Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৫ রবিবার, মে ২০২৪ | ২২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পরকীয়া থেকে সরে যাওয়ায় রুবিনাকে হত্যা করে ভগ্নিপতি কামাল

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১ অক্টোবর ২০১৮, ১১:০৯ PM
আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৮, ১১:০৯ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


পরকীয়া সম্পরক থেকে সরে দাঁড়ানোয় শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বড়মূলনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রুবিনা আক্তার রুমাকে হত্যা করে তারই ভগ্নিপতি সাজ্জাদ হোসেন ওরফে কামাল।

রবিবার শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে হাসান খুনের কথা স্বীকার করে এ তথ্য জানান গ্রেফতারকৃত আসামি মেহেদী।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মেহেদী হাসান জানায়, যুবলীগ নেতার নির্দেশে ও তার হুকুমে রুবিনা আক্তার রুমাকে হত্যা করা হয়।

গ্রেফতারকৃত অপর আসামি যুবলীগের নেতা সাজ্জাদ হোসেন ওরফে কামাল মাদবর ওরফে তমি কামালকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। আগামী ৪ অক্টোবর রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে যুবলীগের গ্রেফতারকৃত নেতা এখনো মুখ খোলেনি।

জাজিরা থানা পুলিশ জানায়, জাজিরা উপজেলার বড় মূলনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রুবিনা আকতার রুমা হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নিহতের ভগ্নিপতি সাজ্জাদ হোসেন ওরফে কামাল মাদবর ওরফে তমি কামালকে পুলিশ গত ২৭ সেপ্টেম্বর বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় জাজিরার মাঝিরঘাট এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। এরপর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তমি কামালের ভাতিজা মেহেদী হাসানকে গ্রেফতার করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশের কাছে রুমাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।

রোববার পুলিশ মেহেদী হাসানকে শরীয়তপুর চিফ জডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে। এ সময় আদালতের বিচারক অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. নিজাম উদ্দিনের কাছে আসামি মেহেদী হাসান রুবিনা আকতার রুমাকে হত্যার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

জবানবন্দিতে তিনি বলেন, গত ২১ সেপ্টেম্বর রাত ২টায় নিহত রুবিনার ভগ্নিপতি জাজিরা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন ওরফে কামাল মাদবর ওরফে তমি কামালের বাড়িতে কামাল মাদবর ও মেহেদী হাসানসহ আরও ৩ জনের সহযোগিতায় পূর্বপরিকল্পিতভাবে শ্বাসরোধ করে রুবিনা আকতারকে হত্যা করা হয়। এরপর তারা লাশ ঘরে রেখে দেয়। পরদিন শনিবার রুবিনার আত্মীয়স্বজন তাকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে জাজিরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এ সংবাদের পর খুনিরা শনিবার গভীর রাতে লাশ নিয়ে রুবিনাদের বাড়ির পেছনে বাঁশঝাড়ের ভেতর দাঁড় করে ওড়না দিয়ে বাঁশের সঙ্গে লাশ বেঁধে রাখে এবং তার চুল অপর বাঁশের সঙ্গে বেঁধে রাখে।

স্বীকারোক্তিতে মেহেদী আরও জানান, ভগ্নিপতি তমি কামালের সঙ্গে দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর ধরে রুবিনার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। রুবিনার সব ব্যাংক বিমাসহ আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে তমি কামাল জড়িত রয়েছে। সবকিছুর নমিনি তমি কামাল। ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর একই উপজেলা বড়মূলনা গ্রামের ইতালি প্রবাসী আক্তার হোসেন মল্লিকের সঙ্গে রুবিনার বিয়ে হয়।

তিনি জানান, এরপর থেকে রুবিনা কামালের কাছ থেকে সরে যাওয়ার জন্য তার দেয়া টাকাপয়সা ফেরত চায়। এ নিয়ে রুবিনার ওপর ক্ষিপ্ত হন তমি কামাল। এ ঘটনার জের ধরে তমি কামাল রুবিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এ হত্যাকাণ্ড যুবলীগ নেতা সাজ্জাদ হোসেন ওরফে কামাল মাদবর ওরফে তমি কামালের নির্দেশে ও হুকুমে হয়েছে বলে মেহেদী হাসান জানান। আদালতের বিচারক মেহেদী হাসানের জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। গ্রেফতারকৃত খুনের মূলহোতা নিহত রুবিনার বোনজামাই তমি কামালকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করলে আদালত আগামী ৪ অক্টোবর রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন।

এ ঘটনায় জড়িত অপর ৩ আসামিকে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

মামলার বাদী নিহতের ভাই সামসুল হক মুন্সি বলেন, আমার বোনকে যারা হত্যা করেছে আমি তাদের বিচার চাই। আমার ধারণা মেহেদী হাসানের মা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও তথ্য উদঘাটন হবে।

এ ব্যাপারে জাজিরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দীন শেখ বলেন, রুবিনা হত্যার সঙ্গে জড়িত দুই আসামিকে গ্রেফতার করে কোর্টে সোপর্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে আসামি মেহেদী হাসান আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। অপর মূলহোতা তমি কামালের রিমান্ড শুনানি ৪ অক্টোবর। অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

Bootstrap Image Preview