Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ মঙ্গলবার, আগষ্ট ২০২৫ | ৪ ভাদ্র ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

কোচদের ইংরেজি বোঝেন না ক্রিকেটাররা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২ জানুয়ারী ২০২০, ০৬:১২ PM আপডেট: ০২ জানুয়ারী ২০২০, ০৬:১২ PM

bdmorning Image Preview


একজন লেখকের স্বার্থকতা কোথায়? তার লেখনি গুণ, গাঁথুনি, শৈল্পিকতায়? তা নিয়ে একটা ছোট খাট তর্ক হতেই পারে। তবে সাংবাদিক হিসেবে কোন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সত্যিকার স্বার্থকতা হলো, তাৎক্ষনিকভাবে হলে তো কথা নেই, অনেক পরে হলেও সেই লেখার উপজীব্যটা যখন সত্য হয় তখন ওই অনুসন্ধানী সাংবাদিক তার লেখাকে স্বার্থক ভাবেন। সেটা এক ধরনের তৃপ্তি, সৃষ্টি সুখের আনন্দ।

আজ ইংরেজী নতুন বছর ২০২০ সালের প্রথমদিন পড়ন্ত বিকেলে সিলেট থান্ডার্সের দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ হার্শেল গিবসের ইন্টারভিউটা পড়ে আমার ঠিক এমন সুখানুভুতিই হলো। পরিতৃপ্তি নিয়ে ভাবলাম, যাক আমি ৪ মাস আগে, ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই, ‘বাংলাদেশের পেসাররা ওয়ালশের কথা কম বুঝতেন’ শিরোনামে তাহলে ভুল লিখিনি, ঠিকই লিখেছিলাম।

লিখেছিলাম, পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশের ভাষা ঠিকমত বুঝতেন না আমাদের পেসাররা। আজ সে কথার প্রতিধ্বনি হলো দক্ষিণ আফ্রিকা তথা বিশ্ব ক্রিকেটের পরিচিত ও নামী মুখ হার্শেল গিবসের মুখে।

তিনি ২০২০ সালের প্রথম দিন সিলেটে সাংবাদিকদের সাথে আলাপে পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, ‘স্থানীয় ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে একটি বড় বাঁধা হলো, তাদের অনেকেই ইংরেজি বোঝে না। আমার জন্য তাই তাদেরকে অনেক কিছুই বোঝানো কঠিন। এটি খুবই হতাশার। আমি যখন কথা বলি, দেখি যে তারা শুনছে। কিন্তু দেখেই বুঝতে পারছি যে, এসব তাদের মাথায় ঢুকছে না। অনুধাবন করতে পারছে না।’

কাউকে ছোট করে কিংবা হেয় করে নয়, ক্রিকেটাররা আমাদের গর্ব। দেশ ও জাতির সম্পদ। দেশ ও বিদেশে বাংলাদেশের পতকা ওড়ান। সুনাম বয়ে আনেন। দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেন। তাদের সাফল্যে উদ্বেলিত হয় গোটা দেশ। আমরা পুলক অনুভব করি। দেশেজুড়ে উল্লাস-উচ্ছাসের ফলগুধারা বয়ে যায়। সেই ক্রিকেটারদের একটা অংশ বা কেউ কেউ যদি ইংরেজি কম জানেন, কম বোঝেন, সেটা কোনো মহা অপরাধ নয় বা বড় ধরনের ব্যর্থতাও নয়।

তবে এটা উন্নতির পথে একটা বড় অন্তরায় বা কাঙ্খিত সাফল্য না পাওয়ার পথে বড় বাঁধা। কারণ তাদের যারা সারা বছর শেখান, সেই কোচিং স্টাফের সবাই যে বিদেশি! তাদের ভাষাতো ইংরেজি। এখন ক্রিকেটারদের যদি সে ভাষা বুঝতেই সমস্যা হয়, ‘তাহলে আর গুণ ও মানের উন্নতি হবে কিভাবে?’ কাজেই হার্শেল গিবসের মত বিশ্ব তারকার কথায় যা উঠে এসেছে, সেটা কিন্তু একটা বড় বার্তা।

বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশে সাধারণতঃ যারা কোচিং করাতে এসেছেন বা আসেন- তাদের বড় অংশের ইংরেজি উচ্ছারণ ‘বৃটিশ একসেন্ট’ ‘অস্ট্রেলিয়ান একসেন্ট’, ‘নিউজিল্যান্ড একসেন্ট’, ‘দক্ষিণ আফ্রিকান কিংভা ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান একসেন্টে’।

যেগুলো আমাদের ক্রিকেটারদের অধিকাংশের কাছেই দুর্বোধ্য। অনেক ভালো ইংরেজি জানা মানুষেরও তা ধরতে সমস্যা হয়। এখন আমাদের ক্রিকেটারদেরও ওই সব একসেন্টের ইংরেজি বুঝতে কষ্ট হতেই পারে। তারা সব কথা ঠিকমত নাও বুঝতে পারেন।

