Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৫ রবিবার, মে ২০২৪ | ২২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

'ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক না হলে সড়ক বাঁচানো যাবে না'

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:৪৪ AM
আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:৪৬ AM

bdmorning Image Preview


সড়ক নষ্ট হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে পানি নিষ্কাশন না করা। রাস্তায় পানি জমে সড়কের টেকসই অবকাঠামো ধ্বংস করে দিচ্ছে। এতে করে ১০ বছরের জন্যে নির্মিত সড়ক ২ বছরেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন সড়ক গবেশণাগারের মহাপরিচালক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন পেইঞ্জ।

আজ রবিবার বেলা ১১ টায় সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের উদ্যোগে রাজধানী ঢাকায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি কনফারেন্স রুমে 'বাংলাদেশে মানসম্মত সড়ক অবকাঠামো নির্মাণঃ সমস্যা ও সম্ভাবনা' শীর্ষক সেমিনারে মূলপ্রবন্ধে তিনি এ কথা বলেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সড়ক গবেশণাগারের মহাপরিচালক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন পেইঞ্জ। সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসানের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন বুয়েটে পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামসুল হক ও নগরবিদ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন।

মো. নজরুল ইসলাম বলেন, রাস্তার ড্রেনেজ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এতে করে
টেকসই সড়ক হচ্ছে না। ওভারলোডের কারণে রাস্তা নষ্ট হচ্ছে কিন্তু সড়ক নীতিমালা আইনে সেখানে জরিমানার বিষয়টি কেটে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, যানবাহন মালিক সমিতি নানা ধরনের আশ্বাস দিলেও তারা কথা রাখে না। ওভারলোডের কারণে ব্রিজ নষ্ট হচ্ছে। রাস্তা নষ্ট হচ্ছে এটি বন্ধ করতে হবে।

ড. মামুন বলেন, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশে ১৯৭৪-৭৫ সালে মাত্র ৩৭ শতাংশ যাতায়াত ছিল সড়ক পথে। এখন এটি দাঁড়িয়েছে ৮০ শতাংশে। সড়ক ও জনপদের ২১ হাজার ৩১৮ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। এখান হাইওয়ে রাস্তার পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, হাইওয়েতে অনেক ভারি যানবাহন চলাচল করে ক্যাপাসিটির চেয়ে বেশি মালামাল নিয়ে। এর জন্যে তদারকি আরও বাড়ানো প্রয়োজন।

ড. মামুন বলেন, আমাদের নদীগুলো নাব্যতা হারাচ্ছে। অথচ নদীপথ একটি বিরাট সম্পদ। কন্টেইনারগুলো নদীপথে আনা-নেওয়া করাতে হবে।

তা ছাড়া কমলাপুরের কন্টেইনার স্টেশনটিকে গাজিপুরে স্থানান্তরের দাবি জানান তিনি।

তিনি বলেন, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশের প্রাথমিক কাজ ছিল রাস্তা মেরামত করা। এখন এটি করিডোরভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

ড. মামুন বলেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে রাস্তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিটুমিনের প্রধান শত্রু পানির সাথে আমাদের অবস্থান। এটির বিকল্প চিন্তা করার সময় চলে এসেছে। এভাবে রাস্তা নির্মাণে জাতীয় অর্থের অপচয় হচ্ছে যা দেশকে পিছিয়ে দিচ্ছে। রাস্তা নির্মাণের কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমরা প্রাকৃিতক জিনিস ব্যবহার করতে পারি।

তিনি বলেন, এখন ২১ হাজার কি.মি রাস্তা থাকলেও আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যে ৮০ হাজার কি. মি. রাস্তা প্রয়োজন ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে।

অধ্যাপক ড. মো. শামসুল হক বলেন, জাতীয় উন্নয়নের জন্যেই সড়কের অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে। পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশে স্ট্যান্ডার মানের সড়ক নির্মাণ করা হয় কিন্তু আমাদের দেশে কি হচ্ছে?

তিনি বলেন, রাস্তার বিভিন্ন মোড় আমাদের সময় ও শক্তিগুলো খেয়ে নিচ্ছে। অর্থনীতি শ্লথ করে দিচ্ছে। এ জন্যে মোড়গুলো যাতে সহজ করা যায় সেভাবে এগিয়ে যেতে হবে।

ড. মো. শামসুল হক বলেন, দেশের বড় বড় ১১টি বাঁক সোজা করে দেওয়ার কারণে ৮০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা কমে গেছে। তাই রাস্তা নির্মাণের সময় জনকল্যাণ বিষয়টি ভাবতে হবে। ৯৩ শতাংশ কন্টেইনার সড়ক পথে আনা-নেওয়া করানো হয়। এটি নদী ও রেলপথের সাথে সংযোগ করে কমিয়ে আনতে হবে।

মোবাশ্বের হোসেন বলেন, হাঁটাকে আনন্দদায়ক করতে হবে। আমাদের দেশের মাত্র ৮ শতাংশ মানুষ ফ্লাইওভার ব্যবহার করে। এতো উঁচু করে এগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে মানুষ তা ব্যবহারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তাই আন্ডারপাসের দিকে এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে গবেষক নিয়োগ না দিয়ে বরং অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের এই সেক্টরে নিয়ে আসা প্রয়োজন।

মোবাশ্বের হোসেন বলেন, হাইওয়েতে ট্রাক চলাচল বেশি করে অথচ এদের বিশ্রামের জন্যে কোন জায়গা নেই। ফলে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে।

তিনি বলেন, কৃষকরা আমাদের খাদ্য উৎপানে বিপ্লব ঘটাচ্ছে অথচ এদের কথা আমরা মাথায় রাখছি না। তাদের উৎপাদিত পণ্যের যথাযথ বাজার নিশ্চিত করতে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো করতে হবে।

সাংবাদিক কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গীকার ঠিক না থাকলে কোন উন্নতি সম্ভব নয়। সড়ক ব্যবহারে মানুষকে সচেতনার সাথে সাথে কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমের নজরদারী বাড়াতে হবে।

Bootstrap Image Preview