Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৮ বুধবার, মে ২০২৪ | ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বরিশালে চন্দ্রকান্ত মেমোরিয়াল চার্চের জমি দখলের চেষ্টা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ০২:৪৬ PM
আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ০২:৪৬ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বরিশালের উজিরপুরের চন্দ্রকান্ত মেমোরিয়াল চার্চের (গির্জাবাড়ী) ওপর নজর পড়েছে সংঘবদ্ধ একটি চক্রের। ওই চক্র চার্চের জমি দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। যার কারণে চার্চের সদস্যদের উপর হামলা করছে। এখানকার ধর্ম প্রচারকদের তাড়িয়ে গির্জাবাড়ীর দখল নিতে তারা বেছে নিয়েছে নির্যাতনের পথ। ধর্ম প্রচারকদের ওপর প্রতিনিয়ত হামলা ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে ওই চক্রটি। যার কারণে চার্চের যাজক হ্যানসন দারিয়েল হাঁসদা উজিরপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেন।

এদিকে গির্জা (চার্চ) রক্ষায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ধর্ম প্রচারক হ্যানসন দানিয়েল হাসদা, জেমস আনন্দ বিশ্বাস ও ফিলিপ বিশ্বাসরা। পরপর তারা দুটি মামলাও করেছেন ওই চক্রের হোতা অসিম সমদ্দার কুডু, লিটন সমদ্দার, সৈকত সমদ্দার, অমল সমদ্দার, যোসেফ মজুমদার ও লুক হালদারদের বিরুদ্ধে। একটি চক্র তাদের হুমকি ও মারধরের হাত থেকে রক্ষা পেতে, অপরটি শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য। চক্রটি ওই মামলার একটিতে মুচলেকা দিয়ে বলেছে, তারা আর হুমকি বা মারধর করবে না। অন্য মামলাটি চলমান রয়েছে।

আদালত গির্জার বাসিন্দা বা ধর্ম প্রচারকদের স্ব-অবস্থানে থাকার আদেশ দিয়ে বহিরাগতদের কোনো ঝামেলা না করতে ১৪৪ ধারা জারি করে নোটিশ টানিয়ে দেয়। যদিও ওই চক্রের ইন্ধনে একটি মহল নোটিশটি নামিয়ে ফেলেছে।

চার্চের ভারপ্রাপ্ত যাজক জেমস এ বিশ্বাস জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি এ অ ল তথা বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী একটি প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে খ্রিস্ট ধর্মের প্রচার কাজ চলে আসছে দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে। সম্প্রতি এখানকার কয়েকজন প্রচারক পথভ্রষ্ট হয়ে অসিম সমদ্দার কুডু, লিটন সমদ্দার, সৈকত সমদ্দার, অমল সমদ্দার, যোসেফ মজুমদার ও লুক হালদার বহিরাগতদের যোগসাজশে এই গির্জার দখল নিতে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে। বিষয়টি প্রশাসনকে অবগত করেও কোনো সুফল মেলেনি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, চক্রটি এতই প্রভাবশালী, তারা সব ম্যানেজ করে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

এই চার্চের বাসিন্দা ৬৫ বছর বয়সী আন্দ্রিয় বলেন, জীবনের পুরো সময়টি কাটিয়ে দিয়েছি ধর্ম প্রচারের কাজে। সংসার বিয়ে সন্তান সবকিছুর মোহ ত্যাগ করে ঈশ্বরের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছি। শেষ বয়সে এসে পথভ্রষ্টদের হাতে মার খেতে হয়েছে, তাও চার্চ (গির্জা) রক্ষার জন্য।