এটা সত্য ক্রিকেটীয় কিছু সংলাপ, সংস্কৃতি আছে, যা সব ক্রিকেটারেরই জানা। সেগুলো বুঝতে ও রপ্ত করতে সমস্যা হয় না। একজন পাড়ার ফার্মেসির সেলসম্যান ও যেমন দেশের নামী চিকিৎসকের দুর্বোধ্য ইংরেজি প্রেসক্রিপশন দেখে বুঝে ফেলেন কোন ঔষধের নাম লেখা সেখানে, একইভাবে পাড়ার ও গাঁয়ের সহজ সরল কিশোরও একদম ছেলে বেলা থেকে কিছু ক্রিকেটীয় সংলাপ জেনে ও শিখে বড় হয়।

সেটার ভাষা ইংরেজি হলেও তার বুঝতে এবং হৃদয়ঙ্গম করতে সমস্যা হয় না; কিন্তু উচ্চতর ট্রেনিংয়ে যখন ইংরেজিতে অনেক লম্বা চওড়া লেকচার দেয়া হয়, সেই লেকচারের কিছু অংশ থাকে ঠিক প্রথাগত ক্রিকেটীয় সংলাপের বাইরে। যার ভাষা ও সংস্কৃতিও ঠিক ক্রিকেটীয় নয়। তখন অনেকরকম কথাই উঠে আসে। তার বাইরে ব্যক্তিজীবন, দর্শন, জীবনবোধসহ আরও আনুসাঙ্গিক বিষয় নিয়ে কথা হয়। সে সব আত্মস্থ করতে আসলেই ইংরেজি ভাল বোঝা জরুরি। সেই কাজটিই ভাল হয় না ক্রিকেটারদের।

যে কারণে ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার কোর্টনি ওয়ালশ তিন বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করার পরও বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ের কোনই উন্নতি হয়নি। এখন বোঝাই যায়, তার ক্যারিবীয় একসেন্টের ইংলিশ অনেকটাই বুঝতে পারেননি বাংলাদেশের পেসাররা। 

সেই না পারার দায় কার? ভাববেন না ক্রিকেটারদের। তাদের কোনই দায় নেই। ক্রিকেটার হলেই তাকে ভাল ইংরেজি বুঝতে ও জানতে হবে- এমন কথা কোন ক্রিকেটীয় বাইবেলে লিখা নেই। অনেক বিশ্ব বরেণ্য ফুটবলার, ক্রিকেটার, হকি তারকাসহ বিশ্বসেরা ক্রীড়াবীদদের অনেকেরই ইংরেজি ভালো জানা নেই। ফুটবল কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনা, হালের লিওনেল মেসিও ইংরেজি তেমন ভাল জানেন না। বোঝেন ও বলতে পারেন কম। পাকিস্তানের ক্রিকেটারদেরও বড় অংশ তাই; কিন্তু তারাও বড় তারকা হিসেবে সমাদৃত।

আসল দায়টা বাংলাদেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা বিসিবির। তারা ঢালাও বিদেীশ কোচের হাতে জাতীয় দল, যুব দল, একাডেমি ও হাই পারফরমেন্স ইউনিট ছেড়ে দিয়ে বসে আছেন। যাদের ট্রেনিং করানোর জন্য অনেক অর্থ ব্যয়ে বিদেশি কোচ আনা হচ্ছে, সেই কোচদের ভাষা ক্রিকেটাররা ঠিকমতো বুঝতে পারছেন কি না? তা খুঁটিয়ে দেখছেন না কেউ।

দেখলে আর তা বুঝলে প্রতিটি দলের সাথে অন্তত একজন করে বাংলাদেশি সহকারি কোচ নিয়োগ দেয়া হতো। ওই সহকারি বাংলা ভাষা-ভাষি কোচ বিদেশিদের নানা জটিল উচ্ছারণের ইংরেজি ক্রিকেটারদের বোঝাতে পারতেন। তখন কোচিং ম্যাথডটা ভালমত অনুস্মরণ করা সম্ভব হতো। কোচের প্রকৃত বার্তা, টিপস, পরামর্শ, আদেশ-নিষেধ ক্রিকেটারদের বোঝা, জানা ও শোনা সহজ হতো। তাতে করে আত্মস্থ করাটাও হতো সহজ।

কাজেই দেশের ক্রিকেটের বৃহত্তর স্বার্থে শুধু প্রচুর অর্থ ব্যয়ে ভিনদেশি কোচ এনেই দায়িত্ব ও কর্তব্য শেষ না করে তাদের কথা, বক্তব্য, পরামর্শ যাতে ক্রিকেটাররা ঠিকমত বুঝতে পারেন, সহজে বোধগম্য হয়- সে জন্য জাতীয় দলের একজন প্রধান সহকারী কোচ এবং ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ের প্রতিটি শাখায় একজন করে বাংলাভাষি সহকারি কোচ নিয়োগ জরুরি হয়ে পড়েছে। তবেই কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ খরচ করে একগাদা ভিনদেশি কোচ আনার স্বার্থকতা মিলবে। না হয় বিদেশি কোচরা যা বলবেন তা ‘অরণ্যে রোদন’ হয়েই থাকবে।

 

Bootstrap Image Preview