বাগেরহাটে পীর হযরত খানজাহান (রহ.) মাজারে দীঘির পুরুষ প্রজাতির কুমিরটি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আঘাতজনিত কারণে কুমিরটির ডান চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। বাম চোখও অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আজ বুধবার প্রায় ৩ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে দুপুরে কুমিরটিকে দীঘির পাড়ে তোলা হয়েছে। বাগেরহাট প্রাণিসম্পদ বিভাগ এবং সুন্দরবন বিভাগ মিলে জলাভূমির (ব্রাকিস ওয়াটার) এই কুমিরটিকে চিকিৎসা দিচ্ছে।
খানজাহানের সময় থেকে প্রায় ৬০০ বছর ধরে এই দীঘিতে লালন-পালন করা কালাপাড় ও ধলাপাড়ের সর্বশেষ বংশধর কয়েক বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন দীঘিতে জলাভূমির দুটি কুমির লালন-পালন করা হচ্ছে। দীঘিতে বর্তমানে এই কুমির দুটিই শেষ সম্বল। এখনো অসংখ্য দর্শনার্থী দীঘির কুমির দেখতে এখানে আসে এবং তারা মানত হিসেবে হাঁস-মুরগি ও ছাগল কুমিরকে দিয়ে থাকে।
অসুস্থ এই কুমিরটির বয়স ৪০ থেকে ৪৫ বছর। ওজন প্রায় ৯০০ কেজি। দৈর্ঘ ১৪ ফুট। কুমিরটি তুলনামূলকভাবে অনেক মোটা এবং শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে প্রাণিসম্পদ ও সুন্দরবন বিভাগের বিশেষজ্ঞরা জানান। কুমিরটিকে দীঘির উত্তর পাড়ে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, ২০০৫ সালে ভারতের মাদ্রাজ থেকে আনা ছয়টি কুমির খানজাহান (রহ.) দিঘিতে অবমুক্ত করা হয়। দীঘিতে কয়েক বছর আগে দুটি কুমির মারা গেছে। আর দুটি কুমির অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসা দিয়ে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে দেওয়া হয়েছে। দীঘিতে বর্তমানে ভারতীয় ওই কুমিরের দুটি রয়েছে। যার একটি পুরুষ এবং অন্যটি নারী প্রজাতির কুমির। বিগত কয়েক বছর ধরে নারী প্রাজাতির ওই কুমিরটি ডিম পাড়লেও ছানা ফুটছে না। তাই এখন দীঘিতে ওই দুটি কুমিরই শেষ সম্বল।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, দীঘির ওই কুমরটি অসুস্থ হয়ে পড়েছে খবর পেয়ে তারা সেখানে আসে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্থানীয়দের নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে পুরুষ প্রজাতির ওই কুমিরটিকে দড়ি বেঁধে দীঘি থেকে পাড়ে তুলে আনা হয়। দেখা গেছে কুমিরটি ডান চোখ অনেক আগে নষ্ট হয়ে গেছে। বাম চোখটিও নষ্ট হওয়ার উপক্রম। আঘাতজানিত কারণে কুমিরটির চোখ নষ্ট হয়েছে বলে তাদের ধারণা। তারা কুমিরটিকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করছে।
বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. লুৎফর রহমান জানান, কুমিরটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ডান চোখ সম্পূর্ণ ভাবে নষ্ট আর বাম চোখ খুলছে না। দীর্ঘদিন ধরে খাবার না খাওয়ার কারণে কুমিরটি শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। কুমিরটি অনেক বেশি ফ্যাটি। দীঘির পাড়ে রেখে কুমিরটির প্রাথমিক চিকিৎসা চলছে।