Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১১ শনিবার, মে ২০২৪ | ২৮ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

শুরু থেকে শেষ; যেভাবে প্রকাশ হলো শিমু হত্যার রহস্য

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারী ২০২২, ১১:৩১ PM
আপডেট: ১৮ জানুয়ারী ২০২২, ১১:৩১ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


বস্তাবন্দি লাশের সঙ্গে পাওয়া প্লাস্টিকের সুতার সূত্র ধরে অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। মরদেহ উদ্ধারের পর ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে গ্রেফতার করা হয় শিমুর স্বামী শাখাওয়াত আলীম নোবেল (৪৮) ও তার বাল্যবন্ধু এস এম ওয়াই আব্দুল্লাহ ফরহাদকে (৪৭)।

পুলিশ জানায়, পারিবারিক কলহের জের ধরে স্ত্রী শিমুকে হত্যা করেন নোবেল। অথচ আগের দিনই কলাবাগান থানায় স্ত্রী নিখোঁজের বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি।

পুলিশ সূত্র জানায়, লাশ উদ্ধারের পর তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে নিহত নারীর পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে এবং অভিনেত্রী শিমুর বাসায় গিয়ে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে। এ সময়ই একটি প্লাস্টিকের সুতার সূত্র ধরে উদঘাটিত হয় হত্যার মূল রহস্য।

সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, লাশ গুম করতে দুটো বস্তা যে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করা হয়েছিল, সেই সুতারই হুবহু এক বান্ডিল শিমুর স্বামী নোবেলের গাড়িতে পাওয়া যায়। গাড়িটি ধোয়া ছিল এবং দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানো ছিল। তাৎক্ষণিকভাবে সন্দেহ হওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোবেলকে আটক করে পুলিশ।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানা হেফাজতে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন।

যেভাবে হত্যা করা হয় শিমুকেঃ শিমুর স্বামী নোবেলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, পারিবারিক কলহের জেরে তিনি শিমুকে হত্যা করেছেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রোববার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ৭টা-৮টার দিকে তিনি শিমুকে গলাটিপে হত্যা করেন। এরপর ফরহাদকে মুঠোফোনে কল করে ডেকে নেন।

পরে ফরহাদ ও নোবেল পরিকল্পনা করে বাইরে থেকে বস্তা এনে শিমুর লাশ লম্বালম্বিভাবে দুটি পাটের বস্তায় ভরে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করেন। এরপর বাড়ির দারোয়ানকে নাশতা আনতে বাইরে পাঠিয়ে নিজের ব্যক্তিগত গাড়ির পেছনের আসনে শিমুর লাশ নিয়ে বেরিয়ে যান।

লাশ নিয়ে আবার বাসায় ফিরেন নোবেলঃ প্রথমে নোবেল ও ফরহাদ মিরপুরের দিকে গিয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে লাশ গুমের উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে তারা আবার বাসায় ফেরেন। রোববার সন্ধ্যায় আবার তারা লাশ গুম করতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, বছিলা ব্রিজ হয়ে কেরানীগঞ্জের দিকে যান। আনুমানিক রাত সাড়ে ৯টায় মডেল থানার হযরতপুর ইউনিয়নের কদমতলী এলাকার আলীপুর ব্রিজের ৩০০ গজ দূরে সড়কের পাশে ঝোপের ভেতর লাশটি ফেলে চলে যান তারা।

অভিনেত্রী শিমু সপরিবারে রাজধানীর কলাবাগান থানাধীন গ্রিন রোড এলাকায় থাকতেন। সোমবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানার হযরতপুর ইউনিয়নের আলীপুর ব্রিজ এলাকায় রাস্তার পাশে ঝোপের ভেতর থেকে শিমুর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন সরদার জানান, পারিবারিক বিষয় ও দাম্পত্য কলহের কারণে চিত্রনায়িকা ও মডেল রাইমা ইসলাম শিমুকে (৩৫) হত্যা করেছেন তার স্বামী শাখাওয়াত আলী নোবেল। এরপর শিমুর লাশ টুকরো করে বস্তায় ভরে গুম করতে সহায়তা করেছেন নোবেলের বন্ধু ফরহাদ। ঘটনাটি তদন্তের ধারাবাহিকতায় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত মডেল শিমুর স্বামী ও তার বন্ধুকে গ্রেফতার করে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ।

গ্রেফতার দুজনই মাদকাসক্ত ও বেকার বলে জানিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় নোবেল ও ফরহাদকে আদালতে হাজির করা হলে তাদের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

রিমান্ডে নোবেল-ফরহাদঃ ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নোবেল তার স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। লাশ গুমের সহযোগিতার জন্য বন্ধু ফরহাদকে ডেকেছিলেন তিনি।

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শিমুর স্বামী শাখাওয়াত আলীম নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের বড় ভাই শহীদুল ইসলাম খোকন বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

মঙ্গলবার বিকেলে নোবেল ও ফরহাদকে আদালতে নিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত তাদের দুই জনের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শিমু ১৯৯৮ সালে সিনেমায় আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। ২০০৪ সাল পর্যন্ত নিয়মিত বড় পর্দায় দেখা গেছে তাকে। প্রথম সারির অনেক পরিচালকদের সিনেমায় অভিনয় করেন শিমু। গত কয়েক বছর ধরে তিনি নাটকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। 

স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে শিমু রাজধানীর গ্রিনরোড এলাকার একটি বাসায় থাকতেন। সিনেমার পাশাপাশি নাটকে নিয়মিত অভিনয় করতেন শিমু। সাম্প্রতিক সময়ে ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ নামে একটি ধারাবাহিক নাটকে কাজ করেছেন তিনি। ২৩টির মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন শিমু। ৫০টিরও বেশি নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনাও করেছেন তিনি।

রোববার তিনি হঠাৎ নিখোঁজ হন। নিখোঁজের ঘটনায় তার স্বামী নিজেই কলাবাগান থানায় একটি জিডি করেন। পরদিন সোমবার কেরানীগঞ্জ থেকে শিমুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

Bootstrap Image Preview