অসুস্থাজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি দেখিয়ে দুদকে হাজির হননি ডিআইজি মিজানুর রহমান। অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শেষ করতে তাকে আজ রবিবার দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা ছিল।
তার এক আইনজীবীর মাধ্যমে দুদকে চিঠি পাঠিয়ে তিনি সময় চেয়ে জানান, তিনি হার্টের সমস্যার কারণে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট ডা. এমএ রশিদের তত্ত্বাবধানে ভর্তি আছেন। সুস্থ হওয়ার পর সুবিধামতো সময়ে দুদকে হাজির হবেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এই চিঠির বিষয়ে দুদকের সংশ্লিষ্ট একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ডিআইজি মিজান যে চিকিৎসকের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে উল্লেখ করেছেন, সে বিষয়ে দুদকের গোয়েন্দা সেল অনুসন্ধান করবে। তিনি মিথ্যা তথ্য দিলে নতুন করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। এছাড়া দুদকের অনুসন্ধান যথা নিয়মে শেষ হবে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে ডিআইজি মিজানুর রহমানের নামে ৪৬ লাখ ৩২ হাজার ১৯১ টাকার এবং তার স্ত্রীর নামে ৭২ লাখ ৯০ হাজার ৯৫২ টাকার অসংগতিপূর্ণ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানের ধারাবাহিকতায় দুদক আইনের ২৬(১) ধারায় মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্নার নামে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারি করে সংস্থাটি। হিসাববহির্ভূত সম্পদের খোঁজ পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিআইজি মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ২০ সেপ্টেম্বর তলব নোটিশ পাঠায় দুদক।
এর আগে ১১ জুলাই অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়ে সাত কর্মদিবসের মধ্যে সম্পদ বিবরণী জমা দিতে নোটিশ পাঠায় দুদক। ২০ সেপ্টেম্বর বিকালে দুদকের উপপরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারীর স্বাক্ষরে মিজান দম্পতিকে ৩০ সেপ্টেম্বর দুদকে হাজির হতে আইজিপির মাধ্যমে নোটিশ পাঠানো হয়।
১১ জুলাই এ পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর সম্পদের হিসাব জমা দেয়ার জন্য নোটিশ জারি করে দুদক। সম্পদ বিবরণী দাখিলের পর দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে ডিআইজি মিজানের নামে স্থাবর-অস্থাবর ১ কোটি ৫৩ লাখ ৭০ হাজার ৭৬৩ টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৭৯ লাখ ৩৬ হাজার ৬৫০ টাকার স্থাবর ও ৭৪ লাখ ৩৪ হাজার ১১৩ টাকার অস্থাবর সম্পদ। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে পুলিশ অফিসার্স হাউজিং সোসাইটির আওতায় পাঁচ কাঠা জমি, পূর্বাচলে পাঁচ কাঠা জমি, পুলিশ অফিসার্স বহুমুখী সমবায় সমিতির আওতায় ৭ কাঠা ৫০ শতাংশ জমি এবং অ্যাডভান্স পুলিশ টাউনে ফ্ল্যাট। অন্যদিকে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে নিজ এলাকায় ৩২ শতাংশ জমিতে ২ হাজার ৪০০ বর্গফুটের বিলাসবহুল দ্বিতল বাড়ি রয়েছে তার। এটি নির্মাণে ৬৩ লাখ ৭০ হাজার ৬৪১ টাকা খরচ করা হয়েছে।
ডিআইজি মিজানের স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না আয়কর নথিতে স্থাবর ও অস্থাবর মোট ৮৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯৩৫ টাকার সম্পদের তথ্য দিয়েছেন। অথচ আয়ের উৎস পাওয়া যায় মাত্র ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৯৮৩ টাকা। অর্থাৎ দুদকের অনুসন্ধানে আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৭২ লাখ ৯০ হাজার ৯৫২ টাকার সম্পদ রয়েছে।
এছাড়া মিজানুর রহমানের ভাই মাহবুবুর রহমান স্বপনের নামে রাজধানীর বেইলি রোডে বেইলি রোজ নামের বাড়িতে ২ হাজার ৪০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট ও ভাগ্নে পুলিশের এসআই মাহামুদুল হাসানের নামে চাকরিতে প্রবেশের আগেই ঢাকার পাইওনিয়ার রোডে ২০০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া যায়। দুদক মনে করছে, ডিআইজি মিজান তাদের নামে এসব সম্পদ করেছেন।