দেশের পোশাক কারখানায় প্রথমবারের মত নিয়োগ পেলো হিজড়া সম্প্রদায়। ইউএসএআইডি ও হিজড়াদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন বন্ধু সমাজ কল্যাণ সোসাইটির সহযোগিতায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রথমে ৫ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেড কোম্পানিতে।
বেসরকারি খাতের তরুণ উদ্যোক্তা ও বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোস্তাফিজ উদ্দিন প্রায় অর্ধশতাধিক হিজড়াদের কর্মসংস্থানের জন্য এই ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
দেশের পোশাক কারখানা হিসেবে এটাই প্রথম। ইতিমধ্যেই ২ জন কর্মস্থলে যোগদান করেছেন। এরা হলেন- শিমা আক্তার ও দিলরুবা আক্তার। শিমা উৎপাদন কাঠামোর জুনিয়র সেফটি অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করছে। আর দিলরুবা হাউজকিপিং দলের একজন জুনিয়র সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করছে।
চট্টগ্রামে অবস্থিত ডেনিম এক্সপার্ট লি. সামাজিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে। পুরো এই কারখানায় ১৭০০ শ্রমিক কাজ করেন।
এ বিষয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, তৈরি পোশাকখাতে হিজড়াদের কাজে লাগানোর ধারণা আগে আমার ছিল না। এ ধরনের উদ্যোগ ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতার সৃষ্টি হবে।
জানা যায়, ২০১৩ সালে সরকার হিজড়াদেরও হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় তাদের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বীকৃতি পেলেও অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হতে হয় তাদের।
ওই সময় তাদের ট্রাফিক? পুলিশে চাকরি দেয়ারও সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত পরে আর আলোর মুখ দেখেনি। তবে অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে সম্মানজনকভাবে অর্থ উপার্জন করতে পেরে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন তারা।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের মতে, বাংলাদেশে হিজড়ার সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, এর সংখ্যা আরো বেশি।
কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফিজ উদ্দিন জানান, কর্মক্ষেত্র সবার জন্য সমান। হিজড়াদের মূল্যায়ন করা উচিত। হিজড়াদের নিয়ে লিঙ্গ, ধর্ম বা যৌন প্ররোচনা সত্ত্বেও সকলের সমান সুযোগ দেয়ার তাগিদ থেকেই তাদের কাজ দেয়ার চেষ্টা করছি। হিজড়াদের অন্যদের মতো সমান সুযোগ-সুবিধা দিতে ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেড ও বন্ধু সোসাইটির মাঝে একটি অংশীদারিত্ব হয়েছে।
তিনি আরও জানান, শিমা আক্তার ও দিলরুবা আক্তার হিজড়া কমিউনিটির সদস্য। তারা আমার কারখানায় কাজ শুরু করেছে। এজন্য আমি খুবই গর্বিত। শিমা ও দিলরুবাও গর্বিত ও আনন্দিত। কারণ তারা কখনো ভাবেননি যে সমাজের এতো বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে।
দিলরুবা আক্তার জানান, ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেড শুধু একটি কারখানা নয়, এটি আমার কাছে এখন একটি পরিবার। সমস্ত কর্মচারী আমাকে শ্রদ্ধা করে এবং আমার কাজে আমাকে সাহায্য করে।
এই কাখানায় চাকরি করায় সমাজে আমার গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। এছাড়া এই চাকরি ইতিমধ্যে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের দরজা খুলতে সাহায্য করছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, ডেনিম কারখানায় যোগদান করার আগে আমার পরিবার আমাকে অসম্মানিত করেছিল এবং আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। কিন্তু এখন আমার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। দিলরুবার দায়িত্ব সুপারভাইজারের নির্দেশনায় অফিসের পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষণাবেক্ষণ।
শিমা আক্তার বলেন, পোশাক খাতের একজন কর্মী হয়ে আমি গর্বিত। আমার আর অন্যদের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে না। এই করখানার সবাই খুব সহায়ক এবং আমাদের খুব ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে। কারখানা মালিক মোস্তাফিজ উদ্দিন আমাকে সম্মান করেন এবং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পর্ষদ খুব সহায়ক।
আমি আমার সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে সেরা হওয়ার চেষ্টা করছি। শিমা উৎপাদন কাঠামোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার কাছে নিয়োজিত। এতে অগ্নি এবং বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা সভার ব্যবস্থা করা, শ্রমিকদের পরিচয়পত্র এবং ইউনিফর্ম পর্যবেক্ষণ করা এবং নিরাপত্তা কমিটির সঙ্গে কাজ করা।
এছাড়া এ বিষয়ে বন্ধু সমাজ কল্যাণ সোসাইটির প্রধান নির্বাহী সালেহ আহমেদ বলেন, হিজড়ারা প্রায়শই সমাজ ও তাদের পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তখন এটা নিয়ে আমি ভাবতে থাকি।
তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দিলে সমাজ ও দেশে অবদান রাখতে পারবে। এজন্য বন্ধু এবং ইউএসএআইডি-এর সঙ্গে একটি অংশীদারিত্বের মধ্যে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
পরে হিজড়ারা ডেনিম এক্সপার্ট পরিবারে সদস্য হয়ে যান। অর্থাৎ বাংলাদেশে হিজড়াদের অন্তর্ভুক্তির পদক্ষেপ হিসেবে প্রথম পোশাক কারখানা এটি।
কারখানায় শিমা ও দিলরুবাকে কোম্পানির শ্রমিকরা তাদের ভালোভাবে গ্রহণ করেছে। তারা তাদের দায়িত্ব সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য শ্রমিকদের সঙ্গে ভালোভাবে কাজ করছে