফকিরের মা’, ০৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় মূল হলে মঞ্চস্থ হবে প্রাচ্যনাট এর নাটক ‘এ ম্যান ফর অল সিজন্স’, পরিক্ষণ হলে আরণ্যক নাট্যদল এর ‘দি জুবিলী হোটেল’, ০৮ অক্টোবর মূল হলে মঞ্চস্থ হবে প্রাঙ্গণেমোর এর নাটক ‘আওরঙ্গজেব’, পরিক্ষণ হলে ঢাকা পদাতিক এর ‘ট্রায়াল অব সূর্যসেন’ এবং স্টুডিও থিয়েটার হলে সংস্কার নাট্যদল এর ‘বশীকরণ’, ০৯ অক্টোবর মূল হলে মঞ্চস্থ হবে প্রাচ্য, ভারত এর নাটক ‘লালসালু’, পরিক্ষণ হলে লোক নাট্যদল (বনানী) এর ‘ঠিকানা’ এবং স্টুডিও থিয়েটার হলে জাগরণী থিয়েটার এর ‘আমি ও শ্যামা’, ১০ অক্টোবর মূল হলে মঞ্চস্থ হবে ঢাকা থিয়েটার এর ‘ধাবমান’, পরিক্ষণ হলে শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্র এর ‘চম্পাবতী’ এবং স্টুডিও থিয়েটার হলে নাট্যযোদ্ধা এর ‘অসমাপ্ত’, ১১ অক্টোবর মূল হলে মঞ্চস্থ হবে নাগরিক নাট্যাঙ্গন বাংলাদেশ এর নাটক ‘ক্রীতদাসের হাসি’, পরিক্ষণ হলে বিবর্তন, যশোর এর ‘ম্রাতত্বিং’ এবং স্টুডিও থিয়েটার হলে মৈত্রী থিয়েটার এর ‘কেনারাম বেচারাম’, ১২ অক্টোবর মূল হলে মঞ্চস্থ হবে বহরমপুর কলাক্ষেত্র, ভারত এর নৃত্যনাট্য ‘তাসের দেশ’, পরিক্ষণ হলে দেশ নাটক এর ‘নিত্যপুরাণ’, স্টুডিও থিয়েটার হলে স্বপ্নদল এর ‘চিত্রাঙ্গদা’, ১৩ অক্টোবর মূল হলে মঞ্চস্থ হবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রযোজনা ‘হ্যামলেট’, পরিক্ষণ হলে তরুণ সম্প্রদায়, সিরাজগঞ্জ এর ‘অসামপ্ত’ এবং স্টুডিও থিয়েটার হলে অবয়ব নাট্যদল এর ‘ফেরিওয়ালা’, ১৪ অক্টোবর মূল হলে মঞ্চস্থ হবে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় এর নাটক ‘শ্রাবণ ট্র্যাজেডি’, পরিক্ষণ হলে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় এর ‘গ্যালিলিও’ এবং স্টুডিও থিয়েটার হলে নাট্যদল এর ‘ইতিবৃত্ত’ এবং মেষদিন ১৫ অক্টোবর মূল হলে থিয়েটার আর্ট ইউনিট এর ‘মর্ষকাম’, পরিক্ষণ হলে ভিশন থিয়েটার এর ‘নৈশভোজ’ এবং স্টুডিও থিয়েটার হলে রঙ্গপীঠ এর ‘মহেষ’।
উন্মুক্ত মঞ্চের সাংস্কৃতিক পর্বে অংশগ্রহণকারী দলগুলো ০৬ অক্টোবর বহ্নিশিখা, ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী, নটরাজ, কথা আবৃত্তি চর্চাকেন্দ্র, ঢাকা স্বরকল্পন, তাল কালচারাল একাডেমি ও গতি থিয়েটার, ০৭ অক্টোবর কন্ঠশীলন, প্রকাশ সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন, পঞ্চভাস্কর, সুরতাল সঙ্গীত একাডেমি, স্বপ্নবিকাশ কলাকেন্দ্র, সপ্তকলির আসর ও নাটনন্দন, ০৮ অক্টোবর স্বভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র, সুরসাগর ললিতকলা কেন্দ্র, সংবৃতা আবৃত্তি চর্চা ও বিকাশ কেন্দ্র, আবৃত্তি একাডেমি, বহ্নিশিখা, সন্ধান লিটল থিয়েটার ও বাঙলা নাট্যদল, ০৯ অক্টোবর পদাতিক সঙ্গীত সংসদ, মিরপুর সাংস্কৃতিক একাডেমি, ত্রিলোক বাচিক পাঠশালা, বৈকুন্ঠ আবৃত্তি একাডেমি, নৃত্যাক্ষ, কচি-কাঁচার মেলা (দনিয়া) ও রঙ্গণা, ১০ অক্টোবর মুক্তধারা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র, চারুকন্ঠ, নিবেদন, নান্দনিক নৃত্য সংগঠন, রঙ্গপীঠ শিশুদল ও নাট্যভূমি, ১১ অক্টোবর কল্পরেখা, স্বরব্যঞ্জন, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, রংধনু, ছন্দে ছন্দে (ভারত) ও উত্তরীয় থিয়েটার, ১২ অক্টোবর সুবচন নাট্য সংসদ, শ্রুতিঘর, বাক্শিল্পাঙ্গন, ওস্তাদ মোমতাজ আলী খান একাডেমি, আনন্দন, নৃত্যজন ও মৈত্রী শিশুদল, ১৩ অক্টোবর মুক্তধারা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র, স্রোত আবৃত্তি সংসদ, ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী, উজান, আঙ্গিকাম, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর ও নাট্যকুঞ্জ, ১৪ অক্টোবর স্বরশ্রুতি, মুক্তবাক, ভিন্নধারা, বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস, মন্দিরা সাংস্কৃতিক পাঠশালা ও উৎস নাট্যদল এবং শেষ দিন ১৫ স্পন্দন, মাইম আর্ট, মুক্তমঞ্চ নির্বাক দল, একক সঙ্গীত ও মিলন কান্তি দে কর্তৃক যাত্রাপালা’র অংশবিশেষ পাঠ।
১২ অক্টোবর ২০১৮ সকাল ১০টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি’র জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে ‘গঙ্গা-যমুনা পাড়ের সংস্কৃতি ও একটি অনুসন্ধান’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন নাট্যজন অনন্ত হিরা, সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসোবে উপস্থিত থাকবেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, বিশেষ অতিথি হিসাবে থাকছেন ভারতের নাট্যজন প্রকাশ ভট্টাচার্য্য, সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতিজন গোলাম কুদ্দুছ।
১৫ অক্টোবর ২০১৮ সন্ধ্যা ৬টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি’র জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে ০৫-১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ১১ দিনব্যাপী “গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব ২০১৮” এর সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সচিব নাসির আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন- একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যজন কেরামত মওলা, গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের সভাপতি নাট্যজন মান্নান হীরা, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সেক্রেটারী জেনারেল নাট্যজন কামাল বায়েজিদ, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি মিনু হক, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহকামউল্লাহ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন উৎসবের সদস্য সচিব নাট্যজন আকতারুজ্জামান। সভাপতিত্ব করবেন গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব পর্ষদের আহ্বায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুছ।
উৎসব আয়োজনে সহযোগিতা করছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এবং মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড।