প্রতিমাসে কোটি টাকার জাল নোট বাজারজাত করে আসছিল দেশের সর্বোচ্চ জালনোট প্রস্তুতকারী চক্রটি। শুক্রবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে তুরাগ থানাধীন বাউনিয়া থেকে এই অপরাধ চক্রের প্রধান ইমনসহ ছয়জনকে আটক করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। আটকের সময় প্রায় ০৭ কোটি টাকা সমমূল্যের জালনোট প্রস্তুতের সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিবি সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃত আসামি মোঃ আবুল হোসেন ওরফে ইমন তার প্রথম জীবনে কাউছার নামে একজনের সাথে জাল টাকা তৈরিতে সহযোগী হিসাবে কাজ করতো। পরবর্তীতে ২০১৩ সাল থেকে নিজেই সরঞ্জামাদি ক্রয় করে জাল টাকা প্রস্তুত করে মার্কেটে ছাড়তে শুরু করে এবং হয়ে উঠে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জালনোট প্রস্তুতকারী চক্রের প্রধান হোতা।
জাল টাকা তৈরীর অপরাধে ইমন এর পূর্বে একবার গ্রেফতারও হয়েছিল। কিন্তু কারাগার থেকে বের হয়ে আবারও এই কাজ শুরু করে সে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইমন স্বীকার করেছে ,‘সে প্রতি মাসে প্রায় এক কোটি টাকার জাল নোট তার নিয়োজিত ডিলারের মাধ্যমে বাজারজাত করত’।
ডিবি সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রতারক চক্রটি আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও দূর্গা পূজাকে সামনে রেখে প্রায় চার পাঁচ কোটি টাকা মার্কেটে ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন গোপন তথ্য ছিল ডিবির গোয়েন্দা বিভাগের কাছে। আর এ তথ্যের ভিত্তিতে বেশকিছু দিন ধরে কাজ করে আসছে তাদের একটি টিম। তবে প্রতারক চক্রের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পূর্বেই ২৮ সেপ্টেম্বর বিকালে তুরাগ থানাধীন ০৮ নং ওয়ার্ডের বাউনিয়া বাদালদী রোডের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ইমন ও তার সহযোগীদের আটক করতে সক্ষম ডিবি। অভিযানে গ্রেফতারকৃত বাকী ৫ আসামি হলো- শেখ সুমন (৩২), মোঃ ছগির হোসেন ওরফে শাহীন (৪২), মোঃ ইকবাল হোসেন (৩২), স্বপ্না (১৯) ও তৌকীর আহম্মেদ ওরফে সুজন (৩০)।
গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে ৫১ লক্ষ জাল টাকার নোট এবং জাল টাকা তৈরির কাজে ব্যবহৃত ১টি ল্যাপটপ, ০২ টি কালার প্রিন্টার, টাকা তৈরির বিভিন্ন কাগজ, প্রিন্টারে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের কালি, স্কীন বোর্ড, জাল টাকায় ব্যাবহৃত ফয়েল পেপার ও বাংলাদেশী প্রচলিত আসল ২৯,৮,০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
ডিবি সূত্রে আরো জানায় সে ও তার সহযোগীরা মিলে আর্থিকভাবে অভাবি লোকদের দিয়ে উত্তরাসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে জাল টাকার ব্যবসা করে আসছিল। আর তাদের এই কারখানার প্রিন্টের কাজে ব্যবহৃত কালি সরবরাহের কাজটি দীর্ঘদিন ধরে আসছিল সুজন।
বাজারে জালনোট ছড়ানোর কৌশল বর্ণনা করে ডিবি সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃতরা প্রতিনিধি সংগ্রহ করে তাদের তৈরিকৃত জাল টাকা বাজারজাত করন ব্যবসার বিস্তার করত। উৎপাদকের এক লক্ষ টাকা তৈরি করতে খরচ হত প্রায় ১০ হাজার টাকা, পাইকারী বিক্রেতার নিকট বিক্রি করত ১৪-১৫ হাজার টাকায়। প্রাইকারী বিক্রেতা ১ম খুচরা বিক্রেতার নিকট বিক্রি করে ২০-২৫ হাজার টাকায়, ১ম খুচরা বিক্রেতা ২য় খুচরা বিক্রেতার নিকট বিক্রি করে ৪০-৫০ হাজার টাকায় এবং ২য় খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে সেই টাকার মূল্য হয়ে যায় আসল এক লক্ষ টাকার সমান। মাঠ পর্যায়ে কর্মীরা বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য/দ্রবাদি ক্রয় এর মাধ্যমে এই জাল নোট বাজারজাত করত।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন থানায় জাল নোট সংক্রান্তে একাধিক মামলা রয়েছে। এ সংক্রান্তে তুরাগ থানায় মামলা রুজু হয়েছে।