চলতি বছরের ২৫ জুন মামলার কাজে হ্যানসন দানিয়েল হাসদাকে নিয়ে বরিশাল যাওয়ার পথে চার্চ থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নামতেই অসিম সমদ্দার কুডু ও লিটন সমদ্দারদের সহযোগীদের হামলার শিকার হতে হয়েছে। আমরা কোনো কাজে গির্জার বাইরে গেলেই ওরা হামলা করে। এমনকি চার্চে জোরপূর্বক প্রবেশ করে ভাঙচুরও চালায়। সম্প্রতি লাশ নিয়ে এই চার্চে প্রবেশ করে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে চক্রটি। যার কোনো প্রতিকার পাইনি। উল্টো স্থানীয় সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে ভয়ভীতি প্রদর্শন এমনকি চার্চ দখলের হুমকি দিচ্ছে। তারা বারবার জমি দখলের জন্য লোকজন নিয়ে এসে আমাদের শাসাচ্ছে।

জানা গেছে, স্বর্গীয় হৃদয় রঞ্জন সমদ্দার ১৯৭৪ সালে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের বৈরকাঠি গ্রামে এ অঞ্চলের ধর্ম প্রচারকদের জন্য ‘অল-ওয়ান-ইন-ক্রাইস্টচার্চ ফেলোশিপ’ চন্দ্রকান্ত মেমোরিয়াল চার্চটি প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকে এই অঞ্চলে খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারে এই চার্চের নিবাসীরা কাজ করে আসছেন। ধর্ম প্রচারকরা বিভিন্ন স্থান থেকে এসে এখানে রাতযাপন ও আহার গ্রহণ করেন। যার অর্থের সংস্থান হয় মানুষের দানের টাকায়। ১৯৭৩ সালে চার্চ প্রতিষ্ঠার সময় এবং পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠাতা নিজে ও বিভিন্ন জনের কাছ থেকে চার্চের জন্য ২ একর ৯৭ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। যার ওপর প্রতিষ্ঠা করেন এই চন্দ্রকান্ত মেমোরিয়াল চার্চ। এই চার্চের বিশেষত্ব হচ্ছে, এখানে শুধু তারাই থাকতে পারবে, যে ধর্ম প্রচারক, বিয়ে-সংসার থেকে দূরে থেকে ‘একমাত্র যিশুর প্রেমে সহভাগিতা মন্ডলী সম্পূর্ণ পৈরিতিক ও ভাববাদিক শিক্ষার ভিত্তিমূলে’ চলবে। এখন এই বিশ্বাস ও শিক্ষা থেকে বেরিয়ে ভ্রান্ত পথে চলে যাওয়া একটি চক্র এই পবিত্র চার্চকে অপবিত্র করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এই চার্চটি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এখানকার বাসিন্দা ধর্ম প্রচারকরা।

প্রচলিত বিশ্বাস ও শিক্ষা থেকে বেরিয়ে ভ্রান্ত পথে পরিচালিত হয়ে এই পবিত্র চার্চকে এবং চার্চের নিয়মনীতি ও অস্তিত্ব বিলুপ্ত করে দখলের চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। ‘চক্রটি বিভিন্ন সময়ে অহেতুক মিথ্যা ধর্মকর্ম করার নামে যখন তখন যাজকদেরউপর চড়াও হচ্ছে, শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করছে এবং প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে চার্চ থেকে যাজকদের উৎখাতের চেষ্টা করছে। তারা বিভিন্ন সময়ে কম্পাউন্ডে ঢুকে হট্টগোল ও অরজকতা তৈরী করছে এবং কম্পাউন্ডের বাইরেও যাজকদের শারীরিক ও মানসিক ভাবে লাঞ্ছিত করছে।

এ ঘটনায় চার্চে ধর্মীয় কার্যক্রম সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার দাবিতে গত ৪ ডিসেম্বর বরিশালে সংবাদ সম্মেলন করেছে। সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চন্দ্রকান্ত মেমোরিয়াল চার্চের (ফেলোশিপ চার্চ) যাজক রাজু পাড়ৈ। এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন যাজকসহ চার্চের সদস্যরা।

Bootstrap Image Preview