১১ দফা দাবিতে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী পণ্যবাহী নৌযানে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশন। ১১ দফা দাবি আদায় না হলে আজ বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে এ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন সংগঠনটি। তবে যাত্রীবাহী নৌযান কর্মবিরতির আওতার বাইরে থাকবে বলে জানান তারা।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. শাহ আলম ভূঁইয়া। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম।
সংবাদ সম্মেলনে শাহ আলম ১১ দফা দাবি তুলে ধরে বলেন, মালিকদের সংগঠনগুলো, শ্রম অধিদফতর, নৌ-পরিবহন অধিদফতর, বিআইডব্লিউটিএসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ১১ দফা দাবি জানিয়েছি।
দাবিসমূহ
১. প্রত্যেক নৌ-যান শ্রমিককে মালিক কর্তৃক নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র এবং সার্ভিস বুক প্রদান করতে হবে।
২. নৌ-যান শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বাধ্যতামূলক গ্রুপবীমা কন্ট্রিবিউটারী ফান্ড চালু এবং ফিশিং ট্রলার ও নৌ-যান শ্রমিকদের জন্য আলাদাভাবে কল্যাণ তহবিল গঠন করতে হবে।
৩. কর্মস্থলে ও দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরণকারী প্রত্যেক নৌ-শ্রমিকের পরিবারকে ১০ (দশ লক্ষ) টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
৪. ভারতগামী নৌ-যানসমূহের শ্রমিকদের জন্য খাদ্যভাতা পূনঃনির্ধারণ, কোস্টার, ট্যাংকার ও অভ্যন্তরীণ নৌ-যানের শ্রমিকদের জন্য খাদ্যভাতা চালু করতে হবে।
৫. চট্টগ্রাম বন্দর বহিঃনোঙ্গর, কুতুবদিয়া ও মংলা বন্দর এর ফেয়ারওয়ে ও হারবারিয়া এবং পায়রা বন্দরে চলাচলকারী জাহাজের জন্য সী-এ্যালাউন্স চালু করতে হবে।
৬. প্রত্যেক নৌ-যানের মাস্টার/ড্রাইভার যারা নৌ-যানের ইনচার্জ হিসাবে কর্মরত থাকেন তাদের জন্য ইনচার্জ (দায়িত্ব ভাতা) এ্যালাউন্স চালু করতে হবে।
৭. মাস্টারদের জন্য প্রতিটি এণ্ডোর্সমেন্টে ২টি করে ও ড্রাইভারদের জন্য টেকনিক্যাল ভাতা হিসাবে ২টি করে ইনক্রিমেন্টের সমপরিমাণ টাকা প্রদান করতে হবে।
৮. নৌ পথে ও ঘাটে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৯. ক) নদীর নাব্যতা রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
খ) নৌ-প্রটোকল রুটে ভারতের বিভিন্ন পয়েন্টে নদীর নাব্যতা রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
গ) বালাদেশ ও ভারতে নৌ-যান চলাচলে নৌ পথে জাল পাতা বন্ধ করতে হবে।
ঘ) বাংলাদেশ ও ভারতের নদীসমূহের বিভিন্ন নৌ-পথে প্রয়োজনীয় মার্কা, বয়া ও বাতির ব্যবস্থা করতে হবে।
ঙ) ঢাকা নদী বন্দরে জাহাজ রাখার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ ও দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় নৌ-যানসমূহ নিরাপদ আশ্রয়ে রাখার জন্য ৫টি প্রোতাশ্রয় নির্মাণ করতে হবে।
চ) চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ রাখার জন্য ব্যাপক সংখ্যক মুরিং বয়া স্থাপন এবং প্রোতাশ্রয় তৈরি করতে হবে।
ছ) মংলা, পশুর নদীতে মুরিং বয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
জ) চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে দূর্ঘটনায় পতিত জাহাজের শ্রমিকদের উদ্ধার ও চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্বলিত উদ্ধারকারী যানের ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. প্রটোকল চুক্তি অনুযায়ী যাতে কলিকাতা, বজবজ, নামখানা ও হলদিয়াসহ ব্যাংকারীং পয়েন্টে জাহাজ থাকার সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা-কাটার জন্য কিনারে নামার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা এবং জেল, জুলুম ও লাঞ্ছনার শিকার যাতে না হয় তার প্রয়োজনীয় কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১১. মেরীন আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ না করে কেবলমাত্র সাজা বৃদ্ধি না করা। দেশীয় নৌ-যানের সংস্থা নির্ধারণ না করে দেশীয় নৌ-যানের নামে মাস্টার/ড্রাইভারবিহীন বৃহদায়তনের নৌ-যানগুলোর সার্ভে রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার ফলে নৌ শিল্পকে নিরাপত্তাহীন করা এবং উপযুক্ত সনদধারী ও বে-ক্রসিং-এর অনুমোদন ছাড়া বালুবাহী নৌ-যান চট্টগ্রাম বন্দরে বর্হিনোঙ্গর এবং মংলা বন্দরের ফেয়ারওয়ে ও হারবারিয়ায় পণ্য খালাস প্রক্রিয়া বন্ধ করা, পরীক্ষায় অনিয়ম বন্ধ ও মেরীন কোর্টের হয়রানি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।