Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৯ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মালয়েশিয়ায় উন্নয়নমেলায় জাতীয় পতাকার অবমাননায় প্রবাসীদের ক্ষোভ

মালয়েশিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৭ অক্টোবর ২০১৮, ১০:১৯ PM
আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৮, ১০:২৩ PM

bdmorning Image Preview
ছবি: মালয়েশিয়া প্রতিনিধি


মালয়েশিয়া বাংলাদেশ মিশনে '৪র্থ জাতীয় উন্নয়নমেলা'য় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে প্রবাসীরা। গতকাল শনিবার মালয়েশিয়া বাংলাদেশ দূতাবাস প্রাঙ্গণে জাতীয় উন্নয়নমেলায় এ ঘটনা ঘটে।

সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত রম-রমা আয়োজনে চলে মেলার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রদর্শনী। শুরুটা ভালো হলেও সকাল শেষে দুপুর হলে খাবার কিনতে গিয়ে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসা প্রবাসীদের। ৫ রিঙ্গিতের খাবার বিক্রি করে ১৫ রিঙ্গিতে, যা মালয়েশিয়ার ইতিহাসে গড়লেন মিশনের কর্মকর্তাদের স্বজনদের  দেয়া খাবারের দোকানে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কয়েক জন রেস্টুরেন্ট মালিক দোকান দিতে চাইলে অনুমতি দেয়নি মিশন কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানে আসা প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলেন, নিজেদের স্বজনদের দিয়ে গলাকাটা দামে খাবার বিক্রির করবে বলে অন্য রেস্টুরেটন মালিকদের অনুমতি দেয়নি মিশন।

এমনিভাবে অসংখ্য অনিয়ম ধরা পড়ে "উন্নয়নমেলায়" নামকরা অনুষ্ঠানে। স্বাধীনতার মূর্তপ্রতীক আমাদের জাতীয় পতাকার অবমাননা করতেও সংকোচবোধ করেনি মিশন কর্মকর্তারা।

মিশন কর্মকর্তা বলেন, জাতীয় পতাকার আদলে তৈরী লাল সবুজ গালিচা  হবে এবং উন্নয়নমেলার সব কিছুতে লাল সবুজের সংমিশ্রণ হবে।

কিন্তু পায়ের নিচে লাল সবুজের গালিচা দিবে এইটা মেনে নিতে পারেননি অনেক আওয়ামী লীগ নেতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, জাতীয় পতাকার আদলে লাল সবুজের গালিচা আমাদের জাতীয় পতাকার অসম্মান।  আমি বিষয়টি সকালে মিশন কর্মকর্তাদের নজরের আনলেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি তারা। আমি বেশি কথা বলিনি কারণ কিছু বললে আমাকে বলবে আমি প্রোগ্রাম বাঞ্চাল করতে এসেছি।

ঐ নেতা আফসোস করে বলেন, মিশনের কোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে পুলিশ, ইমিগ্র্যাশন দিয়ে হয়রানী করতেও দ্বিধা করে না মিশন কর্তৃপক্ষ।

উন্নয়নমেলায় সাংবাদিকদের জন্য কোনো প্রকার আয়েজন না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্টনিক্স মিডিয়ার কর্মীরা। বরাবরের মতো বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তাদের সাংবাদিকদের এই অবমূল্যায়ণ একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য তরুণ সাংবাদিকদের।

তারা আরও বলেন, মিশনের প্রতি কিছু সাংবাদিকের নতজানু সাংবাদিকতায় এর জন্য দায়ী। যার ফলশ্রুতিতে অনুষ্ঠান শেষে এক মিশন কর্মকর্তার স্ত্রী তাদের বেঁচে যাওয়া  খাবার উৎছিষ্ট দিয়ে সাংবাদিকদের অপমান করার চেষ্টা করেছেন বলে মন্তব্য উন্নয়নমেলার সংবাদ সংগ্রহ করতে আসা সংবাদকর্মীদের।

লাল সবুজের গালিচা পায়ের নিচে দিয়ে জাতীয় পতাকা অবমূল্যায়ণ এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের সকল প্রকার অনিয়ম প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি গোচর হওয়া জরুরি বলে মনে করছেন তারা।  

প্রবাসের মাটিতে জন্ম নেয়া অনেকে দেশের কৃষ্টি কালচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই মেলার মাধ্যমে গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া পিঠা-পুলিসহ দেশের অগ্রযাত্রা ও সংস্কৃতির সাথে পরিচয় হয়ে দেশের উন্নয়নের সূচকের ধারণা পেয়েছে তারা।

মেলায় স্কুল শিক্ষার্থীদের মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন অনুষ্ঠানে আগত বিভিন্ন পেশার প্রবাসীরা। পরে বিভিন্ন ইভেন্টে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার তুলে দেন রাষ্ট্রদূত ও অতিথিরা।

রাষ্ট্রদূত মহ. শহীদূল ইসলাম মেলার উদ্বোধন করেন। আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পিঠা-পুলি উৎসবের মাধ্যমে এ মেলা শুরু হয়। এবারের উন্নয়নমেলার প্রতিপাদ্য ছিল ‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ’ মেলায় আলোকচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রবাসের মাটিতে বসে দেশের উন্নয়নের বিভিন্ন চিত্র দেখে মুগ্ধ হন ভিন্ন দেশে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মরা।

ব্যক্তিগত ভ্রমণে আশা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ এমপি উন্নয়নমেলা সম্পর্কে বলেন, বিশ্বের নানা দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। দেশের একের পর এক অর্জন বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। সরকারের নানা উন্নয়নের সুফল প্রতিটি নাগরিকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রবাসী সবাইকে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

উন্নয়নমেলা থেকে দেশের উন্নয়ন সম্পর্কিত তথ্য, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য, মেলা থেকে বাংলাদেশের ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে টাকা প্রেরণ, ভিসা সেবা প্রদান, শ্রম উইং এবং পাসপোর্ট ও ভিসা উইং এর স্টল থেকে সরাসরি সেবা প্রদান, বাংলাদেশ বিমানের স্টল থেকে কম মূল্যে টিকেট ক্রয় ইত্যাদি সুবিধা উপভোগ করেন মেলায় আগত প্রবাসীরা।

এ ছাড়া মেলায় বিডিফোনের স্টল থেকে কম মূল্যে মোবাইল সিম ক্রয় করেন প্রবাসীরা।

মেলায় উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি মুকবুল হোসেন মুকুল, সাখাওয়াত হোসেন জোসেফ, সাহালাম হাওলাদার, জহিরুল ইসলাম, সাংবাদিক নেতা আহমেদুল কবির, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব অফ মালেশিয়ার সাধারণ সম্পাদক বশির আহমেদ ফারুক, জহিরুল ইসলাম হিরণ, শাহাদাৎ হোসেন, মোস্তাক শান্ত, মোস্তফা ইমরান রাজু, মোহাম্মদ আলী, কায়সার হামিদ হান্না ও অন্যান্য সংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

Bootstrap Image Preview